সিজিও কমপ্লেক্স থেকে বেরিয়ে আসার পর অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। —নিজস্ব চিত্র।
ঠিক এক ঘণ্টা আগে ঢুকেছিলেন ইডি দফতরে। বৃহস্পতিবার সকাল ১১টা ৫ মিনিটে তাঁর কালো রঙের গাড়ি প্রবেশ করে সিজিও চত্বরে। আর ১২টা বেজে ৬ মিনিটে দেখা গেল সাদা শার্ট আর কালো ট্রাউজার পরা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় হাঁটতে হাঁটতে বেরিয়ে আসছেন সিজিও কমপ্লেক্সের গেট পেরিয়ে।
সবে এক ঘণ্টা পেরিয়েছে। এর আগে কখনও ইডি বা সিবিআইয়ের সমন পেয়ে তাদের দফতরে ঢোকার পর এক ঘণ্টার মধ্যে বাইরে আসেননি অভিষেক। আগের বার অভিষেককে টানা ৯ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল ইডি। তার আগেও কখনও ৬ ঘণ্টা, কখনও বা ৮ ঘণ্টা কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার জেরার মুখোমুখি হয়েছেন তিনি। সিজিওর বাইরে অপেক্ষারত নিরাপত্তারক্ষী এবং সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিরা তাই ভাবতেই পারেননি এমন হতে পারে। আচমকাই অভিষেককে ওই ভাবে হেঁটে বাইরে বেরোতে দেখে ছুটে যান তাঁরা। জানতে চান, তবে কি জেরা এর মধ্যেই শেষ হয়ে গেল! জবাবে অভিষেক বলেন, ‘‘ওঁরা তথ্য চেয়েছিলেন। আমি ওঁদের ৬০০০ পাতার নথিপত্র জমা দিয়ে এসেছি। ওঁরা বলেছেন, এত নথি দেখতে সময় লাগবে। দরকার পড়লে আপনাকে আবার ডেকে পাঠাব।’’ অর্থাৎ, আপাতত অভিষেককে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে না বৃহস্পতিবার। ফলে এক ঘণ্টার মধ্যে সিজিও দফতরের কাজ মিটেছে তাঁর।
তবে এর পরেই অভিষেকের সংযোজন, ‘‘আমি তদন্তে বরাবর সহযোগিতা করেছি। চাইলে আদালতের নির্দেশ মোতাবেক নথি পাঠিয়ে দিয়ে দায় সারতে পারতাম। কিন্তু আমার লুকোনোর কিছু নেই। ওরা মাত্র দু’দিন আগে আমাকে নোটিস পাঠিয়ে নথি নিয়ে সশরীরে হাজির হতে বলেছিল। তাই আমি আজ নথি নিয়ে এসেছিলাম। ভবিষ্যতেও যত বার ডাকবে, তত বার আসব।’’
বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার সময় অভিষেককে আসতে বলা হয়েছিল সল্টলেকের সিজিও কমপ্লেক্সে। যদিও তার অনেক আগে বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই সিজিও চত্বরকে মুড়ে ফেলা হয় কড়া নিরাপত্তার চাদরে। ১০টা ৪০ মিনিট নাগাদ নিজের বাড়ি থেকে বার হন অভিষেক। অভিষেকের পরনে ছিল সাদা রঙের শার্ট। বাড়ি থেকে বেরোনোর সময় উপস্থিত জনতাকে লক্ষ্য করে হাতও নাড়েন তিনি। ঠিক ১১টা বেজে ৫ মিনিটে তিনি পৌঁছে যান ইডি দফতরে। আর বেরিয়ে আসেন তার এক ঘণ্টার মাথায়।
গত ১০ অক্টোবর কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশে ইডির কাছে তাদের চাওয়া সমস্ত নথি জমা দিয়েছিলেন অভিষেক। অভিষেকের স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির হিসাব ছাড়াও বিদেশ সফরের বিস্তারিত তথ্য চাওয়া হয়েছিল ইডির তরফে। চাওয়া হয়েছিল তাঁর নামে থাকা সংস্থার কিছু নথিও।
প্রসঙ্গত, ঠিক দু’মাস আগেই ইডির তলব পেয়ে সিজিও দফতরে এসেছিলেন অভিষেক। গত ১৩ সেপ্টেম্বর নিয়োগ দুর্নীতির মামলায় তলব করা হয়েছিল তাঁকে। সে দিন টানা ৯ ঘণ্টা অভিষেককে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল ইডি। তবে তার পর থেকে আরও দু’বার তলব করা হয়েছে তৃণমূল সাংসদকে। গত ৩ অক্টোবর এবং ৯ অক্টোবর অভিষেককে সিজিও দফতরে হাজিরা দেওয়ার জন্য চিঠি দেওয়া হয় ইডির তরফে। অভিষেক অবশ্য দু’দিনই সিজিওতে যাননি। যদিও বৃহস্পতিবার অভিষেক যে ইডির দফতরে যাবেন, তার স্পষ্ট ইঙ্গিত বুধবারই মিলেছিল তৃণমূলের তরফে।
৩ অক্টোবর দিল্লিতে তৃণমূলের ১০০ দিনের কাজের টাকা আদায় সংক্রান্ত ধর্না কর্মসূচি ছিল। অভিষেক চিঠি লিখে জানিয়ে দেন, তিনি ইডির দফতরে যাবেন না। পরে ৯ অক্টোবর তাঁকে আবার ইডি তলব করলে তিনি পাল্টা কলকাতা হাই কোর্টের দ্বারস্থ হন। হাই কোর্ট সেই আবেদনের শুনানিতে জানিয়ে দিয়েছিল, অভিষেক আগে ইডির চাওয়া নথি জমা দেবেন। সেই নথিতে সন্তুষ্ট না হলে তবেই ইডি তাঁকে ডেকে পাঠাতে পারে।
গত ১০ অক্টোবর আদালতের নির্দেশে নিজের সম্পত্তির খতিয়ান ইডিকে দেন অভিষেক। তার পর পুজো পর্ব মিটতেই আবার ইডির তলব আসে অভিষেকের কাছে। তৃণমূলের তরফেও জানিয়ে দেওয়া হয় অভিষেক সিজিওতে যাবেন।
গত ছ’মাসে নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় এই নিয়ে ষষ্ঠ বার তলব করা হয়েছে অভিষেককে। এর মধ্যে এক বার সিবিআই এবং পাঁচ বার ইডি। ২০ মে-র পর ১৩ জুন ডাকা হয়েছিল অভিষেককে। কিন্তু ‘নবজোয়ার যাত্রা’ এবং পঞ্চায়েত ভোটের ব্যস্ততার কারণ দেখিয়ে সে দিন তিনি যাননি। আবার এ-ও ঠিক যে, তার আগে কর্মসূচি থামিয়ে বাঁকুড়া থেকে কলকাতায় ফিরে ২০ মে হাজিরা দিয়েছিলেন তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy