বেলঘরিয়ার তৃণমূলকর্মী মহম্মদ এনায়েতুল্লা ওরফে রেহানকে দু’টি আলাদা বন্দুক থেকে
গুলি করা হয়েছিল। ঘটনার তদন্তে নেমে পাঁচ জনকে গ্রেফতারের পরে প্রাথমিক ভাবে তদন্তকারীদের সামনে এমনই তথ্য উঠে এসেছে বলে খবর। যদিও বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত ওই খুনে ব্যবহৃত কোনও বন্দুকই উদ্ধার হয়নি। এমনকি, গুলি চালানোয় যুক্ত আর এক যুবক ভিন্ রাজ্যে পালিয়েছে বলেও সন্দেহ পুলিশের। তার খোঁজেও তল্লাশি শুরু হয়েছে।
গত বুধবার ভোরে রাজীবনগরে তিনটি বাড়ির মাঝে ছোট একটি ফাঁকা জায়গা থেকে উদ্ধার
হয়েছিল রেহানের গুলিবিদ্ধ দেহ। ওই যুবকের বাড়ি থেকে একশো মিটারের মধ্যে সেই জায়গায় মঙ্গলবার রাতে নেশার আসর চলার সময়ে এই খুনের ঘটনাটি ঘটেছে বলেও
প্রাথমিক ভাবে নিশ্চিত তদন্তকারীরা। কারণ, গ্রেফতার হওয়া পাঁচ যুবকের মধ্যে অভিজিৎ দাসের স্ত্রী সোনিয়া দাস দাবি করেছেন, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তাঁর স্বামীকে ফোন করে আড্ডা দিতে ডেকেছিলেন রেহান। রাত সাড়ে ১১টা নাগাদ তিনি বাড়ি ফিরে এলেও, আবারও রেহান ফোন করে ডেকে পাঠান তাঁকে।
সোনিয়া বলেন, ‘‘বাড়ি ফিরে এসে ভয়ে কাঁপছিল। কী হয়েছে, জিজ্ঞাসা করায় জানিয়েছিল, নেশার আসরে মৃত্যুঞ্জয় বন্দুক ঠেকিয়ে রেহানকে গুলি করেছে।’’ ওই তরুণী আরও বলেন, ‘‘চোখের সামনে খুন হতে দেখে আমার স্বামী ভয়ে পালিয়ে আসার চেষ্টা করলে ওঁর মাথাতেও বন্দুক ঠেকিয়ে খুনের হুমকি দেয় মৃত্যুঞ্জয়। বাইরে কাউকে বলতে বারণ করে দেয়।’’
সূত্রের খবর, প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের কাছে স্পষ্ট যে, সিন্ডিকেটের দখল নিয়েই রেহানের
সঙ্গে শত্রুতা তৈরি হয়েছিল ঘটনায় মূল অভিযুক্ত সুশান্ত রায়ের। যদিও বেশ কয়েক বছর আগে দু’জনের মধ্যে বন্ধুত্বের সম্পর্কই ছিল। আদতে বিহারের বাসিন্দা রেহান এক সময়ে লরি চালাতেন। সেই সূত্রেই বেলঘরিয়া এক্সপ্রেসওয়ের নীচে রাজীবনগর, প্রমোদনগর এলাকায় তাঁর যাতায়াত ছিল।
এক সময়ে লরি চালানো ছেড়ে সুশান্ত-সহ স্থানীয়দের সঙ্গে মিলে সিন্ডিকেট ব্যবসায় যুক্ত হয়েছিলেন রেহান। এর পরে সেখানকারই বাসিন্দা হয়ে যান।রেললাইন এবং এক্সপ্রেসওয়ে সংলগ্ন জলাজমি বুজিয়ে বিক্রি করা-সহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজের নিয়ন্ত্রণ কার হাতে থাকবে, তা নিয়ে বছরখানেক আগে সুশান্তের সঙ্গে রেহানের বিবাদের শুরু।
বন্দুকের বাঁট দিয়ে রেহানকে মারধরের অভিযোগে গ্রেফতার হয় সুশান্ত। যে জলাজমি বোজানো নিয়ে গোলমাল, সেটির কিছুটা অংশ ফের পুনরুদ্ধার করে পুলিশ। স্থানীয় সূত্রের খবর, সেই সময় থেকেই শাসকদলের ঘনিষ্ঠ হয়ে পড়েন রেহান। মাস ছয়েক আগে জলা জমির একাংশ বুজিয়ে টিনের তিনটি ঘর তৈরি করে থাকতে শুরু করেন তিনি। পুলিশ সূত্রের খবর, ডাকাতির পরিকল্পনা থেকে তোলাবাজি, মারামারি-সহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধমূলক কাজে অভিযুক্ত হিসাবে রেহানের বিরুদ্ধেও আট-দশটি মামলা রয়েছে।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)