Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

রায়ে মাতব্বরি বন্ধ হবে কি? প্রশ্ন নির্যাতিতার

এক জনের মাথা কামিয়ে দেওয়া হয় গত জুলাইয়ে। আর এক জনকে বিবস্ত্র করে পেটানো হয়েছিল গত বছর। ওঁদের এখনও দিন কাটছে আতঙ্কে। ‘অপরাধ’— পরকীয়ায় জড়ানো।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

পীযূষ নন্দী
খানাকুল শেষ আপডেট: ০১ অক্টোবর ২০১৮ ০৩:৪৯
Share: Save:

এক জনের মাথা কামিয়ে দেওয়া হয় গত জুলাইয়ে। আর এক জনকে বিবস্ত্র করে পেটানো হয়েছিল গত বছর। ওঁদের এখনও দিন কাটছে আতঙ্কে। ‘অপরাধ’— পরকীয়ায় জড়ানো।

এ রাজ্যের নানা প্রান্তে পরকীয়ার কথা জানতে পারলেই এতদিন স্বঘোষিত মাতব্বররা শাস্তির বিধান দিত। সুপ্রিম কোর্টের পরকীয়া-রায়ের পরে সেই সালিশি বা মাতব্বরি কি বন্ধ হবে? প্রশ্নটা তুলেছেন খানাকুলের দুই নির্যাতিতা। কারণ, প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের বহু জায়গায় এখনও যে ‘মোড়ল’ বা ‘মাতব্বর’রা দণ্ডমুণ্ডের কর্তা!

খানাকুলের ধরমপুরের সেই নির্যাতিতার কথা ধরা যাক। পরকীয়ায় জড়ানোর অভিযোগে যাঁর মাথা কামিয়ে দেওয়া হয়েছিল গত ১১ জুলাই রাতে। বেঁধে রাখা হয়েছিল সারারাত। শীর্ষ আদালতের রায় শুনে তিনি বলেন, ‘‘কেউ আর মেয়েদের মাথা কামাতে পারবে না, ভেবে ভাল লাগছে। আমার বা স্বামীর অন্যায় থাকলে আমরা বুঝে নেব। কিন্তু প্রতিবেশীদের জুলুম থাকবে কেন? সেটা কি বন্ধ হবে এ বার?”

কী হয়েছিল ওই রাতে?

বছর তিরিশের ওই মহিলা জানান, সন্ধ্যায় ছেলের পাশে তিনি ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। তাঁর বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্কের অভিযোগে এলাকার কয়েক জন ঘুম থেকে তুলে তাঁকে মারতে মারতে সালিশি সভায় নিয়ে যায়। সেখানে অনেকটা মাথা কামিয়ে তাঁকে একটি ঘরে সারারাত বেঁধে রাখা হয়। পরের দিন তিনি শাবলসিংহপুরে বাপের বাড়ি চলে যান। থানায় সাত জনের নামে অভিযোগ দায়ের করেছিলেন। পুলিশ তিন জনকে গ্রেফতার করে। তারা এখন জামিনে মুক্ত। বাকি অভিযুক্তেরা পুলিশের খাতায় ‘পলাতক’।

পরে পুলিশের সহযোগিতায় মহিলা গ্রামে ফেরেন। এখন নতুন বাড়ি করে স্বামী-ছেলেকে নিয়ে আলাদা থাকেন। তাঁর ক্ষোভ, ‘‘প্রায় একঘরে অবস্থায় দিন কাটাই। পড়শিরা আমাদের সঙ্গে বিশেষ কথা বলেন না। এখনও অশান্তির ভয় পাই। এখনও হুমকি শুনতে হয়।’’ তাঁর স্বামী কর্মসূত্রে কলকাতায় থাকেন।

গত বছর পুজোর সময়ে এক মহিলার সঙ্গে এক ভিলেজ পুলিশের বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক নিয়ে উত্তেজনা ছড়িয়েছিল এই খানাকুলেরই গড়েরঘাটে। সপ্তমীর রাতে দু’জনকে বিবস্ত্র করে পিটিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দেয় গ্রামবাসীদের একাংশ। দু’জনেই পুলিশকে লিখিত ভাবে জানান, শারীরিক সম্পর্কে তাঁদের দু’জনেরই সম্মতি ছিল। ওই মহিলা সাত গ্রামবাসীর বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ জানিয়েছিলেন। অভিযুক্তেরা আগাম জামিন নিয়ে নেয়। তবে, মহিলা এখনও গ্রামে ফিরতে পারেননি। সুপ্রিম কোর্টের রায়ে তিনি খুশি। তাঁর কথায়, ‘‘মহিলাদের এই স্বাধীনতায় ভাল লাগছে। সেই মারধর এখনও ভুলিনি। বাঁ চোখে এখন কম দেখি। এখনও মাথার চিকিৎসা চলছে। মাতব্বরিটা বন্ধ হওয়া দরকার।’’ সেই ভিলেজ পুলিশও রায়কে স্বাগত জানিয়েছেন।

কী বলছেন দু’টি ঘটনার দুই অভিযুক্ত?

রায় নিয়ে তাদের বিশেষ হেলদোল নেই। ধরমপুরের এক মহিলা তো বলেই দিল, ‘‘গ্রামে ফের ওই রকম নজির দেখলে ফের চুল কেটে দেব।” আর গড়েরঘাটের ঘটনায় অভিযুক্ত রমেশ দলুই বলছেন, ‘‘যাঁরা পরকীয়ায় ইচ্ছুক বা আসক্ত তাঁরা পাড়ায় নোটিস দিয়ে রাখুন। তা হলে প্রতিবেশীদের বিভ্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। আমরা মেরেছিলাম, ওঁরা ভাই-বোন পরিচয় দিয়ে নোংরামো করছিল বলে।’’

কিন্তু পরকীয়া কে আর বলে করেছেন!

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE