রবি হাজরা
সকালে বাজারে মাছ যাবে। তাই রোজ দিনের মতো ভোর তিনটে থেকে ভাণ্ডারদহ বিলে মাছ ধরছিলাম। সঙ্গে ছিলেন পড়শি সুকুমার হালদার। দু’টো নৌকায় দু’জনে। ভোরে বেশ কুয়াশা ছিল। কিন্তু যত সকাল হয়েছে কুয়াশা পাতলা হয়ে আসছিল। মাছ ধরতে ধরতে আমরা সেতুর দিকে এগোচ্ছিলাম। সময় তখন সাতটার আশেপাশে হবে। হঠাৎ সেতুর উপর বিকট আওয়াজ। আমরা হকচকিয়ে যাই। তাকিয়ে দেখি রেলিং ভেঙে একটা বাস নীচে পড়ে যাচ্ছে! নিজের চোখকেই বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। জলে পড়া মাত্র বাসটা ভুস করে ডুবে গেল। ছ্যাৎ করে উঠল বুকটা।
সঙ্গে সঙ্গে পড়িমড়ি করে দাঁড় বাইতে থাকি। যত দ্রুত যাওয়া যায়। ততক্ষণে দু’এক জন করে ভেসে উঠছেন। হাত পা ছুড়ে বাঁচার চেষ্টা করছেন। সেতু উপরেও তখন অনেকে ছিলেন। তাঁরাও চিৎকার শুরু করেছেন, ‘‘বাস পড়ে গেল। বাস পড়ে গেল।’’ তাঁদের চিৎকারে আশাপাশের অনেকে নৌকা নিয়ে চলে আসলেন। সকলেই জেলে।
আমি ও সুকুমার সবার আগে গিয়ে পৌঁছে যাই। এক জন ছেলেকে টেনে কোনও রকমে নৌকায় তুলি। ভয়ে, ঠান্ডায় তিনি থরথর করে কাঁপছেন। ছোট নৌকা হওয়ার আর কাউকে তুলতে পারিনি। তাকিয়ে দেখি সুকুমারও এক জন ছেলেকে টেনে তুলেছে। তাঁদের পাড়ে রেখে ফের দু’জনে নৌকা নিয়ে যাই। আমি এক মেয়েকে টেনে তুলি। সুকুমার এক ছেলেকে। ততক্ষণে বাকিরাও উদ্ধারের কাজে হাত লাগিয়েছেন। আমরা সবাই মিলে মোট এগারো জনকে উদ্ধার করতে পেরেছিলাম।
আরও পড়ুন: ঊনত্রিশ সেকেন্ডের ফোন কলই ডেকে আনল বিপর্যয়
তারপর জলের দিকে তাকাচ্ছি। যদি কিছু দেখা যায়। কাউকে উদ্ধার করা যায়। কিন্তু আর কাউকে পাইনি।
এখন ভাবতে খারাপ লাগছে, আমরা যখন উদ্ধারের কাজে হাত লাগিয়েছি, ঠিক সেই সময়ে জলের নীচে বাসের ভেতর বিয়াল্লিশটা লোক ছটপট করছেন! একটু বাঁচার আশায়! সে কথা ভাবলে খেতে ইচ্ছে করে না। ঘুমোতে ইচ্ছে করে না। ইস, যদি লোকগুলোকে বাঁচাতে পারতাম।
উদ্ধারকারী একজন মৎস্যজীবী
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy