শেখ সুফিয়ান। —ফাইল চিত্র।
পঞ্চায়েত ভোটের নন্দীগ্রামে চর্চায় এখন এক গোপন বৈঠক!
জমি আন্দোলনের পুরনো মুখ, পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পরিষদের বিদায়ী সহ-সভাধিপতি শেখ সুফিয়ান এ বার আর পঞ্চায়েতে তৃণমূলের টিকিট পাননি। তা নিয়ে ক্ষোভ আর অভিমান রয়েছে নন্দীগ্রামের ‘জাহাজবাড়ি’র অন্দরে। সূত্রের খবর, এই আবহেই নাকি রাজ্য বিজেপির এক শীর্ষ নেতার সঙ্গে বৈঠক হয়েছে সুফিয়ানের। বোঝাপড়াও হয়ে গিয়েছে। নন্দীগ্রামের ভোট-ভাগ্য নাকি নির্ধারিত হচ্ছে সেই কৌশলেই।
সত্যিই কি এমন ‘আঁতাঁত’ হচ্ছে?
বিষয়টি নস্যাৎ করে দিচ্ছে বিজেপি। দলের তমলুক সাংগঠনিক জেলার সম্পাদক মেঘনাদ পালের বক্তব্য, ‘‘আমরা অনেক জায়গায় প্রার্থী দিতে পারিনি ঠিকই। সেই সব জায়গায় ‘মানুষের জোট’কে সমর্থন করেছি। তবে সুফিয়ানের সঙ্গে বিজেপির বোঝাপড়ার প্রশ্নই ওঠে না।’’ বিজেপি নেতা সৌমেন্দু অধিকারীও বলেন, ‘‘নিচুতলায় মানুষের জোট হয়েছে।” তবে বিজেপি নেতৃত্বের সঙ্গে সুফিয়ানের বৈঠক হয়েছে কি না, জানতে চাইলে তাঁর মন্তব্য, “এ বিষয়ে কিছু জানা নেই।”
রাজ্য তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক এবং শাসক দলের তরফে পূর্ব মেদিনীপুরের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা কুণাল ঘোষ আবার পাল্টা বলছেন, ‘‘সুফিয়ানদা’র সঙ্গে আমার কথা হয়নি। তবে এমন হতেই পারে যে, বিজেপির কেউ তৃণমূলে আসতে চেয়ে ওঁর সঙ্গে কথা বলে থাকতে পারেন! এই রকম আরও কিছু ঘটনা জেলার অন্যত্র ঘটেছে।’’
সুফিয়ান নিজে দাবি করছেন, ‘‘আমি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সৈনিক, দলের অনুগত কর্মী। টিকিট পাই, না পাই, দলকে জেতানোর জন্য কাজ করে যাব, করছিও।’’ যদিও বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী এ দিনই নদিয়ার এক সভায় দাবি করেছেন, “এই সরকারের আশি শতাংশ লোক আমার সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে।”
তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, সুফিয়ান নিজেকে ‘মমতার অনুগত সৈনিক’ বলার পাশাপাশি এ-ও মন্তব্য করেছেন, ‘‘পরিস্থিতি যা, তাতে আমি প্রচারে নামার পরেও যদি দল খারাপ ফল করে, তখন ওরাই আবার বলবে, আমি ভোট কাটতে সাহায্য করেছি।” তার পরেই তাঁর দাবি, “ব্লক নেতৃত্বই পরিকল্পনা করে শুভেন্দুর সঙ্গে বোঝাপড়া করে তৃণমূলকে ধ্বংস করার চক্রান্ত করছেন। উল্টে আমার সঙ্গে শুভেন্দুর ‘গট আপে’র গল্প ছড়াচ্ছেন!”
সুফিয়ানের বিরুদ্ধে ‘অন্তর্ঘাতে’র অভিযোগ উঠেছিল গত বিধানসভা ভোটেও। সেই ভোটে নন্দীগ্রামের তৃণমূল প্রার্থী, দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এজেন্ট ছিলেন সুফিয়ান। শুভেন্দুর কাছে মমতার হারের পরে সুফিয়ানের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। তার পরে সংগঠনে তাঁর অনুগামীদের সরানো হয়। নন্দীগ্রামে পঞ্চায়েত ভোট পরিচালনার দলীয় কমিটিতেও রাখা হয়নি তাঁকে। তখন সুফিয়ান-অনুগামীরাও টিকিট না পাওয়ার আশঙ্কায় নির্দল হিসেবে মনোনয়ন জমা দিতে থাকেন। সুফিয়ানকে জেলা পরিষদে প্রার্থী করেও শেষ লগ্নে জানানো হয়, তিনি টিকিট পাচ্ছেন না।
নন্দীগ্রামে ‘খেলা’ শুরু নাকি এর পরই।
বোঝাপড়ার আভাস কিন্তু অঙ্কেও। এ বার ভোটে নন্দীগ্রামে তৃণমূলের বিরুদ্ধে নির্দলের লড়াই কার্যত নজিরবিহীন। এই নির্দলের একাংশ নিজেদের সুফিয়ান-অনুগামী বলছেন। তৃণমূলের টিকিট পাচ্ছেন না ধরেই এঁরা দাউদপুর, সামসাবাদ, কেন্দেমারি ও নন্দীগ্রাম গ্রাম পঞ্চায়েতে আগেই মনোনয়ন দেন। এই চার গ্রাম পঞ্চায়েতেই বেশ কিছু আসনে প্রতীকে প্রার্থী দেয়নি বিজেপি। ফলে, সেখানে তৃণমূলের সঙ্গে সরাসরি লড়াইয়ে নির্দল বা বাম-কংগ্রেসের প্রার্থী। সুফিয়ান বলছেন, ‘‘সিপিএম, কংগ্রেস থেকে এমন অনেকে প্রার্থী হয়েছেন, যাঁরা বেশির ভাগ তৃণমূলেরই লোক।’’ তাঁর ক্ষোভ, ‘‘এঁদের অনেকের দলের টিকিট পাওয়ার যোগ্যতা আছে। অথচ ব্লক নেতৃত্ব আলোচনাই করলেন না! উপদেষ্টা সংস্থা ব্লক দফতরে বসেই প্রার্থী ঠিক করে ফেলল!’’
এই পরিস্থিতিতে নন্দীগ্রামের বিজেপি বিধায়ক শুভেন্দুর ঘোষণা, ওই পঞ্চায়েতগুলিতে তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়বে ‘মানুষের জোট’।
রাখঢাক না রেখে সুফিয়ান আরও বলছেন, ‘‘আমি দাঁড়ালে চারটি গ্রাম পঞ্চায়েত জিতত। আমি না দাঁড়ানোয় চারটি গ্রাম পঞ্চায়েতই শেষ হয়ে যেতে পরে।’’ নন্দীগ্রামে সুফিয়ান-বিরোধী বলে পরিচিত, এ বার সুফিয়ানের বদলে জেলা পরিষদে তৃণমূলের প্রার্থী শেখ শামসুল ইসলাম জানাচ্ছেন, ‘‘সুফিয়ান প্রকাশ্যে দলের বিরোধিতা করছেন না ঠিকই। কিন্তু ১০টি গ্রাম পঞ্চায়েতের দলের প্রচারে নেই তিনি।’’
সুফিয়ানপন্থী হিসাবে পরিচিত, দাউদপুরের পঞ্চায়েতে ‘নির্দল’ হিসেবে দাঁড়ানো আব্বাস বেগ বলছেন, ‘‘তৃণমূলটা চোর-ডাকাতের দল হয়ে গিয়েছে। ‘মানুষের জোট’ চাইছে এই দলটাকে উৎখাত করতে। তার জন্য যা করার, সেটাই করা হবে।’’
ঠিক যেন শুভেন্দুর কথারই প্রতিধ্বনি!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy