Advertisement
E-Paper

‘পুলিশকে কাজ করতে না দিলে কী করা যাবে’! তবু ওসিকে ডেকে আস্থা প্রকাশ বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের

পিএফ দুর্নীতি মামলায় বিচারপতি জানান, পুলিশ এফআইআর দায়ের করেছে। তাই তিনি আর কিছু করবেন না। তিনি সব সময় পুলিশের উপর আস্থা রাখেন। কিন্তু তাদের কাজ করতে দেওয়া হয় না।

image of Justice Abhijit Gangopadhyay

বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। — ফাইল চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৭:৩০
Share
Save

পুলিশের উপর তাঁর আস্থা রয়েছে যথেষ্ট। আলাদা করে কোনও অভিযোগ নেই। কিন্তু পুলিশকে কাজ করতে দেওয়া হয় না। পিএফ দুর্নীতি মামলায় এই কথাই জানালেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। হেয়ার স্ট্রিট থানার ওসিকে আধ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে হাজিরা দিতে বলেছিলেন তিনি। পুলিশের তরফে জানানো হয়, দেরিতে হাজিরার কথা জানতে পারায় দেরি হয়েছে। তাতে বিচারপতি জানিয়েছেন, এফআইআর দায়ের হয়ে গিয়েছে বলে হাজিরা থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন তিনি।

পিএফ দুর্নীতি মামলায় এফআইআর দায়ের হচ্ছিল না বলে অভিযোগ ওঠে। এর পরেই হেয়ার স্ট্রিট থানার ওসিকে আধ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে হাজিরা দিতে বলেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। তাঁর নির্দেশের পর এফআইআর দায়ের হয়। এর পর আদালতে হাজিরা দেন হেয়ার স্ট্রিট থানার ওসি সুমিত দাশগুপ্ত। পাশাপাশি, কলকাতা পুলিশের আইন বিভাগের অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার অফ পুলিশের আধিকারিকও এজলাসে উপস্থিত হন। পুলিশের আইনজীবী অর্ক নাগের সওয়াল, ‘‘আমরা সাড়ে ৩টের সময় হাজিরার কথা জানতে পেরেছি। তাই আসতে দেরি হয়ে গেল।’’ বিচারপতির গলায় তখন শোনা গিয়েছে নরম সুর। তিনি বলেন, ‘‘ঠিক আছে। আমি জানতে পারলাম এফআইআর দায়ের হয়ে গিয়েছে। তাই আমি হাজিরা থেকে অব্যাহতি দিয়েছি।’’

এর পরেই ওসির উদ্দেশে বিচারপতি বলেন, ‘‘আপনারা ঠিক করে কাজ না করলে কী হবে বুঝতে পারেন? আমরা সকলে গরিব মানুষ। আমাদের সকলের ১০ তলা বাড়ি নেই। এই মামলার নকল ডিরেক্টরেরা মাটির বাড়িতে থাকেন। দুই সংস্থার প্রায় ২০ কোটি টাকার পিএফ বকেয়া রয়েছে। তাই শক্ত হাতে মোকাবিলা করতে হবে।’’ বিচারপতি আরও বলেন, ‘‘কেন আমি এফআইআর দায়ের করতে বলেছি আপনি বুঝলেন? আপনার বিরুদ্ধে দুটো অভিযোগ এসেছে তাই হাজিরা দিতে বলেছি।’’ এর পরেই বিচারপতি বলেন, ‘‘এখন আপনারা এফআইআর দায়ের করে দিয়েছেন, আমি আর কিছু করব না। আমি সব সময় পুলিশের উপর আস্থা রাখি। পুলিশকে কাজ করতে দেওয়া হলে সাধারণ মানুষ উপকৃত হন।’’

বিচারপতি সব দোষ পুলিশের উপর চাপাতে চাননি। জানিয়েছেন, ‘রাজনৈতিক ব্যক্তিরা’ জড়িত থাকলে পুলিশ কাজ করতে পারে না। তাঁর কথায়, ‘‘অনেক সমস্যা রয়েছে যেখানে, পুলিশ তিন দিনে সমাধান করে। কোনও বিষয়ে রাজনৈতিক ব্যক্তিরা যুক্ত থাকলে পুলিশ কাজ করতে পারে না। তাই সে সব কাজ হয় না।’’ এর পর হেয়ার স্ট্রিট থানার ওসির প্রশংসা করেন বিচারপতি। তিনি বলেন, ‘‘আপনি কাজ করেছেন, আমি খুশি। আপনার পদোন্নতি হয়েছে। খুব ভাল করে কাজ করুন।’’ বিচারপতি এও জানান, পুলিশের বিরুদ্ধে আলাদা করে তাঁর কোনও অভিযোগ নেই। তাঁর কথায়, ‘‘পুলিশকে কাজ করতে না দিলে কী আর করা যাবে? আমি যখনই সিবিআই নির্দেশ দিই, সঙ্গে লিখে দিই পুলিশের উপর আমার আস্থা ভরসা রয়েছে। কিন্তু তাদের কাজ করতে দেওয়া হয় না।’’ এর পর ওসিকে চলে যেতে বলেন বিচারপতি।

ডেল্টা লিমিটেড এবং ওলিসা রিয়্যালিটি প্রাইভেট লিমিটেড নামক দুই সংস্থার বিরুদ্ধে কয়েক জন অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারী আদালতে মামলা করেছেন। তাঁদের অভিযোগ, সংস্থার তরফে তাঁদের প্রাপ্য প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা দেওয়া হচ্ছে না। ওই মামলাতেই দুই সংস্থার পাঁচ জন ডিরেক্টরকে তলব করেছিলেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। সিরিয়াস ফ্রড ইনভেস্টিগেশন অফিস (এসএফআইও)-কে তিনি নির্দেশ দিয়েছিলেন পাঁচ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করার। এসএফআইও-র আইনজীবী সৌভিক নন্দী শুক্রবার আদালতে জানান, শুক্রবার দুপুর ২টোয় হেয়ার স্ট্রিট থানায় গিয়েছিলেন তাদের আধিকারিকেরা। থানায় অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশনামার কপি এবং ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতির পরে এফআইআর দায়ের করার বিষয়টি বিবেচনা করা হবে। এর পরেই ওই থানার ওসিকে তলব করেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। তিনি এসে হাজিরা দেন।

Justice Abhijit Gangopadhyay Calcutta High Court PF

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}