জন্মদিনের রাতটা কাটানোর কথা ছিল দিল্লির সুন্দরনগরের বাড়ির বিছানায়, চূড়ান্ত আরামে।
তার বদলে রাত কাটল কলকাতার ভবানী ভবনের মেঝেয়, কম্বলে শুয়ে।
তিনি পবন রুইয়া। জেসপ-ডানলপের কর্ণধার।
শনিবার সকালে সুন্দরনগরের বাড়ি থেকে গ্রেফতারের পর রাতেই বিমানে কলকাতায় আনা হয়েছে পবনকে। বিমানবন্দর থেকে সোজা ভবানী ভবনে। সারা রাত সেখানে মেঝেয় কম্বল বিছিয়ে শুয়েছেন পবন রুইয়া। শেষে আর থাকতে পারেননি। ঠান্ডায় কাঁপতে কাঁপতে সিআইডি অফিসারদের কাছে আর একটা কম্বল চেয়ে নেন। জেসপ-মামলায় আজ সকালে ব্যারাকপুর আদালত তাঁকে ১৪ দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেওয়ার পরে বিকেলে ফের ভবানী ভবনে আনা হয়েছে পবনকে।
ওই লক-আপই আপাতত পবন রুইয়ার ঠিকানা। রাতভর সেখানে একাই থাকছেন তিনি। আয়েসের জীবন ছেড়ে এখন তাঁর সঙ্গী আম-আদমির কম্বল, চা, রুটি-সব্জি। তদন্তকারীরা বলছেন, এমন পরিস্থিতিতে যে পড়বেন, তা সম্ভবত ভাবেননি রুইয়া গ্রুপ অব কোম্পানিজের চেয়ারম্যান। রবিবার সকালে নিজের পরিস্থিতি বোঝাতে গিয়ে তাই সিআইডি কর্তাদের গীতার শ্লোক শুনিয়েছেন। যার অর্থ, সময়ই সব চেয়ে বড়। সময়ের থেকে বড় আর কিছু নেই।
পবন রুইয়ার মুখে আচমকা গীতার শ্লোক শুনে কিছুটা হকচকিয়ে যান সিআইডি অফিসারেরা। তাঁরা জানতে চান, এ সব কথা বলার কারণ কী? গোয়েন্দা সূত্রের খবর, পবন তাঁদের বলেন, ‘‘রাতে ঠান্ডায় মেঝেতে একটা কম্বল বিছিয়ে শুয়েছিলাম!’’ সিআইডির এক কর্তার ব্যাখ্যা, উনি বিরাট শিল্পপতি। পরিস্থিতির শিকার হয়েই যে ওঁকে এ ভাবে হাজতে রাত কাটাতে হচ্ছে, সেটাই বোঝাতে চেয়েছেন।’’ গোয়েন্দা সূত্রের খবর, মামলা-মোকদ্দমা চললেও রাজ্যের পুলিশ যে তাঁকে গ্রেফতার করবে, তা ভাবতেই পারেননি পবন। সুন্দরনগরের বাড়িতে সিআই়ডি-র দল দেখে প্রথমে পালানোর চেষ্টা করেছিলেন। ধরা পড়ে গিয়ে নিজের প্রভাব বোঝানোর চেষ্টা করেন। সিআইডি-র এক কর্তা বলেন, ‘‘বিভিন্ন প্রভাবশালী ব্যক্তির নাম বলতে থাকেন। আমাদের অফিসারদের সামনেই উনি একাধিক লোককে ফোন করেন। তাতে অবশ্য লাভ হয়নি।’’
সিআইডির খবর, শনিবার বিকেলের পর থেকে বেশির ভাগ সময়ই তিনি ফাঁসানোর অভিযোগ করেছেন। তাঁকে কেন ফাঁসানো হচ্ছে, আগের বামফ্রন্ট সরকারের আমলে তাঁর সঙ্গে কী ধরনের ব্যবহার করা হয়েছিল, কী ভাবে তখন তাঁকে ফাঁসানোর চেষ্টা করা হয়েছিল, তার ফিরিস্তি দিয়েছেন। বারবার বলছেন রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের কথা।
সিআইডি-র দাবি, রেলের মামলা রুজু হওয়ার পর থেকেই পবন রুইয়ার খোঁজ মিলছিল না। গত ছ’দিনে তিনি গুজরাত, তামিলনাড়ু, মুম্বই এবং মহারাষ্ট্রে ছিলেন। সেখান থেকেই দিল্লিতে ফেরেন। রুইয়াকে জেরা করে তাঁর বিভিন্ন ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট সম্পর্কে তথ্য জোগাড় করা হচ্ছে। এ দিন রেলের মামলার সঙ্গে জেসপে অগ্নিকাণ্ডের মামলাটিও যুক্ত করা হয়েছে। সিআইডি-র অভিযোগ, রেলের মালপত্র এবং সেই সংক্রান্ত নথিপত্র নষ্ট করার জন্যই চক্রান্ত করে আগুন লাগানো হয়েছিল। ফলে, মামলার ফাঁস আরও জোরালো ভাবেই রুইয়ার উপরে চেপে বসবে বলে দাবি করছেন তদন্তকারীদের একাংশ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy