তখন আলিমুদ্দিনে ঢুকছেন বুদ্ধদেব।
তৃণমূলের ছোঁয়া এ বার এসে লাগল সিপিএমেও!
প্রার্থী পছন্দ না হওয়ায় দলের কর্মী-সমর্থকদের একাংশ নিজেদের এলাকায় সিপিএমের কার্যালয়ে তালা ঝোলালেন। তার পরে অভিযান চালালেন আলিমুদ্দিনে। বিক্ষোভে আটকে পড়তে হল প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকেও। ধমক দিয়ে বিক্ষোভ থামিয়েছেন তিনিই। প্রার্থী নিয়ে বিক্ষোভে এ রাজ্যের বাম রাজনীতিতে এমন ঘটনা সাম্প্রতিক অতীতে প্রায় নজিরবিহীন!
উত্তর ২৪ পরগনার ভাটপাড়া কেন্দ্রটি এ বার সিপিএম ছেড়ে দিয়েছে লালুপ্রসাদ যাদবের দল আরজেডি-কে। সেই সঙ্গেই তাদের দেওয়া হয়েছে কলকাতার জোড়াসাঁকো কেন্দ্রও। সিপিএম রাজ্য নেতৃত্বের যুক্তি, হিন্দিভাষী ও বিহারের মানুষ আছেন, এমন এলাকা দেখেই আরজেডি-কে সেখানে লড়তে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ভাটপাড়ার স্থানীয় সিপিএমের একাংশ এমন সিদ্ধান্ত মানতে নারাজ। তৃণমূলের অর্জুন সিংহের বিরুদ্ধে তাদের পছন্দের প্রার্থী জিতেন্দ্রপ্রসাদ সাউ। ওই সমর্থকদের একাংশই শুক্রবার সকাল থেকে ধুন্ধুমার বাধিয়েছেন!
এমন ঘটনায় সিপিএমের রাজ্য নেতৃত্বও ক্ষুব্ধ। তবে দলের একাংশ এমনও বলছেন, ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলে তৃণমূল যে ভাবে দাপট বিস্তার করেছে, তাতে কয়েক মাস আগেও বাম প্রার্থীর সন্ধান করতে গিয়ে সমস্যায় পড়তে হতো। এখন কংগ্রেসের সঙ্গে বোঝাপড়ার আবহে বিরোধী শিবিরের প্রার্থী হওয়ার জন্য বাম কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে উৎসাহ বেড়েছে, বিক্ষোভের ঘটনাই তার ইঙ্গিত দিচ্ছে। অনেক বছর আগে অবশ্য এক বার প্রার্থী নিয়ে ক্ষোভ জানাতে আলিমুদ্দিনে দল বেঁধে এসেছিলেন কিছু কর্মী-সমর্থক।
দ্বিতীয় দফার প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করতে গিয়ে বৃহস্পতিবার বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু বলেছিলেন, আরজেডি নেতৃত্বের অনুরোধেই তিনি সেই দলের দুই প্রার্থীর নাম জানিয়ে দিচ্ছেন। ভাটপাড়ায় আরজেডি প্রার্থী হিসাবে ঘোষিত হয়েছিল নুর মহম্মদের নাম। তার পরেই ক্ষোভ ছ়়ড়ায় ভাটপাড়ায়। সিপিএম সূত্রের খবর, ক্ষুব্ধ সমর্থকদের একাংশ এ দিন সকাল থেকেই এলাকার কয়েকটি দলীয় কার্যালয়ে তালা লাগিয়ে দেন। ভাটপাড়ার জোনাল সিপিএম নেতা হরিমোহন নাথের বাড়িতে গিয়েও ক্ষোভ উগরে দেন এক দল। আর এক দল পাড়ি দেন আলিমুদ্দিনে! কেন ভাটপাড়ায় সিপিএম নিজেরা প্রার্থী দিল না, এই প্রশ্ন তুলে বিক্ষোভের মুখে বন্ধ করে দেওয়া হয় সিপিএমের রাজ্য দফতরের প্রধান ফটক।
দফতর থেকে বেরোতে গিয়েই বিক্ষোভকারীদের মাঝে প্রায় ঘেরাও হয়ে পড়েন বুদ্ধবাবু। দলীয় দফতরে এমন বিক্ষোভ দেখে ক্ষুব্ধ প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী গাড়ি থেকে নেমেও পড়েন। বিক্ষোভকারীদের উদ্দেশে তিনি হুঁশিয়ারি দেন, এ সব কী হচ্ছে? এ ভাবে বিক্ষোভ দেখানো দলের সংস্কৃতি নয়! বিক্ষোভকারীরা জানান, তাঁরা ভাটপাড়া আসনে সিপিএমেরই প্রার্থী চান। বুদ্ধবাবু তাঁদের বলেন, এই পার্টিতে এই ভাবে বিক্ষোভ দেখিয়ে কিছু হয় না! বিক্ষোভকারীরা বাড়ি যান। আর লিখিত ভাবে বক্তব্য দলকে জানিয়ে দিন। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর ধমকে কাজ হয়। পরে বিক্ষোভকারীদের কয়েক জনকে আলিমু্দ্দিনের দোতলায় ডেকে পাঠিয়ে কথা বলেন দলের রাজ্য নেতৃত্ব। হাল্কা চালে দলের এক রাজ্য নেতার মন্তব্য, ‘‘কংগ্রেসের সঙ্গে বোঝাপড়া করতে গিয়ে পুরনো কংগ্রেস সংস্কৃতি দেখা যাচ্ছে এ দিকেও চলে আসছে!’’
আলিমুদ্দিনে এই ঘটনার পরেই দলের রাজ্য দফতরে তলব করা হয় উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর কয়েক জন সদস্যকে। তাঁদেরই এক জন, নেপালদেব ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘ঘটনাটা ব্যতিক্রমী ও নিন্দনীয়। খোঁজ নিচ্ছি। জিতেন সাউ প্রার্থী না হওয়ায় আশাহত হয়ে কিছু কমবয়েসী এখানে এসেছিল।’’
বস্তুত, ভাটপাড়ার মতো রাস্তায় নেমে না-এলেও উত্তর ২৪ পরগনার আরও কিছু জায়গায় প্রার্থী নিয়ে বাম শিবিরেই অসন্তোষ তৈরি হয়েছে। ভাটপাড়ায় পাঁচ বছর আগের সিপিএম প্রার্থী নেপালদেবকে এ বার দাঁড় করানো হয়েছে রাজারহাট-গোপালপুর কেন্দ্রে। এক ব্যক্তিকে নানা জায়গায় ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে প্রার্থী করা নিয়ে দলের মধ্যে প্রশ্ন আছে। আবার উত্তর দমদমে স্থানীয় পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান সুনীল চক্রবর্তীকে প্রার্থী চেয়েছিল এলাকার সিপিএম। কিন্তু ওই কেন্দ্রে প্রার্থী করা হয়েছে তন্ময় ভট্টাচার্যকে। সিপিএম সূত্রের খবর, তন্ময়বাবুকে আদতে দমদম কেন্দ্রের প্রার্থী হিসাবে বাছা হয়েছিল। পরে বিধাননগর কেন্দ্র কংগ্রেসের জন্য ছেড়ে রাখায় সেখানকার সম্ভাব্য প্রার্থী পলাশ দাসকে দমদমে লড়তে পাঠিয়েছেন জেলা সিপিএম নেতৃত্ব। আর তন্ময়বাবুকে সরানো হয়েছে পাশের উত্তর দমদমে। বরানগর, মধ্যমগ্রাম বা হাবড়ার মতো আসনে কেন প্রার্থী ঘোষণা হচ্ছে না, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে বাম শিবিরে।
ছবি: সুমন বল্লভ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy