আব্বাস সিদ্দিকি —ফাইল চিত্র।
২০২১ সালের ভোটের আগে ‘সংযুক্ত মোর্চা’র ব্রিগেডে পিরজাদা আব্বাস সিদ্দিকির ভাষণ মনে পড়ে? গলার শির ফুলিয়ে ‘ভিক্ষা নয়, হক চাই’ স্লোগান গোটা ব্রিগেডকে আল্দোলিত করেছিল। কিন্তু ভোট ফুরোতেই সে সব স্লোগান কার্যত নটেগাছের মতো মুড়িয়ে গিয়েছিল। তার পর থেকে আব্বাসকে খুব একটা রাজনৈতিক কথা বলতে শোনা যায়নি। কিন্তু লোকসভা ভোটের দামামা যখন প্রায় বেজে গিয়েছে, তখন ফের ফুরফুরা শরিফের পিরজাদার মুখে ভোটের কথা। এবং তা ডায়মন্ড হারবার নিয়ে। যেখানকার সাংসদ তৃণমূলের ‘সেনাপতি’ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
আব্বাসের ভাই নওশাদ সিদ্দিকি ভাঙড়ের আইএসএফ (ইন্ডিয়ার সেকুলার ফ্রন্ট) বিধায়ক। ইতিমধ্যেই তিনি ঘোষণা করেছেন, তাঁর দল চাইলে তিনি ডায়মন্ড হারবার কেন্দ্রে প্রার্থী হবেন। এ বার আসরে নামলেন দাদা আব্বাসও। সমাজমাধ্যমে একটি ভাইরাল ভিডিয়োয় আব্বাসকে বলতে শোনা যাচ্ছে, ‘‘এই ডায়মন্ড হারবারে আমরা যদি প্রার্থী দিই, তা হলে আপনারা জেতাবেন তো? আমায় দেখে ভোট দেবেন। জেতালে প্রতি মাসে আমি এখানে (ডায়মন্ড হারবারে) আসব। সমস্যা শুনব। এবং এক মাসের মধ্যে সমস্যার সমাধান করব।’’ অনেকের মতে, নওশাদের চেয়েও আব্বাসের ভোটে লড়াইয়ের কথা বলা অনেক বেশি ‘তাৎপর্যপূর্ণ’। কারণ, তিনি ধর্মীয় নেতা হিসেবে ভোটে প্রার্থী দেওয়ার কথা বলেছেন। যা ডায়মন্ড হারবারের মতো আসনের জন্য অর্থবহ। কারণ সেখানকার জনবিন্যাস ও তার সমীকরণ।
আব্বাসের এ হেন ‘হুঙ্কার’ শুনে পাল্টা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে তৃণমূলও। দলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ সোমবার বলেন, ‘‘এটা এখন নওশাদ বনাম আব্বাস হচ্ছে। নওশাদ বলেছিলেন দাঁড়াবেন। এখন আব্বাস বলছেন, তাঁর প্রার্থীকে জেতাতে। আসলে কে বড় তার লড়াই চলছে।’’ সেই সঙ্গে কুণাল এ-ও বলেন, ‘‘ক্ষমতা থাকলে আব্বাস নিজে ভোটে লড়ুক না দেখি! চার লক্ষ ভোটে হারাব।’’ প্রসঙ্গত, সম্প্রতি ডায়মন্ড হারবারের একটি কর্মসূচি থেকে অভিষেক বলেছিলেন, ‘‘অনেকে বলছেন ভোটে দাঁড়াবেন। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ভোটে দাঁড়ানোর অধিকার সবার রয়েছে।’’ শুধু তা-ই নয়, অভিষেক এ-ও বলেছিলেন, ‘‘পারলে দিল্লি, গুজরাত থেকে কাউকে এনেও এখানে (ডায়মন্ড হারবারে) দাঁড় করাতে পারেন।’’
উল্লেখ্য, বাংলায় যে কয়েকটি আসনে সংখ্যালঘু ভোট ফলাফলের ক্ষেত্রে ‘নির্ণায়ক’, তার মধ্যে অন্যতম ডায়মন্ড হারবার। এই লোকসভা কেন্দ্রে ৫৩ শতাংশ মুসলিম ভোটার। এই লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত সাতটি বিধানসভার মধ্যে মেটিয়াবুরুজ বাদ দিয়ে বাকি সব কেন্দ্রে (ডায়মন্ড হারবার, ফলতা, বিষ্ণুপুর, বজবজ, মহেশতলা, সাতগাছিয়া) বাঙালি মুসলিমই বেশি। রাজনৈতিক মহলের অনেকের বক্তব্য, দক্ষিণ ২৪ পরগনার বেশির ভাগ এলাকাতেই বাঙালি মুসলিমদের মধ্যে ফুরফুরা শরিফের ‘প্রভাব’ রয়েছে। সম্ভবত সেই অঙ্ক থেকেই আব্বাস ডায়মন্ড হারবারে প্রার্থী দেওয়ার বিষয়ে এতটা উৎসাহী। যদিও গত পুর ও পঞ্চায়েত ভোটে ডায়মন্ড হারবার এলাকায় বিরোধীরা তেমন ভাবে দাঁত ফোটাতে পারেনি। আইএসএফ-সহ বিরোধীদের পাল্টা বক্তব্য, পঞ্চায়েত বা পুরসভায় ডায়মন্ড হারবারে কোনও ভোটই হয়নি। যা হয়েছে তাকে ‘লুট’ বলে।
একটা সময়ে বাংলায় সংখ্যালঘু ভোটে বামেদের একচ্ছত্র আধিপত্য ছিল। কিন্তু ২০০৮ সালের পঞ্চায়েত ভোট থেকে তার ক্ষয় হতে শুরু করে। দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা পরিষদ হাতছাড়া হয় সিপিএমের। ই জেলায় ক্ষমতা দখল করে তৃণমূল। পাশাপাশি, পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পরিষদও সে বার দখল করেছিল জোড়াফুল শিবির। তার পর ২০০৯ সালের লোকসভা নির্বাচন থেকে সংখ্যালঘু ভোট বাক্স বদল করে চলে যায় তৃণমূলের দিকে। গত এক দশকের বেশি সময় ধরে যা কার্যত তৃণমূলের পুঁজিতে পরিণত হয়েছে।
অনেকের মতে, আইএসএফ ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বললেও বা দলের নামে ‘সেকুলার’ রাখলেও, আসলে তাঁদের ভোট ভিত্তি সংখ্যালঘুরাই। সেই সংখ্যালঘুরা, যাঁদের উপর ফুরফুরা শরিফের ‘প্রভাব’ রয়েছে। যদিও ধর্মীয় প্রভাব কতটা ভোটের বাক্সে প্রতিফলিত হবে, তা নিয়ে অনেকের সংশয়ও রয়েছে। অনেকে মনে করছেন, সে কারণেই আগেভাগে ভোটের কথা বলা শুরু করে দিলেন পিরজাদা আব্বাস।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy