এগরায় প্রতিবাদ নিয়ে গৃহযুদ্ধ বিজেপিতে? গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।
এগরার বাজি কারখানার বিস্ফোরণ এবং প্রাণহানির প্রতিবাদের ‘নেতৃত্ব’ কে দেবেন, তা নিয়ে প্রকাশ্যেই এসে পড়ল বিজেপির অন্দরের কোন্দল। ঘটনাচক্রে, এগরা বিধানসভা ভৌগোলিক ভাবে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার মধ্যে পড়লেও তা দিলীপ ঘোষের লোকসভা কেন্দ্র মেদিনীপুরের অন্তর্গত। মঙ্গলবার এগরায় বড় মিছিল করার কথা রাজ্য বিজেপির। তাতে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর পাশাপাশি দলের প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপেরও উপস্থিত থাকার কথা ছিল। সেই মতো পোস্টারও তৈরি হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু শেষবেলায় সেই পোস্টার বদলে গিয়েছে। দিলীপের নাম বাদ দিয়ে শুধুই শুভেন্দু উপস্থিত থাকবেন বলে জানানো হয়েছে।
এ নিয়ে বিজেপির কাঁথি সাংগঠনিক জেলার নেতাদের মধ্যেও নানা মত। তবে বিজেপি সূত্রে খবর, কারও কারও আপত্তিতে দিলীপের নাম শেষবেলায় বাদ গিয়েছে। যদিও আনুষ্ঠানিক ভাবে এ নিয়ে কোনও শিবিরই কিছু মুখ খুলতে চায়নি।
দিলীপ বিজেপির রাজ্য সভাপতি থাকার সময়ে বিরোধী দলনেতার সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক যে খুব একটা ‘মসৃণ’ ছিল না, তা সকলেই জানতেন। দিলীপকে না জানিয়ে শুভেন্দু দিল্লি গিয়ে দলের শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে দেখা করায় সে বিতণ্ডা প্রকাশ্যেও এসে পড়েছিল। এখন দিলীপ সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি। অর্থাৎ, রাজ্যে তাঁর তেমন কোনও আনুষ্ঠানিক ভূমিকা নেই। কিন্তু অতীতের দ্বন্দ্ব যে এখনও পুরোপুরি মেটেনি, এগরা নিয়ে তা আবার প্রকাশ্যে এসে পড়েছে। দিলীপ-ঘনিষ্ঠদের দাবি, শেষবেলায় পোস্টার বদলের পিছনে রয়েছে অন্য রাজনীতি। তাঁদের দাবি, শুভেন্দু গোষ্ঠী চাইছে না বলেই দিলীপ জানিয়ে দিয়েছেন তিনি ওই মিছিলে অংশ নিতে চান না। তবে দিলীপ তা জানানোর আগেই পোস্টার থেকে তাঁর নাম বাদ দেওয়া হয়েছে। যদিও সোমবার এই বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে আনন্দবাজার অনলাইনকে দিলীপ বলেন, ‘‘পোস্টার বদল হয়ে গিয়েছে কি না, আমার জানা নেই। দল আমায় যা নির্দেশ দেবে তাই করব। আমি কাল মিছিলে যাব কি যাব না, সেটা এখনও চূড়ান্ত করিনি। এর মধ্যে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব খোঁজারও কোনও মানে নেই।’’
এগরায় বাজি কারখানায় বিস্ফোরণের পরেই সেখানে গিয়েছিলেন শুভেন্দু। তার পরে গিয়েছিলেন দিলীপও। কথা ছিল রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারকে নিয়ে দিলীপ যাবেন। কিন্তু সুকান্ত অসুস্থতার কারণে যেতে না পারায় এগরায় একাই গিয়েছিলেন দিলীপ। তাঁর ঘনিষ্ঠ রাজ্য বিজেপির এক নেতার বক্তব্য, ‘‘দলেরই একটা অংশ চাইছে, দিলীপ’দা যাতে ওই এলাকায় যেতে না পারেন। কাঁথি সাংগঠনিক জেলার সভাপতি সুদাম পণ্ডিতকে এমনও জানানো হয় যে, দিলীপদা গেলে অন্য নেতারা যাবেন না। দিলীপ’দা একাই মিছিল করে নিন। এর পরেই পোস্টার বদলে ফেলা হয়।’’ যদিও সুদাম তা মানতে নারাজ। তিনি বলেন, ‘‘মঙ্গলবার দিলীপদার উত্তরবঙ্গে কর্মসূচি রয়েছে। সেই কারণেই তাঁর নাম পোস্টার থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।’’ তবে বিজেপি সূত্রে আবার জানা গিয়েছে, দিলীপ মঙ্গলবার আদৌ উত্তরবঙ্গে যাচ্ছেন না। নিজের লোকসভা এলাকা মেদিনীপুরেই থাকবেন। মঙ্গলবার এগরা থেকে ৭৮ কিলোমিটার দূরে মেদিনীপুর শহরে জেলা বিজেপির কর্মসমিতির বৈঠকে থাকবেন দিলীপ।
রাতারাতি যে পোস্টার থেকে দিলীপের নাম বাদ দিয়ে দেওয়া হয়েছে, তা গোচরে নেই কাঁথি জেলা বিজেপির সম্পাদক কৌশিক মণ্ডলের। আনন্দবাজার অনলাইকে তিনি বলেন, ‘‘দু’জনেরই তো থাকার কথা। দিলীপ’দার নাম যে পোস্টার থেকে বাদ গিয়েছে, সেটা তো আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে জানাচ্ছি।’’ তবে মঙ্গলবারের মিছিলের পোস্টারে দিলীপের নাম যে নেই, তা জানেন গত বিধানসভা নির্বাচনে এগরার বিজেপি প্রার্থী অরূপ দাস। তিনিও বলেন, ‘‘দিলীপ’দা উত্তরবঙ্গে থাকবেন বলে তাঁর নাম বাদ দিয়ে নতুন পোস্টার বানানো হয়েছে রবিবার।’’ পরে অবশ্য তিনি আবার নিজেই বলেন, ‘‘দিলীপ’দার সঙ্গে কথা হয়েছে। মেদিনীপুরের কর্মসূচি শেষ হয়ে গেলে তিনি মিছিলে আসার চেষ্টা করবেন বলে জানিয়েছেন।’’ যদিও দিলীপ-ঘনিষ্ঠদের দাবি, দিলীপের মিছিলে না যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।
শুভেন্দু শিবিরের এক জেলা নেতার অবশ্য বক্তব্য, ‘‘হতে পারে এটা ওঁর (দিলীপ) লোকসভার মধ্যে পড়ে। কিন্তু পূর্ব মেদিনীপুর জেলার সবটাই দেখেন শুভেন্দু’দা। দিলীপ ঘোষকে এখানে ক’দিন দেখা যায়? উনি তো হিল্লিদিল্লি করে বেড়ান! এগরা বিস্ফোরণের প্রতিবাদে শুভেন্দু’দাই সবচেয়ে বেশি সরব হয়েছেন। সকলের আগে ঘটনাস্থলে গিয়েছেন। রাজ্য সরকারের থেকে বেশি ক্ষতিপূরণ আদায় থেকে আদালতে যাওয়া— সবই তো করেছেন। এখন তৈরি জমিতে সাংদের সুবিধা নিতে আসার কোনও অধিকার আছে কি?’’
শুধু শুভেন্দু নয়, দলের রাজ্য নেতৃত্বের বিরুদ্ধেই যে দিলীপ খানিক ‘ক্ষুব্ধ’, তা তিনি রবিবারও বুঝিয়ে দিয়েছেন বিজেপির রাজ্য কর্মসমিতির বৈঠকে। রাজ্য নেতারাও বটেই, বাংলার দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতিতে রবিবার সরব হয়েছেন তিনি। ওই সভায় শেষ বক্তা ছিলেন দিলীপ। সেখানেই তিনি বলেন, বুথ থেকে জেলা স্তর পর্যন্ত কমিটি বদল হয়েছে। কিন্তু কী ভাবে কাজ করতে হবে, তার কোনও প্রশিক্ষণ হয়নি। পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে সেটা জরুরি। কেন্দ্রীয় বিজেপির রাজ্যকে একের পর এক কর্মসূচি দিয়ে যাওয়া নিয়েও সরব হন তিনি। বিজেপি সূত্রে খবর, দিলীপ বৈঠকে বলেন, কেন্দ্রীয় নেতারা লোকসভা নির্বাচনে ভাল ফলের জন্য নানা কর্মসূচি দিচ্ছেন। সেগুলি করাও হচ্ছে। কিন্তু সামনে যে পঞ্চায়েত নির্বাচন, সে দিকে কারও মন নেই। কিন্তু মাথায় রাখতে হবে, পঞ্চায়েত নির্বাচনে ভাল ফল করতে না পারলে লোকসভার ফল ভাল হবে না।
একই সঙ্গে দিলীপ বলেন, বুথ স্তরে কতটা শক্তি রয়েছে, লোকসভা ভোটের আগে পঞ্চায়েত নির্বাচনে তার পরীক্ষা হওয়া দরকার। দিলীপ-ঘনিষ্ঠদের বক্তব্য, এটা যে দলের অনেকেরই মনের কথা, তা জাতীয় গ্রন্থাগারে রবিবারের বৈঠকে উপস্থিত জেলার নেতাদের করতালিতেই প্রমাণিত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy