কপ্টার থেকে নামানো হচ্ছে সাজিদকে। সোমবার বহরমপুরের ব্যারাক স্কোয়ার ময়দানে। ছবি: গৌতম প্রামাণিক
হার্ডওয়্যারের দোকান থেকে কেনা ফাঁপা পিভিসি পাইপ ও পাইপ-সকেট ছিল জঙ্গিদের রকেট লঞ্চার তৈরির অন্যতম প্রধান উপকরণ। মুর্শিদাবাদের বেলডাঙার কোন দোকান থেকে কী ধরনের পিভিসি পাইপ কিনে মারণাস্ত্র তৈরি করা হত, খাগড়াগড় কাণ্ডে ধৃত জঙ্গি- চাঁই সাজিদ ও তার অন্যতম শাগরেদ আব্দুল হাকিমকে সঙ্গে নিয়ে সোমবার তা সরেজমিনে দেখলেন গোয়েন্দারা।
এ দিন সকালে এনআইএ-র একটি দল কলকাতা থেকে ফৌজি কপ্টারে করে ওই দুই জঙ্গিকে নিয়ে প্রথমে বহরমপুর ও সেখান থেকে সড়কপথে বেলডাঙা যায়। সেখানকার ছাপাখানা মোড়ে একটি হার্ডওয়্যারের দোকান থেকে রকেট লঞ্চারের জন্য দেড় ইঞ্চি পুরু ফাঁপা পিভিসি পাইপ কেনা হতো বলে জেরায় জানিয়েছে ওই দু’জন। দোকানটির মালিকের নাম সাদেক মোল্লা। ১১টা নাগাদ দোকানের সামনে থামে দু’টি প্রিজন ভ্যান, যার একটিতে ছিল সাজিদ ও অন্যটিতে হাকিম।
সাদেক মোল্লার দোকান থেকে ফুট পাঁচেক লম্বা একটি পিভিসি পাইপ নিয়ে এনআইএ-র দুই কর্তা ঢুকে যান হাকিমের প্রিজন ভ্যানে। তাঁদের সঙ্গে ওঠেন সাদেক মোল্লাও। কিছুক্ষণ পর সাদেক প্রিজন ভ্যান থেকে নেমে যান। এনআইএ সূত্র বলছে, হাকিমকে দেখে সাদেক মোল্লা জানান, ওই ব্যক্তি তাঁর দোকান থেকে মাঝে মধ্যেই পিভিসি পাইপ কিনতো। গোয়েন্দারা আকরাম শেখ ও এহেন্দার শেখ নামে দুই বস্ত্র ব্যবসায়ীকে ওই অভিযানের সাক্ষী হিসেবে নিয়ে যান বেলডাঙা থানায়।
খাগড়াগড়-তদন্তে নেমে এনআইএ এ-ই প্রথম ধৃতদের নিয়ে তদন্তে বেরোল। এনআইএ সূত্রের খবর, বিস্ফোরণের একমাত্র জীবিত প্রত্যক্ষদর্শী হাকিম তো বটেই, জঙ্গি-চাঁই সাজিদকে নিয়েও গোয়েন্দারা পরে বিস্ফোরণস্থলে যেতে পারেন।
এনআইএ-র এক কর্তার কথায়, “ধৃত সাজিদ ও হাকিমকে সঙ্গে নিয়ে বেলডাঙা থেকে আমরা কিছু প্রমাণ সংগ্রহ করেছি। রকেট লঞ্চার তৈরির উপকরণ কোন দোকান থেকে কেনা হতো, সেটা হাকিম আমাদের দেখিয়েছে। হাকিমকে দোকানদার শনাক্তও করেছেন।” কিন্তু এ সবের তাৎপর্য কী? ওই অফিসার বলেন, “খাগড়াগড় বিস্ফোরণ মামলায় আমরা দ্রুত চার্জশিট দেওয়ার চেষ্টা করছি। এ সব ওই উদ্যোগেরই অঙ্গ।”
এ দিন বিকেলে আইজি সঞ্জীব সিংহ-সহ এনআইএ-র একটি দল হাকিমকে নিয়ে হেলিকপ্টারে কলকাতায় ফিরে যায়। অন্য একটি দল সাজিদকে নিয়ে সড়কপথে যায় রঘুনাথগঞ্জে। রাতে সাজিদকে নিয়ে যাওয়া হয় বীরভূমের নানুর থানায়।
এনআইএ সূত্রের খবর, খাগড়াগড়ে ডেরা বাঁধার আগে বেলডাঙার বরুয়া মোড়ের কাপড়ের দোকান তথা জঙ্গি ডেরা ‘বোরখা ঘর’-এর অদূরে একটি জায়গায় বসে বিস্ফোরক, আইইডি ও রকেট লঞ্চার তৈরি করত জঙ্গিরা। ওই জায়গাটি প্রথম ভাড়া নেয় শাকিল আহমেদ, খাগড়াগড় বিস্ফোরণে যে নিহত। ’১৩-র ডিসেম্বর থেকে ’১৪-র মার্চ-এপ্রিল পর্যন্ত শাকিলের সঙ্গে হাকিম ওখানে থেকেই বিস্ফোরক, আইইডি ও রকেট লঞ্চার তৈরি করেছে বলে গোয়েন্দারা জেনেছেন।
বেলডাঙা পুরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের হাটপাড়ার একটি ঘর ভাড়া নিয়ে একটা সময়ে থাকত হাতকাটা নাসিরুল্লা ওরফে সোহেল মেহফুজ। সাজিদের আগে সে-ই ছিল ভারতে জেএমবি-এর মাথা। নাসিরুল্লা যেখানে থাকত, তার পাশের বাড়ির এক মহিলার সঙ্গে এনআইএ-র অফিসারেরা কথা বলেন। তার পর নাসিরুল্লার বাড়িওয়ালা আনসার শেখকে নিয়ে যান বেলডাঙা থানায়। সাজিদকে প্রিজন ভ্যান থেকে নামিয়ে বেলডাঙা থানায় ঘণ্টা দুয়েক জেরা করা হয়।
বিকেলে সাজিদকে নিয়ে যাওয়া হয় রঘুনাথগঞ্জ থানায় এবং সেখান থেকে ওই এলাকার সম্মতিনগরে। এনআইএ-র বক্তব্য, ওই তল্লাটে একটি বাড়ি ভাড়া করে স্ত্রী, দুই মেয়েকে নিয়ে মাস আটেক ছিল সাজিদ। এ দিন সাজিদকে নিয়ে ওই বাড়িতে ঢুকে তল্লাশি চালায় এনআইএ।
এ দিন সকাল সওয়া ১০টা নাগাদ বায়ুসেনার হেলিকপ্টারে বহরমপুরের ব্যারাক স্কোয়ার ময়দানে হাকিম ও সাজিদকে নিয়ে নামে এনআইএ-র দলটি। সাজিদ ও হাকিম দু’জনেরই মুখ থেকে গলা পর্যন্ত ছিল কালো কাপড়ে ঢাকা। ব্যারাক স্কোয়ার ময়দান থেকে আইজি সঞ্জীব সিংহের নেতৃত্বে তিন জনের একটি দল ভগবানগোলা ও লালগোলা গিয়ে বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকা পরিদর্শন করেন। লালগোলার রামনগর সীমান্ত চৌকিতে বিএসএফ জওয়ানদের সঙ্গে সমন্বয় বৈঠক করেন এনআইএ-র আইজি। বৈঠকে ছিলেন বিএসএফের ৪ নম্বর ব্যাটেলিয়নের কম্যান্ডিং অফিসার মাসুদ মহম্মদ।
তখন এনআইএ-র বাকি ন’জন অফিসার সাজিদ ও হাকিমকে দু’টি প্রিজন ভ্যানে নিয়ে রওনা হন বেলডাঙার উদ্দেশে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy