খেলার ফাঁকে শান্তির জল। সকালের ময়দানে।ছবি: রণজিৎ নন্দী
ইঙ্গিত দিয়েছিল জানুয়ারি। ফল মিলছে এপ্রিলের গোড়াতেই!
এক দিকে চড়া তাপমাত্রা তো রয়েইছে। দোসর হয়েছে আর্দ্রতাও। ফলে প্যাচপেচে গরমে নাকাল হচ্ছেন মহানগরের বাসিন্দারা। পরিস্থিতি আরও ঘোরালো পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলিতে। সেখানকার বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে শুরু হয়েছে তাপপ্রবাহ। আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস, এমন পরিস্থিতি আরও দিন কয়েক চলবে।
আলিপুর আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, বুধবার কলকাতায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৮.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস, স্বাভাবিকের চেয়ে ৩ ডিগ্রি বেশি। সঙ্গে জুড়ে গিয়েছে বাতাসের অতিরিক্ত জলীয় বাষ্প বা আর্দ্রতা। তার ফলে সকাল থেকেই রাস্তায় বেরিয়ে ঘেমেনেয়ে অস্থির হয়েছেন মানুষজন। বসন্তেই তাপপ্রবাহ শুরু হয়ে গিয়েছে পশ্চিমাঞ্চলে। বীরভূম, আসানসোলে দিনের তাপমাত্রা ৪১-৪২ ডিগ্রির কাছাকাছি ঘোরাফেরা করেছে। বাঁকুড়ায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠে গিয়েছে ৪২.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসে, স্বাভাবিকের থেকে ৬ ডিগ্রি উপরে।
এ দিন সকাল পৌনে ন’টায় মধ্যমগ্রাম থেকে ট্রেনে ওঠেন কুণাল মুখোপাধ্যায়। একটু পরেই বুঝলেন, দরদর করে ঘামছেন। দমদম স্টেশনে পৌঁছনোর আগেই ভিজে সপসপে হয়ে যায় জামা। এসি মেট্রোর ভিতরেও বারবার ব্যাগ থেকে জলের বোতল বার করে গলায় ঢালছিলেন কলেজপড়ুয়া। ভরদুপুরে চিনার পার্কের কাছে শপিং মলের সামনেটা কার্যত ফাঁকা। যেটুকু ভিড়, তা আইসক্রিম বিক্রেতাকে ঘিরেই। ইকো পার্কের কাছে সস্তা হোটেলের মালকিন এ দিন মেনুতে মাছ-মাংস রাখেননি। দু’-চার পিস ডিম রেঁধেছিলেন বটে। তা-ও বিকোয়নি। বিকেল তিনটের ঠা-ঠা রোদ্দুরের দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘‘এত গরমে লোকে কি আর এ সব মশলাদার খাবার খাবে!’’ তাঁর দোকানে এ দিন বেশির ভাগ খদ্দেরই আমের ডাল, আলুভাজা, সব্জি দিয়েই দুপুরের খাওয়া সেরেছেন।
এ বছর গরম যে নাকাল করবে, তা অবশ্য আগেই জানিয়েছিলেন আবহবিদেরা। বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা ২০১৫ সালকে রেকর্ড গরম হিসেবে ঘোষণা করার সময়ে বলেছিল, ২০১৬ সাল নতুন রেকর্ড গড়তে পারে। তার ইঙ্গিত মিলেছিল শীতেও। গোটা মরসুমে তিন দিন কড়া ঠান্ডা মালুম হয়েছিল কলকাতায়। জানুয়ারি শেষ হওয়ার আগেই চড়তে শুরু করে পারদ! যা দেখে এক আবহবিদের মন্তব্য ছিল, ‘‘এ তো সবে শুরু। এপ্রিল-মে কী খেল দেখায়, সেটাই দেখার।’’ সে আশঙ্কাই সত্যি হতে চলেছে বলে মনে করছেন অনেকে।
হঠাৎ করে এমন দুর্বিষহ গরম পড়ল কেন?
আবহবিদদের ব্যাখ্যা, জানুয়ারির গোড়া থেকেই তাপমাত্রা বেশি হয়েছে। মাঝে কয়েক দিন রাতের দিকে একটু ঠান্ডা পড়লেও ফের মাথাচাড়া দিয়েছে গরম। এ বার তার সঙ্গে জুড়ে গিয়েছে মধ্য ভারত ও ঝাড়খণ্ডের উত্তপ্ত পরিস্থিতিও। কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতরের এক কর্তা বলছেন, মধ্য ভারত ও ঝাড়খণ্ড থেকে গরম হাওয়া বয়ে আসছে রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চলে। তার জেরেই এমন আগুন ঝরানো পরিস্থিতি। সেই গরমই আবার নাকাল করছে মহানগরীকেও। আবহবিদেরা বলছেন, ঝড়বৃষ্টিই এই নাকাল করা গরম থেকে সাময়িক রেহাই দিতে পারে। তেমন স্বস্তির ঝড়বৃষ্টি মিলবে কবে?
আশ্বাসবাণী শোনাতে পারছেন না কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতরের ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল গোকুলচন্দ্র দেবনাথ। তিনি বলছেন, ‘‘ঝড়বৃষ্টির পরিস্থিতি এখনই দেখা যাচ্ছে না। বরং আরও কয়েক দিন গরম চলবে। পশ্চিমাঞ্চলে জারি থাকবে তাপপ্রবাহের পরিস্থিতিও।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy