শেখ শাহজাহান। —ফাইল ছবি।
এলাকার ‘বেতাজ বাদশা’ বেপাত্তা। তবু মুখ খুলতে নারাজ এখনও ভয়ে সিঁটিয়ে থাকা এলাকাবাসী। তবু তারই মধ্যে শেখ শাহজাহানের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত এক জনের সূত্রে খবর, রেশন দুর্নীতিতে মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক (বালু) গ্রেফতার হওয়ার খবর পাওয়ার কিছু ক্ষণের মধ্যেই পাঁচ-পাঁচটি মোবাইল ভেঙে নষ্ট করে দিয়েছিলেন শাহজাহান!
ইডি সূত্রের বক্তব্য, আপাতত পলাতক এই তৃণমূল নেতার প্রমাণ নষ্টের চেষ্টার এমন খবর পৌঁছেছিল তাদের কানেও। তাদের দাবি, শাহজাহান সম্ভবত আঁচ করেছিলেন, আজ না-হয় কাল, মন্ত্রীর কাছ থেকে তাঁর নাম জানতে পারবেন তদন্তকারীরা। সে ক্ষেত্রে দু’জনের যোগাযোগের প্রমাণ মিলবে মোবাইলে। ঠিক যে ভাবে নিয়োগ দুর্নীতিতে ধৃত সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র ওরফে ‘কালীঘাটের কাকু’র মোবাইল থেকে তথ্যপ্রমাণ পেয়ে তা মিলিয়ে দেখতে তাঁর কণ্ঠস্বরের নমুনা নিয়ে ফরেন্সিকে পাঠিয়েছে ইডি।
তদন্তকারীদের বক্তব্য, তথ্যপ্রমাণ লোপের লক্ষ্যে নিজেদের মোবাইল নষ্ট করেছেন অনেকেই। যেমন, বাড়িতে হানার দিনে সিবিআই অফিসারদের সামনেই নিজের মোবাইল পুকুরে ছুড়ে ফেলেন মুর্শিদাবাদের বড়ঞার তৃণমূল বিধায়ক জীবনকৃষ্ণ সাহা। পরে তা উদ্ধার করা হয়। এ ক্ষেত্রে সেই চাপের মুখেই ঘনিষ্ঠদের মধ্যে জানাজানি হওয়ার ঝুঁকি জেনেও বেপরোয়া শাহজাহান মোবাইল নষ্ট করেছিলেন বলে ধারণা তাঁদের।
শনিবার অন্তরালে থেকে এক অডিয়ো ক্লিপে (যার সত্যতা আনন্দবাজার যাচাই করেনি) বার্তা দিয়েছেন শাহজাহান। ইডি সূত্রে দাবি, সেখানে তাঁর গলা শুনে মনে হয়েছে, এলাকা হাতছাড়া হওয়ার ভয় পাচ্ছেন তিনি। ইতিমধ্যেই তাঁর নামে ‘লুক আউট’ নোটিস জারি হয়েছে। প্রাথমিক ভাবে তিনি বাংলাদেশে পালিয়ে গিয়েছেন বলে খবর ছড়ালেও, রবি-সন্ধ্যা পর্যন্ত তদন্ত সংস্থা সূত্রে দাবি, তিনি এ রাজ্যেরই বাংলাদেশ-সীমান্ত ঘেঁষা কোনও এলাকায় রয়েছেন। স্থানীয় পুলিশের একাংশের ছত্রচ্ছায়ায় থাকার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিচ্ছে তারা। যদিও স্থানীয় পুলিশের বক্তব্য, শাহজাহানের খোঁজ চলছে।
রেশন দুর্নীতির কোটি কোটি টাকার এক বড় অংশ ‘চেন সিস্টেমে’ পাচার হত বলে ইডি সূত্রে দাবি। বেআইনি ভাবে রেশন সামগ্রী খোলা বাজারে বিক্রির টাকা জড়ো হত ডিলারদের একাংশের কাছে। পরের ধাপে তা গিয়ে পৌঁছত বাকিবুর রহমান, শাহজাহানদের মতো বেশ কয়েক জনের কাছে। তার পরে তা যেত আরও উপর তলায়। বাকিবুর ইতিমধ্যেই গ্রেফতার হয়েছেন। এখন এমন অনেক বাকিবুর-শাহজাহানকে খোঁজা হচ্ছে বলে ইডির দাবি।
এক ইডি কর্তার কথায়, ‘‘গ্রেফতারের পরে হাসপাতালে থাকাকালীন ১৬ ডিসেম্বর নিজের মেয়ের হাতে যে চিঠি দিয়েছিলেন জ্যোতিপ্রিয়, তা থেকেই স্পষ্ট হয়েছিল এই চেন সিস্টেমের কথা।’’ সেই চিঠি মন্ত্রী-কন্যার হাত থেকে চলে আসে ইডির হাতে। আপাতত তা মুখবন্ধ খামে জমা পড়েছে আদালতে।
এক তদন্তকারী অফিসারের বক্তব্য, টাকা তোলার মতোই শাহজাহানের প্রয়োজনীয়তা ছিল তা পাচারের ক্ষেত্রেও। ভৌগোলিক ভাবে শাহজাহানের এলাকা বাংলাদেশ সীমান্তে। তাঁর ডেরা থেকে সীমান্তের দূরত্ব ১০-১৫ কিলোমিটার। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ‘উপর মহলে’ জমা হওয়া বিপুল টাকার একটা অংশ তাই শাহজাহানের কাছেই ফিরে যেত বলে তদন্তকারীদের দাবি। তাঁর কাজ ছিল, সেই টাকা প্রতিবেশী দেশে পাচার করে দেওয়া। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশে নিজের যোগাযোগ কাজে লাগাতেন শাহজাহান। সঙ্গে গরু পাচার, সোনা পাচার ইত্যাদির ‘সুবিধা’ তো সীমান্ত-ঘেঁষা এলাকায় ছিলই।
ইডি সূত্রে দাবি, তাদের কাছে খবর ছিল, এমনই পাচার হওয়ার আগের প্রায় ৫০-৬০ কোটি টাকা শাহজাহানের বাড়িতে রয়েছে। সেই কারণেই শুক্রবার সকালে সন্দেশখালির সরবেড়িয়ায় শাহজাহানের বাড়িতে হানা দিয়েছিল তারা। ইডির এক কর্তার কথায়, ‘‘সে দিন বাড়িতে ঢুকতে পারলে, বিপুল নগদ টাকার পাশাপাশি বেআইনি অস্ত্র পাওয়ারও সম্ভাবনা ছিল। তাই আমাদের আটকাতে এত মরিয়া ছিলেন শাহজাহান। ফোন করে লোক জড়ো করে আমাদের আটকানো হয়েছে।’’ ইডি কর্তার আশঙ্কা, আগে থেকে নোটিস দিয়ে গেলে লাভ হত না। গত দু’দিনে সেই টাকা, অস্ত্র এবং অন্য নথিপত্র অন্যত্র সরিয়ে ফেলার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না তাঁরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy