কোনও ভাবেই তিনি যোগ্যদের চাকরি যেতে দেবেন না বলে বার্তা দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার নেতাজি ইন্ডোরে মুখ্যমন্ত্রীর সেই আশ্বাসের পরেই এ বার চাকরি বাতিলের বিষয়টি নিয়ে চলতি সপ্তাহেই পথে নামতে চলেছে শাসকদল তৃণমূল। তাদের অভিযোগ, বিজেপি এবং সিপিএমের ষড়যন্ত্রেই প্রায় ২৬ হাজার জনের চাকরি বাতিল হয়েছে।
সোমবার তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী একটি বিবৃতিতে জানিয়েছেন, আগামী ৯ এপ্রিল বুধবার দলের ছাত্র-যুবরা কলকাতায় একটি প্রতিবাদ মিছিল করবেন। দুপুর ৩টেয় কলেজ স্কোয়্যার থেকে ধর্মতলা পর্যন্ত সেই মিছিল হবে। এর পর ১১ এপ্রিল শুক্রবার প্রতিবাদ মিছিল হবে জেলায় জেলায়। জেলার প্রতিটি ব্লক, ওয়ার্ড এবং টাউনে সেই মিছিল সংঘটিত হবে।
বিরোধীরা যদিও প্রত্যাশিত ভাবে চাকরিহারাদের দুর্দশার জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা, তাঁর সরকার এবং তাঁর দল তৃণমূলকেই দায়ী করেছেন। তাঁদের বক্তব্য, টাকা নিয়ে চাকরি দেওয়া, ওএমআর শিট নষ্ট তাঁর সরকারই করেছে। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর দাবি, কে যোগ্য, কে অযোগ্য, তা রাজ্য সরকার জানে। মুখ্যমন্ত্রীকে তাঁর কটাক্ষপূর্ণ পরামর্শ, ‘‘আপনিই সেই তালিকা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে যান। আপনি তো আইনজীবী বলেন নিজেকে। তা হলে আপনিই যোগ্যদের হয়ে সুপ্রিম কোর্টে সওয়াল করুন।’’ মমতাকে বিঁধেছেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিমও। তাঁর বক্তব্য, মুখ্যমন্ত্রী এখন ‘সাধু’ সাজার চেষ্টা করছেন।
প্রসঙ্গত, নেতাজি ইন্ডোরের সভা থেকে চাকরিহারাদের পাশে দাঁড়ানোর আশ্বাস দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেছেন, ‘‘আদালতের রায়ে আমার হৃদয় পাথর হয়ে যাচ্ছে। আমি লাল-নীল-গেরুয়া কোনও রং দেখব না। তাতে আমাকে ওরা জেলে ভরলে ভরুক। আমরা সব সময় চাই, কোনও যোগ্য ব্যক্তির চাকরি যেন না-যায়।’’ যোগ্যদের কারও চাকরি কেড়ে নিতে দেবেন না, চ্যালেঞ্জ করে জানান মমতা। তাঁর কথায়, ‘‘শিক্ষাব্যবস্থাকে ভেঙে দেওয়ার জন্য চক্রান্ত চলছে। আমি বেঁচে থাকতে যোগ্যদের চাকরি কেড়ে নিতে দেব না। এটা আমার চ্যালেঞ্জ।’’
যোগ্যদের জন্য বিকল্প বন্দোবস্তের কথা বলতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘যাঁরা যোগ্য, তাঁদের চাকরি নিশ্চিত করার দায়িত্ব সরকারের। আমাদের কোনও রাখঢাক নেই। আইন অনুযায়ীই যা করার করব। পথের মধ্যে থেকেই পথ খুঁজে নিতে হবে।’’ কিন্তু বিকল্প কী ব্যবস্থা করবেন, তা এখনই খোলসা করতে চাননি মমতা। জানিয়েছেন, আগে রাজ্য সরকার সুপ্রিম কোর্টে এই সংক্রান্ত আবেদন জানাবে। রায়ের ব্যাখ্যা চাওয়া হবে শীর্ষ আদালতের থেকে। সেখানে সুরাহা না-মিললে বিকল্পের পথে হাঁটবে সরকার। মমতা বলেন, ‘‘আদালতের কাছে আমরা ব্যাখ্যা চাইব। নতুন করে পরীক্ষা নেওয়ার আগে আমাদের জানতে হবে, যাঁরা স্কুলে পড়াতেন, তাঁদের জন্য আদালতের ব্যাখ্যা কী। স্কুল কে চালাবেন? বাকি কাজ কে চালাবেন? কাউকে না খাইয়ে মারার অধিকার তো কারও নেই। চাকরি দিতে পারবেন না, আমার অনুরোধ তাঁরা যেন চাকরি কেড়ে না নেন। তার পর শিক্ষা দফতর যা করার করবে।’’