জয়নগরের ঘটনায় সিপিএমের পাশাপাশি বিজেপির ভূমিকার দিকে আঙুল তুললেন রাজ্যের পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। —ফাইল চিত্র।
তৃণমূল কংগ্রেসের নিহত নেতা সইফুদ্দিন লস্করের স্মরণসভায় এসে ওই খুনের ঘটনার জন্য সিপিএমের পাশাপাশি বিজেপির ভূমিকার দিকে আঙুল তুললেন রাজ্যের পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। বামনগাছি পঞ্চায়েতে সইফুদ্দিনের বাড়ির কাছেই মরিশ্বর স্কুলের মাঠে রবিবার ওই সভায় ফিরহাদ বলেছেন, ‘‘সইফুদ্দিন থাকলে সিপিএমের মাটি থাকছিল না। সে কারণেই সরিয়ে দেওয়া হল। সিপিএম মানেই বিজেপি! বাংলায় যা খুন হচ্ছে, পিছন থেকে মদত দিচ্ছেন ওই মোটা ভাই (স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ)।” সেই সঙ্গে তাঁর সংযোজন, ‘‘কারা ষড়যন্ত্র করল, আগ্নেয়াস্ত্র কোথা থেকে এল— তা পুলিশ খতিয়ে দেখুক।’’ মন্ত্রীর উপস্থিতিতেই জয়নগরের তৃণমূল বিধায়ক বিভাস সর্দার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, প্রশাসনের পাশাপাশি তাঁরাও তদন্ত করছেন। প্রশাসন না পারলে তাঁরাই শাস্তি দেবেন! পাল্টা সরব হয়েছে সিপিএম এবং বিজেপিও।
পূর্ব মেদিনীপুরের মেচেদায় এই সংক্রান্ত প্রশ্নে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর মন্তব্য, ‘‘এ রাজ্যের পুলিশমন্ত্রী, তিনি ফিরহাদ হাকিমের দিদি হন না কি পিসি হন, আমি জানি না। তিনি তাঁর দলের লোকেদের, তৃণমূলকে নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ। ফিরহাদের দিদি বা পিসির পদত্যাগ করা উচিত!’’ বিজেপির জয়নগর সাংগঠনিক জেলার সভাপতি উৎপল নস্করের বক্তব্য, “তৃণমূলের কোন্দলে রাজ্যের সর্বত্র এ ধরনের ঘটনা ঘটছে। সে সব ধামাচাপা দিতে উনি (ফিরহাদ) এখন বিজেপির উপরে দোষ চাপাচ্ছেন। আর সিপিএমের সঙ্গে কাদের যোগসাজস, তা সর্বভারতীয় স্তরে চোখ রাখলেই স্পষ্ট হয়ে যাবে।”
সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীও মন্ত্রীর পাল্টা বলেছেন, ‘‘সভায় হাততালি পেতে বিজেপি-সিপিএম যোগসাজসের কথা বলেছেন উনি। তদন্তের কথা বলেছেন। প্রকৃত তদন্ত হলেই আসল ঘটনা সামনে আসবে।’’ সইফুদ্দিন খুনের পরে গণপিটুনিতে মৃত্যু হয়েছিল এক জনের। সেই প্রসঙ্গ টেনে সুজন বলেন, “নিহত নেতার বাড়িতে রাজ্যের মন্ত্রী এলেন। খুব ভাল কথা। কিন্তু তৃণমূলেরই এক কর্মী গণপিটুনিতে মারা গেলেন, এত মানুষের ঘর-বাড়ি পোড়ানো হল— সেখানে গেলেন না কেন!”
গত ১৩ নভেম্বর বাঙালবুড়ির মোড়ে বাড়ির কাছেই মসজিদে যাওয়ার পথে দুষ্কৃতীদের গুলিতে খুন হন সইফুদ্দিন। ওই ঘটনার পরে পাঁচ কিলোমিটার দূরে দলুয়াখাকি গ্রামে বেশ কয়েক জন সিপিএম কর্মী-সমর্থকের বাড়িতে ভাঙচুর চালিয়ে আগুন লাগানো হয়। সেই তাণ্ডবে অভিযোগের তির তৃণমূলের দিকে। সেই প্রসঙ্গে ফিরহাদ অবশ্য মন্তব্য করেছেন, ‘‘দু-একটা বাড়ি কোথায় ভাঙা হয়েছে, কোনও প্রমাণ নেই। নিজেরাই বাড়ি ভাঙল, সেই নিয়ে কমরেডদের কত ব্যথা!”
ঘটনার পরে একাধিক বার দলুয়াখাকির আক্রান্ত কর্মী-সমর্থকদের জন্য ত্রাণ নিয়ে এসেছেন সিপিএম নেতা সুজন, কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়েরা। সুজনকে কটাক্ষ করে ফিরহাদের বক্তব্য, “আমরা কি গরু-ছাগলের বাচ্চা? হাতে চুড়ি পরে বসে থাকব না। শুধু মেয়েরাই একটা করে জুতো মারলে একটাও চুল থাকবে না!” স্মরণসভায় ফিরহাদ ছাড়াও ছিলেন ক্যানিং পূর্বের বিধায়ক সওকাত মোল্লা, বারুইপুর পূর্বের বিধায়ক বিভাস সর্দার, জয়নগরের বিধায়ক বিশ্বনাথ দাস, তৃণমূলের যাদবপুর-ডায়মন্ড হারবার সাংগঠনিক জেলার সভাপতি শুভাশিস চক্রবর্তীরা। বিভাস বলেন, “প্রশাসন সইফুদ্দিন খুনের তদন্ত করছে। আমরাও আমাদের মতো তদন্ত করছি। একটা বড় চক্র আছে। প্রশাসন শাস্তি না দিলে আমরা তাদের শাস্তি দেব। যারা সইফুদ্দিনকে আমাদের কাছ থেকে কেড়ে নিয়েছে, তাদের রাতে ঘুমোতে দেব না।” যার প্রেক্ষিতে সিপিএমের সুজন পাল্টা বলেছেন, ‘‘তৃণমূলের নেতারা তা হলে পরিষ্কার মুখ্যমন্ত্রীকে বলে দিন, তাঁর পুলিশের তদন্তে ওঁদের কোনও ভরসা নেই! ওঁরাই তদন্ত করে নিজেরা শাস্তি দেবেন, এ তো সংবিধান-বিরোধী মনোভাব। বোঝাই যাচ্ছে, কী ভাবে পুলিশ-প্রশাসন চলছে।’’
ত্রাণ নিয়ে এ দিনই দলুয়াখাকি গ্রামে এসেছিলেন কামদুনির ‘প্রতিবাদী মুখ’ টুম্পা কয়াল, মৌসুমি কয়ালেরা। মানবাধিকার সংগঠন এপিডিআরের চাঁদপাড়া শাখার তরফে তাঁরা গ্রামে আসেন। এপিডিআরের চাঁদপাড়া শাখার সভাপতি নন্দদুলাল দাস জানান, পরিবারগুলির হাতে এ দিন পোশাক ও খাবার দেওয়া হয়েছে। টুম্পা বলেন, ‘‘কামদুনিতেও অপরাধীদের পাশে দাঁড়িয়েছিল সরকার। সে কারণে তারা এখন ঘুরে বেড়াচ্ছে। এখানেও তাই করা হচ্ছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy