কলেজে ভাঙচুর হওয়া আসবাবপত্র। — নিজস্ব চিত্র
ইসলামপুর কলেজে ছাত্র সংঘর্ষের ঘটনায় প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব। দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পুরো ঘটনাটি শোনার পরে রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সীকে দায়িত্ব দিয়েছেন এই গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের মীমাংসা করতে। আপাতত কলেজের পরিচালন সমিতিও ভেঙে দেওয়া হয়েছে। ছাত্র সংসদ গঠনের প্রক্রিয়াও
এখন বন্ধ। পরিচালন সমিতির চেয়ারম্যান ছিলেন প্রাক্তন মন্ত্রী আব্দুল করিম চৌধুরী। সমিতি ভেঙে দেওয়ায় তাঁরও আর পদ রইল না। তিনি উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন পর্ষদের উপদেষ্টা কমিটিরও চেয়ারম্যান। সরকারি সূত্রের খবর, সেই পদ থেকেও তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
তৃণমূল সূত্রের খবর, কলেজে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব ঠেকাতে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের পক্ষপাতি দলের শীর্ষ নেতৃত্ব। দ্বন্দ্ব মেটাতে সব পক্ষের সঙ্গে কথা বলার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে উত্তর দিনাজপুর জেলা সভাপতি অমল আচার্যকে। তিনি এখন কলকাতায় রয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘দলনেত্রীর নির্দেশে জেলায় ফিরেই কানাইয়া, করিম ও হামিদুলকে নিয়ে বৈঠক করব। চেষ্টা করব জেলাগত ভাবে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব মেটানোর।’’ দল সূত্রে আরও খবর, বৃহস্পতিবার গোলমালের পরেই সুব্রত বক্সী ফোন করে এই তিন নেতাকে সতর্ক করে দেন। তৃণমূলের এক জেলা নেতার দাবি, সুব্রতবাবু ওই তিন জনকে স্পষ্ট জানিয়ে দেন, কলেজের নির্বাচন পড়ুয়াদের উপরেই ছেড়ে দিতে হবে। কোনও ভাবে বাইরে থেকে কোনও নেতার হস্তক্ষেপ বরদাস্ত করা হবে না।
রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে জেরবার তৃণমূল নেতৃত্ব। এ দিকে পঞ্চায়েত ভোট সামনের বছরই। শীর্ষ নেতৃত্বের নির্দেশে এর মধ্যেই সেই ভোটের কথা মাথায় রেখে নিজেদের এলাকায় প্রচার শুরু করেছেন দলীয় নেতারা। এই পরিস্থিতিতে নতুন করে কোনও গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব মাথাচাড়া দিক, তা চান না দলীয় নেতৃত্ব। করিম, হামিদুল এবং কানাইয়াকেও সেই কথা মাথায় রেখেই সতর্ক করা হয়েছে। বিশেষ করে ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে যে ভাবে জেলার শীর্ষ নেতা ও বিধায়কেরা জড়িয়ে পড়েছেন, তাতে খুবই অসন্তুষ্ট তৃণমূল নেত্রী। কেন কলেজের ব্যাপারে দলের বিধায়ক ও নেতারা হস্তক্ষেপ করছেন, তা নিয়ে দলের অন্তরে ক্ষোভ প্রকাশও করেছেন মমতা।
এখানেই শেষ নয়, চোপড়ার বিধায়ক হামিদুলের অনুগামীদের সঙ্গে করিম অনুগামীদের সংঘর্ষ বেঁধে যাওয়ার বিষয়টিও ভাল চোখে দেখছেন না মমতা। অমলবাবু বলেন, ‘‘সংঘর্ষ, সরকারি সম্পত্তি নষ্ট ও পুলিশের উপর হামলার ঘটনায় যারা জড়িত, কোনও রঙ বা প্রভাব না দেখে সবার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’’ তাঁর কথায়, ‘‘কোনও নেতা দলের নির্দেশ না মানলে তাঁর পরিণতি খারাপ হবে বলে সুব্রত বক্সী আমাকে জানিয়ে দিয়েছেন।’’
তিন নেতার সকলেই অবশ্য এ দিন একে অন্যের ঘাড়ে দোষ চাপাতে ব্যস্ত। হামিদুলের বক্তব্য, ‘‘আমি তো কলেজের ব্যাপারে কোনও হস্তক্ষেপ করিনি! করিমের লোকজনই তো আমার দোকান জ্বালিয়ে দিয়েছে।’’ কানাইয়া বলেছেন, ‘‘এ বছর জিএস (জেনারেল সেক্রেটারি বা সাধারণ সম্পাদক) নির্বাচনে আমার অনুগামী ছাত্ররা শেষ পর্যন্ত সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়ায় বহিরাগত দুষ্কৃতীদের এনে নির্বাচনটাই ভন্ডুল করে দিলেন করিম।’’ আর করিমের কথায়, ‘‘সবটাই যে দুই বিধায়কের (হামিদুল ও কানাইয়ালাল) ষড়যন্ত্র, সেটা রাজ্য নেতৃত্ব জানেন। তাঁরাই উপযুক্ত পদক্ষেপ করবেন।’’
করিমের ঘনিষ্ঠ সূত্রের খবর, তিনি এর মধ্যেই কংগ্রেসের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। এ বারের বিধানসভা ভোটে তাঁকে হারিয়েছিলেন কংগ্রেস ও সিপিএমের প্রার্থী কানাইয়ালাল। সেই কানাইয়াই এখন তৃণমূলে। করিম ঘনিষ্ঠরা বলছেন, ফলে স্বাভাবিক ভাবেই দলে কোণঠাসা প্রাক্তন মন্ত্রী। এ দিন তাঁর যে দু’টি পদই চলে গেল, তাতেও যথেষ্ট হতাশ করিম। পঞ্চায়েত ভোটের আগে তাই পাল্টা দলবদল দেখলে অবাক হওয়ার কিছু নেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy