Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪
ABPTA

উদ্বোধন করেন জ্যোতি বসু, সেই বাড়ি এখন জন্মদিন, বিয়েতে ভাড়া খাটাচ্ছে সিপিএমের শিক্ষক সংগঠন

ক্ষমতা থেকে চলে যাওয়ার পর বিভিন্ন জেলায় সিপিএমের ভাঁড়ারে টান পড়েছে। বহু জেলা কমিটি গাড়ি বিক্রি দিচ্ছে। অনেক জেলা কমিটি অর্থাভাবে সর্ব ক্ষণের কর্মীও নিয়োগ করতে পারছে না।

এবিপিটিএ দফতর ও অনুষ্ঠান ভাড়া দেওয়ার ব্যানার।

এবিপিটিএ দফতর ও অনুষ্ঠান ভাড়া দেওয়ার ব্যানার। —নিজস্ব চিত্র।

শোভন চক্রবর্তী
কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১০:৪৫
Share: Save:

— এটা কি এবিপিটিএ এফিস?

— হ্যাঁ! কে বলছেন?

— দাদা, আমি সল্টলেক থেকেই বলছি। সামনে আমাদের একটা অনুষ্ঠান রয়েছে। আপনাদের বাড়িটা ভাড়া পাওয়া যাবে?

— হ্যাঁ হ্যাঁ! কেন যাবে না! কী অনুষ্ঠানের জন্য চাইছেন বলুন?

— জন্মদিন। ঘরোয়া অনুষ্ঠান। শ’খানেক লোক হবে।

— হ্যাঁ হ্যাঁ। পাওয়া যাবে।

— কী রকম ভাড়া দাদা?

— জন্মদিন হলে ১০ হাজার টাকা। সেই সঙ্গে আরও এক হাজার টাকা পরিষ্কার করার জন্য। মোট ১১ হাজার।

— আচ্ছা। আপনাদের কি অ্যাডভান্স দিতে হয়?

— হ্যাঁ।

উপরের কথোপকথনটি সিপিএমের প্রাথমিক শিক্ষক সংগঠন ‘নিখিলবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি’ (এবিপিটিএ)-র রাজ্য দফতরের কর্মী অভিজিৎ দাসের সঙ্গে। সল্টলেকের ডিডি-১৮ ঠিকানার দুধসাদা প্রাসাদোপম বাড়িটির সামনেই এখন ব্যানার ঝুলছে, ‘এবিপিটিএ ভবন স্বল্পমূল্যে ভাড়া দেওয়া হয়’। এই ভবন ১৯৯৪ সালের মে মাসে উদ্বোধন করেছিলেন তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী, অধুনা প্রয়াত জ্যোতি বসু।

উদ্বোধনের পর তিন দশক অতিক্রান্ত। মাঝপথে ক্ষমতার বড় ‘পরিবর্তন’ ঘটে গিয়েছে রাজ্যে। এক-দেড় দশক আগে পর্যন্তও এই বাড়ি গমগম করত সদস্য-সমর্থক থেকে নানা প্রয়োজনে ছুটে আসা মানুষের ভিড়ে। এখন রমরম করে শুধু অনুষ্ঠানের দিনগুলিতেই। বিয়ে থেকে অন্নপ্রাশন, জন্মদিন থেকে শ্রাদ্ধ, ভাড়া দেওয়া হয় যে যে দিনে।

সল্টলেকের ডিডি ব্লকে এবিপিটিএ দফতর।

সল্টলেকের ডিডি ব্লকে এবিপিটিএ দফতর। —নিজস্ব চিত্র।

কেন ভাড়া দিতে হচ্ছে? অর্থসঙ্কট? সিপিএম ক্ষমতা থেকে চলে যাওয়ার ১০-১২ বছরের মধ্যে কী এমন পরিস্থিতি হল যে বাড়ি ভাড়া দিয়ে টাকা তুলতে হচ্ছে? এ কথা ঠিক যে, ক্ষমতা থেকে চলে যাওয়ার পর বিভিন্ন জেলায় সিপিএমের ভাঁড়ারে টান পড়েছে। বহু জেলা কমিটি গাড়ি বিক্রি করে দিয়ে খরচ সাশ্রয় করছে। অনেক জেলা কমিটি অর্থাভাবে সর্ব ক্ষণের কর্মীও নিয়োগ করতে পারছে না। সে কথা মাথায় রেখে, টাকার অভাবে বাড়ি ভাড়া দেওয়ার প্রসঙ্গ তুলতেই থামিয়ে দিলেন এবিপিটিএ সভাপতি মোহনদাস পণ্ডিত। হুগলির এই সিপিএম নেতা আনন্দবাজার অনলাইনকে বললেন, ‘‘না না, অর্থসঙ্কট আমাদের নেই। বাড়িটি সব সময় ব্যবহার হয় না। তাই স্বল্পমূল্যে ভাড়া দেওয়া হয়।’’ তাঁর আরও বক্তব্য, ‘‘সল্টলেকের অফিস পাড়ায় একটাও ভাল ‘হল’ নেই ছোটখাটো অনুষ্ঠানের জন্য। আমরা হল ভাড়া দিই। এতে আপত্তির কী আছে? সবাই কি অর্থসঙ্কট হলেই ভাড়া দেয়? আপনার যদি শান্তিনিকেতনে বাড়ি থাকে, আপনি যদি কোনও অনুষ্ঠানে ভাড়া দেন, অসুবিধা কী? আমরাও যদি ভাড়া দিই, যদি কিছু অর্থ আসে, ক্ষতি কী?’’

শান্তিনিকেতনে মাঝেমধ্যে সময় কাটানোর বাড়ির সঙ্গে তুলনা শুনেই প্রশ্ন জাগে, তবে কি ‘শূন্যতা’ ঢাকতেই এই ব্যবস্থা? বাড়ি যাতে অব্যবহৃত অবস্থায় ‘অথর্ব’ হয়ে না-পড়ে, সেই জন্যই কি লোকসমাগমের ব্যবস্থা? বাড়িও বাঁচল, কিছু আয়ও হল, রক্ষণাবেক্ষণের খরচটাও উঠে গেল? প্রশ্নের ইঙ্গিত বুঝে আবার দ্বিমত পোষণ করলেন সংগঠনের সভাপতি। মোহনদাসের দাবি, এখনও তাঁদের সদস্যসংখ্যা এক লক্ষ পাঁচ হাজার। তিনি আরও বলেন, ‘‘এখনও শিক্ষিত অংশে আমাদেরই নিয়ন্ত্রণ আছে। বর্তমান শাসকদলের সংগঠন কেবল চোখ রাঙিয়ে টিকে রয়েছে।’’

মোহনদাস যখন আনন্দবাজার অনলাইনের সঙ্গে কথা বলছিলেন, তখন তিনি ছিলেন সংগঠনের প্রতিষ্ঠা দিবসের পদযাত্রায়। শুক্রবার এবিপিটিএ-র ৯০তম প্রতিষ্ঠা দিবস গেল। ১৯৩৫ সালে এই সংগঠন যাঁরা প্রতিষ্ঠা করেন তাঁদের মধ্যে ছিলেন আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায়। তখন সিপিএমের জন্ম হয়নি। পরবর্তী কালে নানা পথ ঘুরে এবিপিটিএতে সিপিএমের প্রভাব নিরঙ্কুশ হয়। সেই প্রভাব এখনও রয়েছে। কিন্তু সেই প্রতিপত্তি রয়েছে কি? সংগঠনে যে অর্থসঙ্কট নেই, তা কিছুটা শ্লাঘা নিয়ে বোঝাতে গিয়ে সংগঠনের সভাপতি বললেন, ‘‘এই তো আজকেই আমাদের কলেজ স্ট্রিটের দফতরে তিনটি নতুন কক্ষ উদ্বোধন হবে।’’ একই সঙ্গে জানান, সল্টলেকের যে-বাড়ি ভাড়া দেওয়া নিয়ে তাঁকে প্রশ্ন করা, সেই বাড়িটিরও ‘শ্রীবৃদ্ধি’ হবে। তিন তলা বাড়ি হবে পাঁচ তলা। সেই কারণে কিছু দিনের জন্য ভাড়া দেওয়াও বন্ধ রাখা হবে।

বাড়ি সামলানোর দায়িত্বে থাকা অভিজিতের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে জানা গেল, এখন ওখানে রান্না করার কোনও সুবন্দোবস্ত নেই। কেটারারকে দিয়ে বাইরে রান্না করিয়ে নিয়ে গেলেই ভাল। যদিও বাড়িটির নীচের অংশে ক্যান্টিন চালায় একটি সংস্থা। তাদের থেকে ভাড়া নিয়ে রান্না করানো গেলেও যেতে পারে। জানা গেল— জন্মদিন, বিয়ে, শ্রাদ্ধ ইত্যাদি অনুষ্ঠানের জন্য এখন ভাড়া ১০ হাজার টাকা। এবং এক হাজার টাকা দিতে হয় পরিষ্কার করানোর জন্য। তবে মিটিং বা সেমিনারের জন্য ভাড়া পাঁচ হাজার টাকা। সংস্কারের পর কি অনুষ্ঠানবাড়িতে রান্না করানোর মতো জায়গা মিলবে? ভাড়া এক ধাপে খানিক বেড়ে যাবে না কি? এ সব উত্তর অবশ্য এখনও নেই।

অন্য বিষয়গুলি:

ABPTA CPM Salt Lake
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy