সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের অবস্থান। পাশে সেই চিঠি। গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।
বকেয়া মহার্ঘ ভাতা (ডিএ) নিয়ে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে লাগাতার আন্দোলন করছে সংগ্রামী যৌথ মঞ্চ। কলকাতা তো বটেই, তাদের আন্দোলনের আঁচ গিয়ে পড়েছিল রাজধানী দিল্লির রাজপথেও। এ বার সেই সংগঠনের বিরুদ্ধেই উঠল আর্থিক তছরুপের অভিযোগ! সংগঠনের মোট ১৫ জন নেতার বিরুদ্ধে সরাসরি আর্থিক তছরুপের অভিযোগ আনা হয়েছে। তাঁদের নাম ও মোবাইল নম্বর উল্লেখ করে রাজ্য প্রশাসনের শীর্ষকর্তাদের কাছে চিঠি লিখেছেন জনৈক দেবপ্রসাদ হালদার। চিঠিটি পাঠানো হয়েছে গত ১৯ মে।
অভিযোগের আকারে দেবপ্রসাদের চিঠিটি পাঠানো হয়েছে রাজ্যের অতিরিক্ত মুখ্যসচিব, রাজ্য পুলিশের ডিজি মনোজ মালব্য, কলকাতা পুলিশের কমিশনার বিনীত গোয়েল, রাজ্য পুলিশের ডিআইজি সিআইডি, ময়দান থানার পুলিশ আধিকারিক এবং ভারতীয় সেনাবাহিনীর ফোর্ট উইলিয়ামের কমান্ড্যান্টকে। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, যাঁদের নামে আর্থিক তছরুপের অভিযোগ করা হচ্ছে, তাঁদের বিরুদ্ধে যেন অবিলম্বে এফআইআর দায়ের করে পুলিশি ব্যবস্থা নেওয়া হয়। সঙ্গে সংগঠনের আহ্বায়ক ভাস্কর ঘোষ ও কোষাধ্যক্ষ শৈবাল সরকারকে অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবিও তোলা হয়েছে। সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের ওই দুই নেতাকে গ্রেফতারের দাবির পাশাপাশি ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করা হয়েছে সন্দীপ ঘোষ, চন্দন চট্টোপাধ্যায়, নির্ঝর কুন্ডু, রাজীব দত্ত, ইন্দ্রজিৎ মণ্ডল-সহ মোট ১৫ জনের বিরুদ্ধে। পাশাপাশিই দেবপ্রসাদের চিঠিতে অভিযোগ করা হয়েছে এই মর্মে যে, গণতান্ত্রিক আন্দোলনের কথা বলে মঞ্চের বেশ কিছু নেতা ‘স্বৈরাচারী মনোভাব’ দেখাচ্ছেন।
অভিযোগকারী দেবপ্রসাদের বাড়ির ঠিকানা দক্ষিণ ২৪ পরগনার নরেন্দ্রপুর থানা এলাকায়। তাঁর কর্মস্থলের ঠিকানা ক্যামাক স্ট্রিটের। তিনি অভিযোগ করেছেন, অভিযুক্তেরা তাঁকে হুমকিও দিয়েছেন।
দেবপ্রসাদের অভিযোগের উত্তরে মঞ্চের নেতা সন্দীপ সোমবার বলেন, ‘‘এই আর্থিক তছরুপের অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। কারণ, আমরা ইতিমধ্যে প্রাথমিক অডিট করে আমাদের সঙ্গী ৪২টি সংগঠনকে সেই রিপোর্ট দিয়েছি। তারা সকলেই অডিট রিপোর্ট দেখে সন্তোষ প্রকাশ করেছে। আর পেশাদার অডিটার দিয়ে দ্বিতীয় বার অডিট করিয়ে তা কয়েক দিনের মধ্যেই জনসমক্ষে প্রকাশ করে দেওয়া হবে।’’ প্রসঙ্গত, দিল্লিতে ধর্না দেওয়ার সময় একটি হিন্দুত্ববাদী সংগঠনকে মোটা টাকা চাঁদা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের বিরুদ্ধে। কিন্তু শেষে মঞ্চের তরফে জানানো হয়েছিল, কোনও হিন্দুত্ববাদী সংগঠনকে তারা চাঁদা বা অনুদান দেয়নি। দিল্লিতে যেখানে গিয়ে তাদের সদস্যেরা থেকেছিলেন, সেখানকার ভাড়া বাবদ টাকা মেটানো হয়েছে। যা নিয়ে আন্দোলনের বিরোধীরা অপপ্রচার করছেন।
যৌথ সংগ্রামী মঞ্চের অন্যতম নেতা নির্ঝর বলেন, ‘‘সরকার পক্ষ আমাদের আন্দোলন ভাঙতে নানা রকম ষড়যন্ত্র করছে। পাশাপাশি, ডিএর দাবিতে আন্দোলন করছে অথচ আমাদের সঙ্গে নেই— এমন সংগঠনও এই চক্রান্তে শামিল হয়েছে। তাদের চক্রান্তের ফলস্বরূপ এই অভিযোগপত্রটি দেওয়া হয়েছে রাজ্য প্রশাসনের বড়কর্তাদের।’’ নির্ঝরের আরও বক্তব্য, ‘‘যিনি বা যাঁরা এই চিঠি প্রশাসনের কাছে পাঠিয়ে থাকুন, তাঁরা সরকারি কর্মচারীদের ভাল চান না। কারণ, আমরা লড়াই করছি শুধু আমাদের সংগঠনের সদস্যদের জন্য নয়। আমাদের লড়াই সর্বস্তরের সরকারি কর্মচারীদের জন্য। সরকার পক্ষ জেনে রাখুক, কোনও রকম ষড়যন্ত্র করে আমাদের আন্দোলন থেকে টলানো যাবে না!’’
গত শনিবার নির্দেশিকা জারি করে নবান্ন জানিয়ে দিয়েছে, মধ্যাহ্নভোজের বিরতির সময়ে কোনও রকম কর্মবিরতিতে সামিল হওয়া যাবে না। রবিবার সেই নির্দেশিকার পাল্টা সাংবাদিক বৈঠক করে সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের নেতারা জানিয়ে দিয়েছেন, প্রয়োজনে তাঁরা আবার ধারাবাহিক কর্মবিরতিতে শামিল হবেন। সেই আবহেই বেনামি চিঠিতে এই অভিযোগ জমা পড়ল সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের নেতৃত্বের নামে। যা পত্রপাঠ খারিজ করেছেন তাঁরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy