বলে দেওয়া হচ্ছে প্রসেনজিৎ বিজেপি-তে যোগ দেবেন! এর মানেটা কী? —ফাইল চিত্র।
বুধবার সকাল থেকে শুধু ফোনের পর ফোন! একটাই প্রশ্ন— আমি কি বিজেপি-তে যোগ দিচ্ছি! বারবার ঘুরিয়েফিরিয়ে সেই একই প্রশ্ন। কেন? কেননা, মঙ্গলবার আমার বাড়িতে বিজেপি নেতা অনির্বাণ গঙ্গোপাধ্যায় এসেছিলেন একটি বই উপহার দিতে! স্রেফ একটা সৌজন্য সাক্ষাৎকারের জন্য।
এই প্রসঙ্গে আমি কিছু বলতে চাই। সেইজন্যই আনন্দবাজার ডিজিটালে এই লেখা লিখছি। এটা আবার না বুঝে ভেবে বসবেন না, আমি কারও কাছে কোনও ‘জবাবদিহি’ করছি।
বারবার একটাই কথা মনে হচ্ছে— কলকাতার সংবাদমাধ্যম প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়কে চিনতে এত ভুল করল? এতটাই! পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচন আসছে। আমাদের ইন্ডাস্ট্রির অনেকেই রাজনীতিতে যোগ দিচ্ছেন। সেটা তাঁদের ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। কিন্তু দয়া করে এর মধ্যে প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়কে টানবেন না। সকাল থেকে ফোনের পর ফোন পেতে পেতে মনে হচ্ছিল, সংবাদমাধ্যম কি প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের ওপর তাদের দীর্ঘদিনের লালিত বিশ্বাসটা হারিয়ে ফেলছে? তারা কি জানে না, প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় যদি কোনও বড় সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে সেটা বুক ফুলিয়ে সকলের সামনে ঘোষণা করবে?
একজন অভিনেতা এবং সিনিয়র শিল্পী হিসাবে কেন্দ্র এবং রাজ্যের দুই সরকারের কাছে আমার একটাই অনুরোধ— সিনেমাটা বাঁচাও! ঋত্বিক ঘটক, সত্যজিৎ রায় যে ভাষার ছবি তৈরি করে গিয়েছেন, সেই ভাষার সিনেমাকে বাঁচাও। আর দু’পক্ষ এক না হলে কিন্তু সিনেমাকে বাঁচানো যাবে না। এটা কারও একার কাজ নয়। কোনও একপক্ষের কাজ নয়। এটা কেউ ভাবছেও না! বলছেও না! আর তেমন ভাবে বলবেও না বোধহয়। দ্বিতীয় কথা— আমার কাছে যে কেউ যে কোনও সময় আসতেই পারেন। মঙ্গলবার যেমন অনির্বাণ এসেছিলেন। দারুণ মানুষ। আমার তো ওঁকে খুব ভাল লেগেছে। আমাকে বই উপহার দিলেন। উনি আমার সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন। পরিচয়ের পরিসর বাড়াতে এসেছিলেন। উনি কিন্তু আমায় কিনতে আসেননি। আমার থেকে কিছু চাইতেও আসেননি। সকলেই চাওয়া-পাওয়ার জন্য আসে না।
এত বছর ধরে ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করছি। সকলেই আমায় চেনেন-জানেন। কলকাতায় এলে বহু মানুষ তো দেখা করতে চাইবেনই। সেটা নিয়ে গল্প লিখতে বসলে তো মুশকিল! একটু তো ভেবে লিখতে হবে! বলে দেওয়া হচ্ছে প্রসেনজিৎ বিজেপি-তে যোগ দেবেন! এর মানেটা কী?
একবার ইন্ডাস্ট্রির ভিতরের সমস্যা মেটাতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও আমার বাড়িতে এসেছিলেন। তিনি জানতেন, আমি এমন একজন মানুষ, যার ডাকে সকলে আসবে আমার বাড়িতে। তাই বৈঠকটা আমার বাড়িতে হয়েছিল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আমার বাড়ি এসেছিলেন মানেই কি আমি তৃণমূলে যোগ দিয়েছি? নাকি যোগ দিয়েছিলাম? একটু ভাবুন। একটু বুঝুন। তারপরে যা বলার বলুন। এখনও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে আমার খুবই ভাল সম্পর্ক। দেখা হলেই কথা হয়। কই, তার জন্য তো আমায় তৃণমূলে যোগ দিতে হয়নি! যাঁর যে রাজনৈতিক মতাদর্শই থাক, আমার বাড়িতে সকলের জন্য দরজা খোলা।
এবার বিজেপি প্রসঙ্গে আসি। বিজেপি-র বড় মহল অবধি জানে, রাজনীতির বিষয়ে আমার মত কী। গত ১০ বছরে সুযোগ থাকা সত্ত্বেও আমি যখন রাজনৈতিক দলে যোগ দিইনি, তখন এখনও দেব না। আর এখন বলে নয়, মুম্বইয়ে ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে হলে ঋতুপর্ণ ঘোষ, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, অপর্ণা সেনের সঙ্গে আমাকেও ডাকা হত। এটা গর্বের বিষয় নয়। কিন্তু এটা সত্যি। কতবার কমল হাসানের সঙ্গে এক মঞ্চে দেখা হয়েছে আমার! কথা হয়েছে। এগুলো সবই অভিনয়ের জন্য।
শুধু রাজনীতি? ‘সেলিব্রিটি’ হলে তাঁর ব্যক্তিগত সম্পর্ক নিয়েও তো টানাটানি! আনন্দবাজারেই একবার আমার বিবাহবিচ্ছেদ নিয়ে লিখেছিলাম। সত্যি কথা বলতে কি, বিয়ে ভাঙার পর আমাদের সময়ই দেওয়া হয়নি সম্পর্ক নিয়ে ভাববার। আমরাও তো মানুষ। তখন কিন্তু আনন্দবাজারেই লিখেছিলাম যে, আমার বিয়ে ভাঙার জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী আনন্দবাজার। সকলে বলেছিল ‘‘ওই ভাবে লেখা একমাত্র বুম্বাদার পক্ষেই সম্ভব!’’
দোহাই আপনাদের, এবার আমার রাজনৈতিক দলে যোগদান নিয়ে জল্পনা বন্ধ করুন। আর যা-ই হোক, প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় কোনও রাজনৈতিক দলে যোগ দেবে না। জেনে রাখুন। বিশ্বাস করতে শিখুন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy