বিমান থেকে নামা মাত্রই ২৬/১১ মুম্বই হামলায় অভিযুক্ত তাহাউর রানাকে গ্রেফতার করেছিল জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ)। বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে তাঁকে হাজির করানো হয় দিল্লির পটীয়ালা হাউস কোর্টের বিশেষ এনআইএ আদালতের বিচারকের সামনে। মুম্বই হামলার নেপথ্যে থাকা ষড়যন্ত্রের দিকটি খতিয়ে দেখতে রানাকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার আর্জি জানায় এনআইএ। আর্জি মঞ্জুর করে বিচারক রানাকে ১৮ দিন এনআইএ-র হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন। এনআইএ অবশ্য রানাকে ২০ দিনের জন্য নিজেদের হেফাজতে পেতে চেয়েছিল।
আদালতে এনআইএ জানায়, সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ ঘটাতে রানা অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র করেছিলেন। অন্য ষড়যন্ত্রীদের সঙ্গে শলা পরামর্শও করেছিলেন। বিচারক রানার কাছে জানতে চান, তিনি পাল্টা সওয়ালের জন্য নিজে কোনও আইনজীবী নিয়োগ করবেন, না কি আদালতের তরফ থেকে তাঁকে আইনি সহায়তা দেওয়া হবে?
আদতে পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত হলেও বর্তমানে কানাডার নাগরিক। এত দিন লস অ্যাঞ্জেলেসের বন্দিশালায় আটক ছিলেন তিনি। অভিযোগ, পাক বংশোদ্ভূত আর এক সন্ত্রাসবাদী ডেভিড কোলম্যান হেডলির সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল। হেডলির সঙ্গে মিলেই ২৬/১১-র মুম্বই হামলার বিষয়টি ছকেছিলেন রানা। নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন লশকর-এ-ত্যায়বার সঙ্গেও যোগ ছিল তাঁর। পাশাপাশি অপর জঙ্গি সংগঠন হরকত-উল-জিহাদি ইসলামির (হুজি) সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ ছিল।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা নাগাদ রানাকে নিয়ে দিল্লি বিমানবন্দরে নামেন এনআইএ আধিকারিকেরা। বুধবার আমেরিকায় ‘জি৫৫০ জেট’ নামের বিশেষ বিমানে তোলা হয়েছিল রানাকে। আমেরিকা থেকে ভারতে আসার পথে বিমানটি বুধবার রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ অবতরণ করেছিল রোমানিয়ার বুখারেস্টে। সেখানে ১১ ঘণ্টা দাঁড়ানোর পর বৃহস্পতিবার ভারতীয় সময় সকাল ৮টা ৪৫ মিনিটে বিমানটি ভারতের উদ্দেশে রওনা দেয়। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় রানাকে নিয়ে বিমানটি দিল্লি বিমানবন্দরে অবতরণ করে।
রানাকে ভারতে ফেরানোর পরে একটি বিবৃতি দিয়ে জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ) জানিয়েছে, ২০০৮ সালের ওই জঙ্গি হানার মূল ষড়যন্ত্রী ছিলেন রানা! বিবৃতিতে এনআইএ জানিয়েছে, “২৬/১১ মুম্বই জঙ্গি হানার মূলচক্রী তাহাউর হুসেন রানাকে বৃহস্পতিবার ভারতে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। ২০০৮ সালের ওই ঘটনায় মূল ষড়যন্ত্রীকে বিচারের আওতায় আনার জন্য বেশ কয়েক বছর ধরে চেষ্টা চলছিল।” প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে, রানাকে দিল্লির তিহাড় জেলে রাখা হবে। সেই কারণে ওই সংশোধনাগারের নিরাপত্তা আরও আঁটসাঁট করা হয়েছে।
আরও পড়ুন:
রানাকে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য এনআইএ-র সদর দফতরে ইতিমধ্যেই বিশেষ কক্ষ তৈরি করা হয়েছে। প্রাথমিক ভাবে স্থির হয়েছে ১২ জন আধিকারিক পাক বংশোদ্ভূত এই কানাডিয়ান ব্যবসায়ীকে জেরা করবেন। এই ১২ জনের মধ্যে রয়েছেন এনআইএ-র ডিজি সদানন্দ দাতে, আইজি আশিস বাত্রা, ডিআইজি জয়া রায়।
রানার ভারতে প্রত্যর্পণ নিয়ে মুখ খুলেছে আমেরিকা। সংবাদ সংস্থা এএনআই-এর প্রতিবেদন অনুসারে, আমেরিকার প্রতিরক্ষা দফতরের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস বলেন, “এই ধরনের হামলার সঙ্গে যাঁরা যুক্ত, তাঁদের বিচারের আওতায় আনার জন্য ভারতের উদ্যোগকে দীর্ঘ দিন ধরে সমর্থন করে এসেছে আমেরিকা। এখন উনি (রানা) ভারতের হাতে। আমরা খুশি।” মার্কিন আদালতে রানা বার বার আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন যে, ভারতের জেলে তাঁর উপর অত্যাচার চালানো হবে। তবে ভারত অবশ্য আমেরিকার সঙ্গে থাকা প্রত্যর্পণ চুক্তির শর্ত ভঙ্গ হবে না বলে আশ্বাস দিয়েছে। নয়াদিল্লির তরফে জানানো হয়েছে, জেলেও সুরক্ষিত থাকবেন রানা।