কাইয়াকাটায় দেখা মিলল ময়ূরের। ছবি: প্রবীর বিশ্বাস
গলার কাছ থেকে পশমিনার মতো জড়িয়ে ঘন নীল, একেবারে তলপেট পর্যন্ত। আর পিঠ থেকে লেজ পর্যন্ত সাদা মুক্তো গাঁথা ওড়নার মতো।
এপ্রিলের ঝকঝকে সকালে শরীর দুলিয়ে এগিয়ে যাওয়া ময়ূর দেখে প্রায় লাফিয়ে উঠেছিলেন লিজা বিশ্বাস। বিদ্যুতের ঝলকের মতো চোখের সামনে নেচে বেড়ানো পূর্ণবয়স্ক পুরুষ ময়ূরটিকে সঙ্গে সঙ্গে নিজের ক্যামেরায় বন্দি করেছেন তাঁর স্বামী প্রবীর। সেই সময়ে আর কিছু মাথায় আসেনি তাঁদের। কিন্তু কিছু ক্ষণ পরেই স্থানীয় বাসিন্দাদের বিস্ময়ে রূপের ঘোর ভাঙে তাঁদের। শুষ্ক পরিবেশে থাকতে অভ্যস্ত ময়ূর কেন তার স্বাভাবিক বাস ছেড়ে প্রায় চার হাজার ফুট বেশি উপরে উঠে এসেছে? ওই উচ্চতায় তা হলে শুষ্ক পরিবেশই পেয়েছে সে!
ভারত-নেপাল সীমান্তে সান্দাকফুর কাছে কালোপোখরি আর গৈরীবাসের মাঝমাঝি কাইয়াকাটা গ্রামে এর আগে কখনও ময়ূর দেখেননি স্থানীয় মানুষ। কাছাকাছি ডুয়ার্সের জঙ্গলে ময়ূরের ঘোরাফেরা নজরে আসে। এমনকি, দার্জিলিংয়ের মানেভঞ্জনেও ময়ূর দেখেছেন অনেকে। প্রায় ১০ হাজার ফুট উচ্চতায় ময়ূরের উপস্থিতি ভাবাচ্ছে ‘বার্ড ওয়াচারস সোসাইটি’কে। বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে রাজ্যে ছড়িয়ে থাকা অজানা-অচেনা পাখির খোঁজ করতে নেমে প্রবীরদের চোখে এই অভিনব ঘটনা ধরা পড়েছে।
পরিবেশে বদলের যে প্রভাব জলবায়ুর উপরে পড়ছে, তা নিয়ে ইতিমধ্যেই উদ্বেগজনক নানা তথ্য জানা গিয়েছে সংশ্লিষ্ট গবেষণাগুলিতে। পরিবেশ ধ্বংসের ফলে সারা দেশে যে সব রাজ্যে এই প্রভাব বেড়েছে, তার মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ অন্যতম। বেশ কয়েকটি রাজ্য এ ব্যাপারে ইতিবাচক উন্নতি করলেও এখানে তা হয়নি। বরং সবুজ কমেছে। সেই সঙ্গে পাহাড়ে বৃষ্টির পরিমাণও কমে চলেছে ক্রমাগত। তার প্রভাবই কি পড়েছে ময়ূরের এই পথবদলে?
পাখি-নজরদার সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য কণাদ বৈদ্যের কথায়, ‘‘বিষয়টি অভিনব তো বটেই, কিছুটা অবিশ্বাস্যও। কারণ, ময়ূর সাধারণত শুষ্ক পরিবেশ পছন্দ করে। সান্দাকফুর কাছে এই গ্রামের পাহাড়ে সেই অবস্থা হলে তা জলবায়ু বদলের ঘটনায় অন্য মাত্রা হিসেবে দেখা যেতে পারে।’’ শুধু তা-ই নয়, গত ১৩ এপ্রিল, যে দিন সোসাইটির সদস্যেরা ময়ূরের দেখা পেয়েছেন, সে দিন ওই অঞ্চলের তাপমাত্রা ছিল ২৫ থেকে ২৮ ডিগ্রি। তা-ও যথেষ্ট ভাবাচ্ছে তাঁদের।
বাংলায় পাখির বৈচিত্র কম নয়। সারা দেশে যে ১৩৫০ প্রজাতির পাখি রয়েছে, তাদের মধ্যে ৯৫০টির অস্তিত্ব এ রাজ্যেই রয়েছে। সেই পাখি-চর্চায় সান্দাকফুর রাস্তায় ময়ূর একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা হিসেবে যুক্ত হল। পাখিপ্রেমী সুদীপ্ত সোম ঘটনাটি অত্যন্ত ব্যতিক্রমী হিসেবেই দেখছেন। তাঁর কথায়, ‘‘সান্দাকফুতে ময়ূরের দেখা পাওয়া নিঃসন্দেহে প্রাকৃতিক ভারসাম্য নিয়ে ভাবাচ্ছে। বরফের দেশে ময়ূর হিসেবে পরিচিত ছিল ময়ূরের মতো দেখতে ‘হিমালয়ান মোনাল’।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy