Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
National Health Mission

১০০ দিনের কাজের প্রকল্প এবং প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার মতো বরাদ্দ বন্ধের শঙ্কা স্বাস্থ্য মিশনে

রাজ্যের প্রবীণ আমলাদের অনেকে জানাচ্ছেন, বছরে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা পাওয়া যায় ওই মিশনে। তার মধ্যে কেন্দ্র দেয় ৬০ শতাংশ এবং ৪০ শতাংশ দিতে হয় রাজ্যকে।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ নভেম্বর ২০২৩ ০৭:৩৮
Share: Save:

পশ্চিমবঙ্গে ১০০ দিনের কাজের প্রকল্প এবং প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার বরাদ্দ বন্ধ রেখেছে নরেন্দ্র মোদী সরকার। এ বার সেই তালিকায় যুক্ত হতে পারে জাতীয় স্বাস্থ্য মিশন।

জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনে কেন্দ্রীয় বরাদ্দ আটকে দেওয়ার আশঙ্কা ক্রমশ ঘনীভূত হচ্ছে। কারণ, ইতিমধ্যেই কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক জানিয়ে দিয়েছে, কেন্দ্রের নির্দেশিকা মেনে প্রকল্পের ‘ব্র্যান্ডিং’ ঠিক মতো হলে এবং বিধিবদ্ধ নিয়ম মানা হলে পরবর্তী কিস্তির টাকা পাবে রাজ্য। নবান্নের আধিকারিকদের একটা বড় অংশ মনে করছে, ওই বক্তব্যের মোদ্দা কথা হল, স্বাস্থ্য মিশনের ‘ব্র্যান্ডিং’ এবং বিধিবদ্ধ নিয়ম না মানলে টাকা বন্ধ করে দেওয়া হবে। যা প্রকারান্তরে হুঁশিয়ারিই। সূত্রের দাবি, কেন্দ্র মনে করছে স্বাস্থ্য মিশনের ক্ষেত্রে বাংলায় তাদের নির্দেশিকা কোথায় আংশিক ভাবে, কোথাও আবার পুরোপুরি লঙ্ঘন করা হয়েছে। প্রসঙ্গত, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার ক্ষেত্রেও কেন্দ্রীয় বিধি না মানার অভিযোগ উঠেছিল।

কেন্দ্রের ওই অবস্থানে বেজায় চটেছে বঙ্গের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস। দলের এক্স হ্যান্ডলে (সাবেক টুইটার) তাদের পোস্ট, সাধারণ মানুষের বরাদ্দ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে আটকে বিরোধী শাসিত রাজ্যগুলিকে শায়েস্তা করতে চাইছে মোদী সরকার।

প্রশাসনিক পর্যবেক্ষকেরা জানাচ্ছেন, সমস্যাটা চলছে বেশ কয়েকমাস ধরে। কেন্দ্রীয় অনুদানের উপর ভিত্তি করে দেশে ‘আয়ুষ্মান ভারত-হেলথ অ্যান্ড ওয়েলনেস সেন্টার’ চালু হয়েছে, যেখানে প্রাথমিক, ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলির পরিকাঠামো মজবুত করা হচ্ছে। রাজ্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা ‘আয়ুষ্মান ভারত-হেলথ অ্যান্ড ওয়েলনেস সেন্টার’কে ‘সুস্বাস্থ্য কেন্দ্র’ নামে চালাচ্ছে। কেন্দ্রের প্রতিনিধিদের সঙ্গে প্রাথমিক আলোচনায় ‘সুস্বাস্থ্য কেন্দ্র’-এর সঙ্গে ‘হেলথ অ্যান্ড ওয়েলনেস সেন্টার’ কথাটি ব্যবহার করতে রাজি হয়েছিল রাজ্য। কিন্তু তাতে ‘আয়ুষ্মান ভারত’ কথাটি যুক্ত হয়নি। আবার রাজ্যের পরিকাঠামোগুলির রং নীল-সাদা। যদিও কেন্দ্রীয় বিধিতে সেই রং হওয়ার কথা ছিল ভিন্ন। লোগো নিয়েও বিতর্ক রয়েছে। সংশ্লিষ্ট মহল মনে করিয়ে দিচ্ছে, অর্থ মন্ত্রকের বিধি অনুযায়ী, কেন্দ্রীয় অনুদানভুক্ত প্রকল্পগুলির ‘ব্র্যান্ডিং’-ই মেনে চলতে হবে। গত ৩ নভেম্বর স্বাস্থ্য মিশনের অধিকর্তা নেহা গর্গ রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগমকে লিখিত ভাবে জানিয়েছেন, গ্রামীণ এবং শহুরে এলাকায় ‘আয়ুষ্মান ভারত-হেলথ অ্যান্ড ওয়েলনেস সেন্টার’-এর অগ্রগতি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কেন্দ্রীয় বিধিগুলি তাতে মানা হচ্ছে কি না, তা-ও বিভিন্ন বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রকের প্রতিনিধিরা রাজ্যে পরিকাঠামোগুলি ঘুরেও দেখেছেন। অধিকর্তা আরও জানিয়েছেন, রাজ্যে ১০ হাজার ৬৩২টি পরিকাঠামোর মধ্যে গত ১২ সেপ্টেম্বর ৯২৯২টির ছবি পোর্টালে আপলোড করা হয়েছিল। দেখা গিয়েছে, প্রকল্পের কেন্দ্রীয় বিধি অনুযায়ী আংশিক ‘ব্র্যান্ডিং’ মান্যতা পেয়েছে। প্রকল্পের খরচ সংক্রান্ত বিধিতে পরিকাঠামোগুলি যে রঙের হওয়ার কথা বিধিবদ্ধ ছিল, তা মানা হয়নি। ফলে মিশনের পরবর্তী বরাদ্দ নির্ভর করবে বিধিগুলি মেনে চলা হচ্ছে কিনা, তার উপর।

প্রশাসনিক সূত্রের খবর, গত মে মাসে রাজ্যে ঘুরে গিয়েছিলেন তৎকালীন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যসচিব রাজেশ ভূষণ। সংশ্লিষ্ট বিষয়ে রাজ্যের আধিকারিকদের সঙ্গে তাঁর বৈঠকও হয়েছিল। তবে জুলাইয়ের পর থেকে মিশনে কেন্দ্রীয় অর্থ পাওয়া যায়নি। অবশ্য রাজ্য তাদের অংশীদারির অর্থ দিয়েছে। কিন্তু কত দিন এই বিপুল অর্থাভার রাজ্য নিজে চালাতে পারবে, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে অর্থ দফতরের একাংশের মধ্যে। কারণ, বিভিন্ন ক্ষেত্রে রাজ্যের আর্থিক দায়দায়িত্ব তুলনায় অনেক বেশি।

স্বাস্থ্য মিশন নিয়ে কেন্দ্রের এই মনোভাবের তীব্র সমালোচনা করেছেন রাজ্যের স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, “একটা স্বাস্থ্য পরিষেবা ভবনের রঙের উপর নির্ভর করে? সেটা পাওয়া মানুষের অধিকার। রং তার সামনে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে না। বিজেপি পরিচালিত কেন্দ্রীয় সরকার তাদের নির্লজ্জ ভূমিকা প্রকাশ করে দিয়েছে। স্বাস্থ্য বিষয়টা রাজ্যের তালিকাভুক্ত। এই দখলদারি সংবিধান বহির্ভূত।”

রাজ্যের প্রবীণ আমলাদের অনেকে জানাচ্ছেন, বছরে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা পাওয়া যায় ওই মিশনে। তার মধ্যে কেন্দ্র দেয় ৬০ শতাংশ এবং ৪০ শতাংশ দিতে হয় রাজ্যকে। এই অর্থে মা-শিশু স্বাস্থ্য-সহ জনস্বাস্থ্য পরিষেবার প্রায় পুরো কাজ হয়ে থাকে। ওই তহবিল থেকে কমবেশি ৬০ হাজার আশাকর্মীর এক-এক জন ৭-৮ হাজার টাকা করে মাসিক ভাতা পান। তাই মিশনের বরাদ্দ আটকে গেলে এই সব কাজ ধাক্কা খেতে পারে। পর্যবেক্ষকদের অনেকে এ-ও মনে করছেন, আগামী লোকসভা ভোটের আগে এই ক্ষেত্রটিও হয়তো রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসবে।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy