চিরঞ্জিৎ চক্রবর্তী এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র।
আর ভোটে লডতে চান না বর্ষীয়ান অভিনেতা চিরঞ্জিৎ। বারাসতের তৃণমূল বিধায়ক ইতিমধ্যেই দলনেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে ওই বিষয়ে অব্যাহতি চেয়েছেন। চিরঞ্জিতের কথায়, ‘‘অনেক বয়স হয়ে গিয়েছে। এবার একটু বিশ্রাম নিতে চাই। দলনেত্রীকে বলেছি, এবার আমায় অব্যাহতি দিন। আমি নিজের জগতে ফিরে যেতে চাই।’’ তবে একইসঙ্গে টলিউডের এই দক্ষ অভিনেতা জানিয়েছেন, তৃণমূলের হয়ে ভোটে না লড়লেও তিনি অন্য কোনও দলে যোগ দিচ্ছেন না। এমনকি, তৃণমূল ছেড়ে দিলেও তিনি অন্য কোনও দলে যাবেন না।বিধানসভা ভোটের ঝোড়ো বাতাসে টলিপাড়ায় আপাতত বিভিন্ন রাজনৈতিক দলে যোগদানের হিড়িক পড়েছে। প্রথাগত এবং পেশাগত রাজনীতিকদের চেয়ে তারকাদের নিয়েই মাতামাতি বেশি তৃণমূল এবং বিজেপি-র। বস্তুত, বুধবার যখন চিরঞ্জিৎ ভোট না-লড়ার ইচ্ছার কথা ঘোষণা করছেন, তখন তার প্রায় কাছাকাছি সময়েই বিজেপি-তে যোগদান করছেন একঝাঁক টলি-তারকা।
তাঁর সতীর্থ এবং সহকর্মীদের অনেকেই য়খন রাজনীতিতে যোগ দিচ্ছেন, তখন তিনি রাজনীতি এবং নির্বাচন থেকে অব্যাহতি নেওয়ার কথা ভাবছেন। কিন্তু যাঁরা রাজনীতিতে আসছেন, তাঁদের সম্পর্কে চিরঞ্জিতের কী বক্তব্য? প্রবীণ অভিনেতা বলছেন, ‘‘যাঁরা যে যে দলে যোগ দিচ্ছেন, সেটা তাঁদের ব্যক্তিগত বিষয়। সেটা নিয়ে আমি কোনও মন্তব্য করতে চাই না। আমি শুধু বলতে চাইছি যে, আমি আর ভোটে লড়তে চাইছি না। সেটা জানিয়েই দলনেত্রীর কাছে অব্যাহতি চেয়েছি। এখন দেখা যাক, উনি কী বলেন।’’
প্রসঙ্গত, ২০১১ সালে ‘পরিবর্তন’-এর সময় বারাসত থেকে তৃণমূলের টিকিটে ভোট লড়ে বিধায়ক হয়েছিলেন চিরঞ্জিৎ। একদা দূরদর্শনের সংবাদপাঠক দীপক চক্রবর্তী বাংলা ছবিতে ‘চিরঞ্জিৎ’ নামেই আবির্ভূত হয়েছিলেন। দক্ষ চিত্রশিল্পী শৈল চক্রবর্তীর পুত্র চিরঞ্জিৎ নিজেও ভাল ছবি আঁকতে পারেন। সেই সূত্রেই বুধবার তিনি বলেছেন, ‘‘আমি যখন যা করি, মন দিয়ে করি। সিরিয়াসলি করি। যখন ছবি আঁকি, তখন যেমন মন দিয়ে আঁকি, তেমনই যখন রাজনীতি করি, তখনও সেটা মন দিয়েই করি। কিন্তু এখন আমার আর রাজনীতি করার ইচ্ছা নেই। সেটাই দলনেত্রীকে বলেছি।’’ তবে চিরঞ্জিৎ প্রাথমিক ভাবে ২০১১ সালেও ভোটে দাঁড়াতে চাননি। বর্ষীয়ান অভিনেতার কথায়, ‘‘আমি অনেকদিন ধরেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গুণগ্রাহী ছিলাম। রাজনীতিতে আসার আগে থেকেই। ওঁর সঙ্গে আমার নিয়মিত যোগাযোগও ছিল। সেই সূত্রেই উনি আমায় ২০১১ সালে নির্বাচনে দাঁড়াতে বলেছিলেন। তখনও আমি আপত্তি জানিয়েছিলাম। কিন্তু উনি বলেছিলেন, সরকার গঠন করতে গেলে ১৪৮টা আসন দরকার। তাই আমার ভোটে দাঁড়ানোও দরকার। ওঁর কথায় আমি সেবার ভোটে দাঁড়াই এবং জিতি।’’
তার পর ২০১৬ সালেও তিনি ভোটে দাঁড়াতে চাননি বলে দাবি চিরঞ্জিতের। তাঁর কথায়, ‘‘২০১৬ সালে আমি ওঁকে (মমতাকে) বলেছিলাম, এখন তো আপনি অনেক ভোটে জিতে আছেন। আনেক আসনও পেয়েছেন। এখন আর আমায় ভোটে দাঁড়াতে বলবেন না। কিন্তু সেবারও উনি শোনেননি। তাই সেবারও আমাকে ভোটে দাঁড়াতে হয়েছিল।’’ ঘটনাচক্রে, তার আগে বারাসত-কাণ্ডে মদ্যপদের হাতে এক ছাত্রীর নিগ্রহের ঘটনার পর সাধারণ ভাবে মহিলাদের পোশাক নিয়ে একটি ‘অবাঞ্ছিত’ মন্তব্য করে খানিকটা বিতর্কে জড়িয়েছিলেন চিরঞ্জিৎ। তিনি বলেছিলেন, ‘‘মেয়েদের পোশাকের ধরন বদলাচ্ছে। সেটা পুরুষের মনোরঞ্জনের জন্য। মেয়েদের পোশাক নিয়ে কটূক্তি করলেই তাকে ‘স্ল্যাং’ বা ‘টন্ট’ বলা হয়।’’ ওই মন্তব্যের পর চিরঞ্জিৎকে সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছিল। কিন্তু তার প্রভাব বারাসতের বিধানসভা কেন্দ্রে তাঁর জয় আটকাতে পারেনি। ২০১৬ সালেও ভোটে জিতে বারাসতের বিধায়ক হয়েছিলেন তিনি।
কিন্তু এবার তিনি ভোটে না দাঁড়ানোর বিষয়ে প্রায় মনস্থির করে ফেলেছেন বলেই তাঁর ঘনিষ্ঠদের দাবি। আর চিরঞ্জিৎ বলছেন, ‘‘এবার সত্যিই আর পারছি না। তাই ওঁকে জানিয়েছি। দেখা যাক, উনি কী বলেন।’’ তবে ‘উনি’ বললে অন্যান্যবারের মতোই আবার বারাসতের পথে-প্রান্তরে তৃণমূলের প্রার্থী চিরঞ্জিৎকে দেখা গেলে খুব অবাক না-ও হতে পারে বাংলার রাজনীতির জগৎ। বিশেষত, যখন তিনি অন্য কোনও দলে যাচ্ছেন না বলে জানিয়েই দিচ্ছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy