Advertisement
০৭ অক্টোবর ২০২৪
আজ বেলপাহাড়িতে অভিষেক-শুভেন্দু

জঙ্গলমহলে যুবরাজের সভায় ভাবনা দুর্যোগ

জঙ্গলমহলে যুবরাজের অভিষেক-সভা ঘিরে আশঙ্কার মেঘ! আজ, শুক্রবার যুব তৃণমূলের ডাকে বেলপাহাড়ি থানার সাকার্স মাঠে একসঙ্গে সভা করবেন সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ও শুভেন্দু অধিকারী। জঙ্গলমহলে এক সময়ের মাওবাদী ধাত্রীভূমি বেলপাহাড়িতে এটিই যুবরাজের প্রথম সভা।

বেলপাহাড়ির রাস্তায় তোরণ। দেবরাজ ঘোষের তোলা ছবি।

বেলপাহাড়ির রাস্তায় তোরণ। দেবরাজ ঘোষের তোলা ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বেলপাহাড়ি শেষ আপডেট: ১৭ জুলাই ২০১৫ ০২:০১
Share: Save:

জঙ্গলমহলে যুবরাজের অভিষেক-সভা ঘিরে আশঙ্কার মেঘ!

আজ, শুক্রবার যুব তৃণমূলের ডাকে বেলপাহাড়ি থানার সাকার্স মাঠে একসঙ্গে সভা করবেন সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ও শুভেন্দু অধিকারী। জঙ্গলমহলে এক সময়ের মাওবাদী ধাত্রীভূমি বেলপাহাড়িতে এটিই যুবরাজের প্রথম সভা। সেইসঙ্গে দীর্ঘদিন পর জঙ্গলমহলে দলীয় সভায় আসছেন শুভেন্দুও। দুই সাংসদের সভা ঘিরে অভূতপূর্ব পুলিশি নিরাপত্তার আয়োজন করা হচ্ছে আজ। কিন্তু পুলিশ ও শাসক দলের নেতাদের রক্তচাপ বাড়িয়ে তুলেছে বৃষ্টি। বুধবার রাতে দমকা হাওয়ার সঙ্গে নাগাড়ে বৃষ্টিতে মঞ্চ লাগোয়া বাঁশ-ত্রিপলের ছাউনির একাংশ হুড়মুড় করে ভেঙে পড়েছিল। বৃহস্পতিবার বেলপাহাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, মঞ্চ তৈরির কাজ চলেছে জোর কদমে।

বেলপাহাড়িতে মুখ্যমন্ত্রী ইতিপূর্বে ব্লক অফিস লাগোয়া ময়দানে সভা করেছেন। কিন্তু বিশেষ নিরাপত্তার কারণে অভিষেক-শুভেন্দুর সভাস্থলের জন্য থানার পশ্চিম দিকের প্রাচীর ঘেঁষা সাকার্স মাঠটিকেই বেছে নেওয়া হয়েছে। তৃণমূল সূত্রের খবর, মঞ্চের একাংশ ভেঙে পড়ায় মাঠের পাঁচ হাজার বর্গ ফুট এলাকাকে সভাস্থলের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে। ৫৪০ বর্গ ফুটের মঞ্চে অভিষেক ও শুভেন্দু-সহ রাজ্য ও জেলাস্তরের ৩০ জন শীর্ষ নেতা-নেত্রী বসবেন। স্থানীয় কোনও নেতা-কর্মী অবশ্য মঞ্চে উঠতে পারবেন না। পুব মুখো মঞ্চটির সামনে প্রায় ন’শো বর্গ ফুট ফাঁকা জায়গাটির চারপাশ হলুদ-সবুজ রঙের গ্রিলের রেলিং দিয়ে ঘিরে দেওয়া হয়েছে। ওই ফাঁকা জায়গাটি হল ‘ডি’-জোন। মঞ্চের নিচে ডি জোনের মধ্যে একশোটি চেয়ারে জেলার বিভিন্ন ব্লকের নেতা-নেত্রী এবং সংবাদমাধ্যমের লোকজনের বসার জায়গা করা হয়েছে। রেলিংয়ের অপর প্রান্তে সভায় আসা লোকজনের জন্য সাড়ে তিন হাজার বর্গ ফুটের ত্রিপল-পলিথিনের ছাউনি দেওয়া বসার জায়গা করা হয়েছে।

জানা গেল, বেলপাহাড়ি ব্লকের দশটি অঞ্চলের প্রতিটি বুথ থেকে লোকজন নিয়ে আসার উদ্যোগ নিয়েছেন দলীয় কর্মীরা। এ ছাড়াও ঝাড়গ্রাম, জামবনি, গোপীবল্লভপুর-২ এর মতো কয়েকটি ব্লক থেকেও লোকজন নিয়ে আসার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। বেলপাহাড়ি পঞ্চায়েত সমিতির তৃণমূল সভাপতি বংশীবদন মাহাতোর দাবি, কেবল বেলপাহাড়ি ব্লক থেকেই দশ হাজার লোক আসবেন। কিন্তু, অভিজ্ঞ মণ্ডপ শিল্পীরা জানাচ্ছেন, সাড়ে তিন হাজার বর্গ ফুট ম্যারাপ বাঁধা জায়গায় মেরে কেটে এক হাজার জন বসতে পারেন। বৃষ্টি হলে বাকিদের ভিজতে হবে।

বংশীবদনবাবুর সাফাই, “বুধবার রাতে বৃষ্টির সঙ্গে ঝড়ো হাওয়াই তো সব পণ্ড করে দিয়েছে। নতুন করে তাড়াতাড়ি সব কিছু করতে হচ্ছে।” স্থানীয় তৃণমূল কর্মীরা আড়ালে স্বীকার করছেন, সভা চলাকালীন বৃষ্টি হলে আশেপাশের লোকজন মাথা বাঁচাতে যদি ম্যারাপের তলায় ঢোকেন, তাহলে বড় রকমের বিশৃঙ্খলার আশঙ্কা রয়েছে। জেলা তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতি নির্মল ঘোষ বলেন, “লোকজনের বসার জায়গায় যতটা বেশি সম্ভব পলিথিনের ম্যারাপ দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।’’

সভা চলাকালীন সভাস্থল ও আশেপাশের এলাকায় এক জন অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে ১৮ জন ডিএসপি, ৩০ জন অফিসার ও ১,২০০ জন সশস্ত্র পুলিশ কর্মী মোতায়েন থাকবেন। ঝাড়গ্রাম থেকে বেলপাহাড়ি যাওয়ার রাস্তায় সশস্ত্র পুলিশের পাশাপাশি, দু’হাজার সিভিক ভলান্টিয়ারও থাকবেন। জঙ্গল লাগোয়া এলাকাগুলিতে কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানরা টহল দেবেন।

বৃহস্পতিবার দুপুরে তৃণমূলের জেলা পরিষদ সদস্য বিকাশ সিংহ, দলের প্রবীণ উপদেষ্টা সিদ্ধেশ্বর পাইন-রা ঠায় দাঁড়িয়ে থেকে মঞ্চ-প্রস্তুতির নজরদারি চালাচ্ছিলেন। সিদ্ধেশ্বরবাবু বলেন, “যেভাবে মাঝে মাঝেই নাগাড়ে বৃষ্টির সঙ্গে দমকা হাওয়া বইছে। তাতে চিন্তা হচ্ছে বৈকি।” বেলপাহাড়ি পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি বংশীবদন মাহাতো জানালেন, সভা প্রাঙ্গণ ঘিরে বেশ কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা করেছে পুলিশ। সভা চলাকালীন যে সব দলীয় স্বেচ্ছাসেবক মঞ্চের আশে পাশে থাকবেন তাঁদের নামের তালিকা ও বিস্তারিত তথ্য আগেই পুলিশের কাছে জমা দিতে হয়েছে। এর আগে বেলপাহাড়িতে মুখ্যমন্ত্রীর সভা মঞ্চের চারপাশে বাঁশের ব্যারিকেড করা হয়েছিল। এবার নিরাপত্তার কারণে দুই সাংসদের মঞ্চের চারপাশে লোহার রেলিং দেওয়া হয়েছে।

এ দিন দহিজুড়ি থেকে বেলপাহাড়ি যাওয়ার রাস্তায় ২১ জুলাইয়ের ধর্মতলা সমাবেশের সমর্থনে অভিষেক-শুভেন্দুর ছবি দেওয়া একাধিক তোরণ চোখে পড়ল। কিন্তু এখন মাঠে ধান রোয়ার কাজ চলছে। শুক্রবারই আবার রমজান মাসের শেষ জুম্মা বার। তার উপর রোদ-বৃষ্টির লুকোচুরির অনুসঙ্গে ভিলেন হয়ে দাঁড়াচ্ছে দমকা হাওয়ার সঙ্গে ঝেঁপে ধেয়ে আসা আচমকা বৃষ্টি। সব মিলিয়ে সভায় জমায়েতের চিত্রটা কী হয়, সেদিকেই তাকিয়ে রাজনৈতিক মহল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE