বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন টোটোচালক। অভিযোগ, সেই মহিলার মেয়ের প্রতিও আকৃষ্ট হওয়ায় ওই কিশোরীর বন্ধুর হাতেই খুন হলেন তিনি। রবিবার রাতে নিউ টাউনের ইকো পার্ক থানা এলাকার নিমবনানী অঞ্চলে স্ট্রিট নম্বর ৫২৯-এর কাছে সুশান্ত ঘোষ (৪৩) নামে রাজারহাটের রেকজোয়ানির বাসিন্দা ওই টোটোচালকের দেহ উদ্ধার হয়। পুলিশ সূত্রের খবর, নৃশংস ভাবে খুন করা হয়েছে সুশান্তকে। ভারী কিছু দিয়ে আঘাত করে তাঁর মাথা থেঁতলে দেওয়া হয়। গলার কাছে ফুটো করে দেওয়া হয়। কেটে দেওয়া হয় গোপনাঙ্গ। ঘটনায় অভিযুক্ত সন্দেহে দুই নাবালককে হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ।
সুশান্তের পরিবার জানায়, এক মহিলা সেনা আধিকারিকের গাড়ি চালাতেন তিনি। বাড়তি রোজগারের জন্য কখনও কখনও টোটোও চালাতেন। রবিবার রাতে তাঁকে নিউ টাউনের রামমন্দির এলাকায় সওয়ারি তুলতে হবে বলে জানানো হয়। পুলিশ সূত্রের খবর, রামমন্দির এলাকায় ভাড়া খাটতে যাচ্ছেন বলে সুশান্ত বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন। গভীর রাতে তাঁর বাড়িতে খবর আসে যে, সুশান্ত খুন হয়েছেন। ইকো পার্ক থানা এলাকার ১৪ নম্বর ট্যাঙ্কের কাছে নিমবনানীতে তাঁর দেহ পড়ে থাকতে দেখা যায়। সুশান্তের পকেটে আধার কার্ড দেখে ইকো পার্ক থানা খবর দেয় রাজারহাট থানাকে। রাত ১টার পরে ঘটনা জানাজানি হয় রেকজোয়ানিতে।
তদন্তে জানা গিয়েছে, সুশান্তের সঙ্গে এক মহিলার দীর্ঘ বছর ধরে বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্ক রয়েছে। রেকজোয়ানির মাঝেরপাড়ায় যেখানে সুশান্ত থাকতেন, ওই মহিলাও আগে সেখানে থাকতেন। সুশান্তের সঙ্গে মহিলার স্বামীর যোগাযোগ ছিল। এমনকি, মহিলার স্বামীকে সুশান্ত টোটো কিনতে টাকা ধার দিয়েছিলেন বলেও পুলিশ জেনেছে। কিন্তু বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্কের টানাপড়েন ঘিরে ওই মহিলা তাঁর স্বামী ও মেয়েকে নিয়ে নিউ টাউন এলাকায় বসবাস শুরু করেন।
খুনের ঘটনা জানাজানি হতেই পুলিশ প্রথমে ওই দম্পতিকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে। এই খুনের পিছনে তাঁদের কোনও হাত নেই বলে শুরু থেকেই ওই দম্পতি দাবি করতে থাকেন। মহিলার স্বামীর থেকে সুশান্ত ধার দেওয়া টাকা ফেরত চাইছিলেন বলেই তাঁকে খুন হতে হয়েছে, শুরুতে এমন ধারণা হয়েছিল পুলিশের। সেই অনুযায়ী দম্পতিকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করা হয়। পাশাপাশি, সুশান্তের বাড়ির আশপাশের সিসি ক্যামেরার ফুটেজও দেখতে থাকে পুলিশ।
ওই এলাকার প্রাক্তন পঞ্চায়েত সদস্য রাজেশ মহম্মদ বলেন, ‘‘কী ঘটেছে জানি না। তবে দেহ দেখে মনে হয়েছে, প্রবল রাগের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। মাথা থেঁতলে দেওয়া হয়েছে, গোপনাঙ্গের একটি অংশ কেটে দেওয়া হয়েছে, গলার কাছে ফুটো করে দেওয়া হয়েছে।’’
বিধাননগর কমিশনারেট জানিয়েছে, সিসি ক্যামেরার ফুটেজ থেকে জানা যায়, এক কিশোর শনিবার সকালে সুশান্তের বাড়ি গিয়েছিল। খোঁজ করতেই সামনে আসে, রবিবার সুশান্তকে রামমন্দির এলাকায় ভাড়ার জন্য টোটো নিয়ে যেতে হবে, শনিবার সে কথাই বলতে এসেছিল ওই কিশোর। ফুটেজ দেখে আরও জানা যায়, ওই কিশোর ও তার এক বন্ধু রবিবার রাতে সুশান্তের টোটোয় উঠেছিল। তাদের আটক করা হয়।
তদন্তে উঠে আসে, দু’জনেই অপ্রাপ্তবয়স্ক। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করলে অপরাধের কথা তারা স্বীকার করে। কমিশনারেট জানায়, সুশান্তের বাড়িতে গিয়েছিল যে কিশোর, সে-ই খুন করেছে তাঁকে। ওই কিশোরের সঙ্গে সুশান্তের বান্ধবীর মেয়ের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে। খুন ও নৃশংসতার কারণ খতিয়ে দেখতে তদন্ত শুরু হয়েছে।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)