দু’জনেরই বয়স ৬০-এর কোঠায়। পাঁচ মাসের ছোট-বড়। এক জন অভিনেতা, অন্য জন রাজনৈতিক নেতা। দু’জনেই ষাটের আশপাশে প্রেয়সীকে খুঁজে পেলেন। কিন্তু এক জন জানালেন ষাট বছরে বিয়ে করা তাঁকে মানায় না। অন্য জন ছাঁদনাতলায় যাওয়ার আগের দিন প্রেমের কথা স্বীকার করলেন। শুধু তা-ই নয়, রাজনৈতিক মতাদর্শের ওজর তুলে তাঁকে নিরস্ত করতে আসা সহকর্মীদের সাফ জানিয়ে দিলেন, বিয়ে তিনি করছেনই। প্রথম জন আমির খান, দ্বিতীয় জন দিলীপ ঘোষ। দু’জনের পেশা আলাদা। দৃষ্টিভঙ্গীও। কিন্তু ষাটের কোঠায় প্রেমে পড়া এই দুই ‘তরুণ’ই তাঁদের নিজের নিজের জায়গায় ঠিক— জানাচ্ছেন ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট অনিন্দিতা মুখোপাধ্যায়। তিনি বলছেন, ‘‘প্রৌঢ়ত্বে পৌছে বিয়ে করার আগে অবশ্যই কিছু বিষয় মাথায় রাখতে হয়। যা ভেবে অনেকেই মনে করতে পারেন, এই বয়সে বিয়ে করাটা ঠিক নয়। যেমন আমির খান ভেবেছেন। কিন্তু বয়সকালে বিয়ে করার কিছু ইতিবাচক দিকও রয়েছে। দিলীপ ঘোষ নিশ্চয়ই সেই বিষয়গুলিকেই বেশি গুরুত্ব দিতে চেয়েছেন।’’
৬০ বছরে পৌঁছে বিয়ে করার ভাল দিক কী কী?

বিয়ের পিঁড়িতে রিঙ্কু মজুমদার এবং দিলীপ ঘোষ। ছবি: আনন্দবাজার ডট কম।
মানসিক ভাবে ভাল থাকা
বেশি বয়সে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অনেকে একা হয়ে যান, জানাচ্ছেন মনোবিদ। ছেলে-মেয়েরা দূরে থাকে। কর্মরতেরা কাজ থেকেও অবসর নিয়ে নেন। ফলে অনেকটা সময় ফাঁকা হয়ে যায়। অনেকটা সময় একা থাকতে হয়। অনিন্দিতা বলছেন, ‘‘ভারতে বয়স্কদের নানা অসুস্থতার একটা বড় কারণ মনে করা হয় একাকিত্বকে। ৫০, ৬০ কিংবা ৭০-এর কোঠায় পৌঁছে বিয়ে করাটা তাই এক দিক থেকে খুব ভাল। কারণ তাঁরা অল্প বয়সে এক জন সঙ্গী পেলেন। সময় কাটানোর মানুষ পেলেন। এই বয়সে দু’জনেই পরিণতমনস্ক। তাই ঝগড়াঝাঁটির ঝুঁকি কম। বরং পরষ্পরের সঙ্গলাভে তাঁরা মানসিক ভাবে ভাল থাকবেন।
শারীরিক ভাবে ভাল থাকা
বেশি বয়সে নানা ধরনের রোগ বাসা বাঁধে শরীরে। সেই সময় পাশে কাউকে পেলে মনের জোর পাওয়া যায়। হয়তো চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার দরকার হল বা কখনও কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লেন, তখন প্রাথমিক ভাবে সামলানোর জন্য আরও এক জনকে পাশে পাওয়া যায়। যিনি প্রাথমিক যত্ন নেওয়ার কাজটি করে দেবেন। “বয়সকালে এইটুকুও তো অনেকখানি”, বলছেন মনোবিদ।
৬০ বছর বয়সে বিয়ে করার আগে কি সতর্ক হওয়া দরকার?

আমির খান এবং গৌরী স্প্যাট। ছবি: সংগৃহীত।
সামাজিক ভাবনা
সমাজের নিজস্ব কিছু পূর্বনির্ধারিত ধ্যানধারণা রয়েছে। যা অনেকেই মেনে চলেন। কেউ কুকথা শোনার ভয়ে। কেউ মেনে চলেন মানিয়ে নেওয়ার ভাবনা থেকেই। মনোবিদ বলছেন, ‘‘আমির যেমন বলেছেন, তাঁকে মানায় না। নিশ্চয়ই তিনি সমাজের দৃষ্টিভঙ্গীকেই বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন।’’ তবে বেশি বয়সে বিয়ে করার আগে যদি সমাজ কী বলল, তাকে এড়িয়ে যাওয়ার সাহস থাকে, তবে নিশ্চিন্তে নিজের সুখের ঠিকানা খুঁজে নিতে পারেন।
অর্থনৈতিক ভাবনা
বিয়ে অনেক সময়েই এক রকম অর্থনৈতিক নির্ভরতার প্রসঙ্গ নিয়ে আসে। বয়সকালে, বিশেষ করে যাঁরা অবসরপ্রাপ্ত, এ দেশে তাঁদের অধিকাংশই পেনশনভোগী হন না। তার পরেও যদি বিয়ের মতো একটা নির্ভরতার দায়িত্ব নিতে পারবেন বলে মনে করেন, তবে অবশ্যই এগিয়ে যেতে পারেন। তবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে অর্থনৈতিক ভাবনাটি অবশ্যই ভেবে দেখা উচিত।
শারীরিক ভাবনা
বেশি বয়সে বিয়ে করার আগে আরও একটি বিষয়ে মনকে প্রস্তুত করে নেওয়া জরুরি। যাঁকে বন্ধু হিসাবে কাছে পাওয়ার জন্য বিয়ে করছেন, তিনি ভবিষ্যতে অসুস্থ হয়ে পড়তে পারেন। বয়স হলে সেটা স্বাভাবিক। সে ক্ষেত্রে সেই অসুস্থতা এবং তার পরবর্তী পরিস্থিতি সামলাতে পারবেন, এ কথা ভেবেই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া দরকার।