২০২৩ সালের পঞ্চায়েত ভোটের প্রস্তুতির সময় থেকেই অভিষেক বলে আসছেন, পঞ্চায়েত ভোটে তিনি কোনও ‘অস্বচ্ছতা’ রাখতে চান না। ছবি: পিটিআই।
পঞ্চায়েত ভোটমুখী দলীয় বৈঠকে তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে তিরস্কৃত হলেন কোচবিহারের দুই প্রথমসারির নেতা উদয়ন গুহ এবং রবীন্দ্রনাথ ঘোষ। দু’জনেই হাজির ছিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডাকা ভার্চুয়াল বৈঠকে। যে বৈঠকে ছিলেন তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সীও। সোমবারের বৈঠকে মন্ত্রী উদয়ন এবং কোচবিহার পুরসভার চেয়ারম্যান রবীন্দ্রনাথ— দু’জনকেই সতর্ক করে অভিষেক জানিয়ে দেন, সবাই মিলে এক সঙ্গে সংগঠনের কাজ করতে হবে। এমন কোনও মন্তব্য করা যাবে না, যা থেকে বিতর্ক তৈরি হতে পারে বা দল সমস্যায় পড়তে পারে।
একদা পরস্পরের ঘনিষ্ঠ কোচবিহারের দুই তৃণমূল নেতা উদয়ন এবং রবীন্দ্রনাথের গত কয়েক বছরের রাজনৈতিক বিরোধ এখন সর্বজনবিদিত। তার জেরে বহুবার অস্বস্তিতেও পড়তে হয়েছে দলকে। আবার সম্প্রতি বেশ কয়েকটি ঘটনায় আলাদা আলাদা ভাবেও বিতর্কে জড়িয়েছেন দুই নেতা। কিন্তু পঞ্চায়েত ভোটের আগে দল যে এসব গণ্ডগোল মেনে নেবে না, তা স্পষ্ট বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে দুই নেতাকেই। তৃণমূল সূত্রের খবর, সোমবারের দলীয় বৈঠকে এই সব কিছু নিয়েই দুই নেতাকে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন অভিষেক। একদিকে যেমন ‘এক সঙ্গে এক যোগে’ কাজ করার কথা বলে অন্তর্দ্বন্দ্বের বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছে দুই নেতাকে, তেমনই পঞ্চায়েত ভোটের মুখে কোনও বিতর্কিত মন্তব্যে যাতে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন না হয়, তা-ও মনে করিয়ে দেওয়া হয়েছে।
২০২৩ সালের পঞ্চায়েত ভোটের প্রস্তুতির সময় থেকেই অভিষেক বলে আসছেন, পঞ্চায়েত ভোটে তিনি কোনও ‘অস্বচ্ছতা’ রাখতে চান না। সোমবারের বৈঠকেও সে কথা মনে করিয়ে দিয়েছেন অভিষেক। তৃণমূল সূত্রের খবর, উত্তরবঙ্গের দুই প্রথম সারির নেতাকেও অভিষেক এ ব্যাপারেও আলাদা করে সতর্ক করেছেন। দিন কয়েক আগেই ‘বিরোধীশূন্য পঞ্চায়েত’ চান বলে ‘বিশেষ কৌশলের’ ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন উদয়ন। সোমবার অভিষেক বলেছেন, ‘‘পঞ্চায়েত ভোটে কাউকে প্রার্থী দিতে দেব না, এ ধরনের কথাবার্তা কোনও ভাবেই মেনে নেবে না দল।’’
সোমবার অভিষেকের ডাকা বৈঠকে যোগ দিয়েছিলেন তৃণমূলের বিভিন্ন জেলার সভাপতি, বিধায়ক, সাংসদ, ব্লক সভাপতি ও শাখা সংগঠনের নেতা। তাঁদের প্রত্যেককেই বার বার মনে করিয়ে দেওয়া হয়েছে অশান্তি থেকে দূরে থাকার কথা এবং মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ বৃদ্ধি করার কথা। ২০২৩ সালের শুরুতেই দলীয় সদস্যদের এই যোগাযোগ রক্ষা করার কথা বলেছিলেন তৃণমূল নেতৃত্ব। সোমবারের বৈঠকেও ‘দিদির দূত’ কর্মসূচির খবর নিয়েছেন অভিষেক। বলেছেন, ‘‘দিদির দূত কর্মসূচিতে নেতারা মন দিন। এখনও পর্যন্ত এই কর্মসূচিতে ৪০ লক্ষ মানুষের কাছে পৌঁছনো গিয়েছে। লক্ষ্য ছিল ২ কোটি মানুষের কাছে পৌঁছনোর। আগামী দিনে বাকি ১ কোটি ৬০ লক্ষ মানুষের কাছেও পৌঁছতে হবে।’’ একই সঙ্গে তাঁর কড়া বার্তা, ‘‘অফিসে বসে হোয়াটসঅ্যাপে দল চলবে নাকি? মানুষের সাথে আরও বেশি করে যোগাযোগ রাখুন! যে পদাধিকারী ইগো নিয়ে বসে থাকবেন, ছোটখাটো সমস্যার সমাধান করতে পারবেন না, তাঁরা দল ছেড়ে চলে যান!’’
পাশাপাশি, দলের মধ্যে প্রার্থী নির্বাচন নিয়ে যাতে কোনও রকম অশান্তি না হয়, তার নিদানও দিয়েছেন তৃণমূলের অঘোষিত ‘দু-নম্বর’। অভিষেক বলেছেন, ‘‘নিজের পছন্দের লোককে প্রাধান্য দিয়ে অন্য নেতাকে বঞ্চিত করা যাবে না। আপনারা আপনাদের সুপারিশ দলকে পাঠান। তবে সবার সঙ্গে আলোচনা করে নাম পাঠান। আমাদের কাছে এমন বেশ কিছু নাম এসে পৌঁছেছে, যাঁদের বিরুদ্ধে মানুষের ক্ষোভ আছে৷ তাঁদের দল প্রার্থী করবে না।’’
তা হলে কাদের প্রার্থী করা হবে? সোমবারের বৈঠকে তার দিশাও দিয়ে দিয়েছেন অভিষেক। বলেছেন, ‘‘আপনাদের থেকে প্রাপ্ত তালিকা আমরা নেত্রীর কাছে পাঠিয়ে দেব। প্রার্থী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঠিক করবেন৷’’
আপাতত দলের নেতাদের পঞ্চায়েত ভোটের আগে বেশ কিছু নির্দেশ দিয়েছেন তৃণমূল নেতা। প্রথম, ১২ এপ্রিলের মধ্যে জেলা কমিটি তৈরির কাজ শেষ করতে হবে। দুই, ১৭ এপ্রিলের মধ্যে ব্লক কমিটি গড়তে হবে। তিন, ২৪ এ্রপ্রিলের মধ্যে গড়তে হবে পঞ্চায়েত কমিটি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy