নির্বাচনী প্রচারে বিজেপি নেতা সিদ্ধার্থনাথ সিংহ। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক।
ভোট হচ্ছে পুরসভার। কিন্তু প্রচারে তরজা হচ্ছে লোকসভার এক সাংসদের ডিগ্রি জাল কি না, তা নিয়ে!
বিজেপি-র কেন্দ্রীয় সম্পাদক তথা রাজ্যে দলের পর্যবেক্ষক সিদ্ধার্থনাথ সিংহ রবিবার অভিযোগ করেছিলেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাইপো সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের এমবিএ ডিগ্রি জাল। ওই অভিযোগের সমর্থনে সোমবার দু’টি নথি দেন সিদ্ধার্থনাথ। একটি নির্বাচন কমিশনে অভিষেকের জমা দেওয়া হলফনামা। অন্যটি ২০১৪ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর দিল্লি হাইকোর্টের দেওয়া নির্দেশ। হলফনামায় অভিষেক জানিয়েছেন, তিনি ২০০৯ সালে দিল্লির ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ প্ল্যানিং অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট (আইআইপিএম) থেকে এমবিএ করেছেন। আর দিল্লি হাইকোর্টের নির্দেশে দেখা যাচ্ছে, আইআইপিএমের ডিগ্রি দেওয়ার অধিকার নেই এবং তারা তা দেয়ও না বলে আদালতকে জানিয়েছিলেন ওই সংস্থার আইনজীবী। এই প্রেক্ষিতে এ দিন কলকাতা পুরসভার ৬৯ নম্বর ওয়ার্ডে সিদ্ধার্থনাথ বলেন, ‘‘গত কাল আমি বলেছিলাম, তৃণমূলের যুবরাজের এমবিএ ডিগ্রিটি ভুয়ো। উনি বলেছেন, আমি নাকি মিথ্যে বলেছি। কিন্তু যে প্রতিষ্ঠান থেকে তিনি এমবিএ করেছেন, তাদের ডিগ্রি দেওয়ার অধিকার নেই বলে দিল্লি হাইকোর্ট জানিয়েছে।’’ সিদ্ধার্থনাথের হঁশিয়ারি, ‘‘নির্বাচন কমিশনে মিথ্যে তথ্য দেওয়ায় ডায়মন্ড হারবারের সাংসদের পদ খোয়া যেতে পারে।’’ মিথ্যে বলে রাজনীতি না করে তৃণমূলকে রাজনৈতিক ভাবে লড়াই করার পরামর্শ দিয়ে সিদ্ধার্থনাথ বলেন, ‘‘আমার শরীরে লালবাহাদুর শাস্ত্রীর রক্ত আছে। আমি মিথ্যে বলে রাজনীতি করি না।’’
অভিষেক অবশ্য সিদ্ধার্থনাথের অভিযোগকে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছেন না। তাঁর বক্তব্য, ‘‘১৯৯৯ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত কেন্দ্রে বিজেপির সরকার ছিল। তখন তারা এই অভিযোগ সম্পর্কে ব্যবস্থা নেয়নি কেন?’’ তাঁর চ্যালেঞ্জ, ‘‘প্রমাণ থাকলে ওরা ব্যবস্থা নিক! কথা কম বলে কাজটা বেশি করুক!’’ অভিষেকের ঘনিষ্ঠমহলের যুক্তি, আইআইপিএম সংক্রান্ত আদালতের রায় বেরিয়েছে ২০১৪ সালে। আর তিনি ওই সংস্থা থেকে এমবিএ ডিগ্রি পেয়েছেন ২০০৯ সালে। সুতরাং, তাঁর ক্ষেত্রে ওই রায় প্রযোজ্য নয়।
পুরভোটে ডিগ্রি-তরজা কেন? রাজনৈতিক শিবিরের একাংশের বক্তব্য, সিদ্ধার্থনাথরা যদি কলকাতার তৃণমূল পুরবোর্ডের নাগরিক পরিষেবায় ব্যর্থতা বা ত্রিফলা কেলেঙ্কারিকে প্রচারে বেশি গুরুত্ব দিতেন, তা হলে তা অনেক বেশি প্রাসঙ্গিক হত।
এই ভোটে অভিষেক বা তাঁর পিসিকে পরাজিত করার সুযোগ নেই। তা হলে কেন বিজেপি নেতৃত্ব ওই দু’জনের বিরুদ্ধে তথ্য জোগাড়ে এত সময় ব্যয় করছেন? সিদ্ধার্থনাথের জবাব, ‘‘এটা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে জিজ্ঞাসা করতে হবে। তিনি কেন পুরভোটের প্রচারে কেবল সিবিআই-সিবিআই আর মোদী-মোদী করছেন?’’ সিদ্ধার্থনাথের আরও ব্যাখ্যা, ‘‘আমি তৃণমূলের জালিয়াতির নানা উদাহরণ দিয়েছি। সে প্রসঙ্গেই বলেছি, মুখ্যমন্ত্রীর ডক্টরেট ডিগ্রি জাল ছিল। সে প্রসঙ্গেই অভিষেকের ভুয়ো ডিগ্রির কথাও উঠেছে। এ হেন জালিয়াতিতে দক্ষ দলকে ভোট দেওয়া ঠিক হবে না, এটাই প্রচারে বলেছি।’’ তৃণমূল জালিয়াতিতে ব্যস্ত থাকায় নাগরিক পরিষেবা দিতে পারেনি— এমন অভিযোগও করেন সিদ্ধার্থনাথ। আর অভিষেক বলেন, ‘‘সংবাদমাধ্যমে ভেসে থাকতে চান বলেই ওই বিজেপি নেতা পুরভোটের ময়দানে এ সব বলছেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy