নামমাত্র ‘ফি’ নিয়ে ৩০ বছর ধরে চিকিৎসা করে আসছেন এই ডাক্তারবাবু। নিজস্ব চিত্র।
এই দুর্মূল্যের বাজারে মাত্র ২০ টাকায় অভিজ্ঞ চিকিৎসক! হ্যাঁ, বর্ধমানে রয়েছেন এমনই এক ডাক্তারবাবু। সেই ২০ টাকা দিতেও কেউ কেউ দিতে অপরাগ। তাতেও ডাক্তারবাবুর কোনও বিরক্তি নেই। বিনামূল্যেই অনেককে চিকিৎসা দেন। এ ভাবে ডাক্তারবাবুর চিকিৎসায় প্রাণে বেঁচেছিলেন এক রোগী। সুস্থ হয়ে তাঁর হাতে তুলে দিয়েছেন এক কেজি চাল। সেটা পেয়ে ডাক্তারবাবুর চোখ ছলছল। কেঁদে ফেললেন রোগীও।
আজকাল ভাল ডাক্তার মানেই মোটা দর্শনী নেন। তবে গত ৩০ বছর ধরে বর্ধমান শহরে মাত্র ২০ টাকায় রোগী দেখে আসছেন গীষ্পতি চক্রবর্তী। নামের উচ্চারণ যতটাই কঠিন, ব্যবহারে ততটাই তিনি সহজ-সরল। দক্ষিণেশ্বরের ছেলে গীষ্পতি পড়তে এসেছিলেন বর্ধমানে। তার পর সেই যে মানুষের মায়ার বাঁধনে পড়লেন, তার পর থাকেন এখানেই। এলাকার গরিব মানুষদের কাছে তিনি সাক্ষাৎ ‘দেবতা’।
বর্ধমানে চিকিৎসকের কমতি নেই। কয়েকশো পলিক্লিনিক আছে। রয়েছে বেসরকারি হাসপাতাল। পরিষেবাও ভাল। কিন্তু সেখানে চিকিৎসার খরচ মাঝেমাঝে নিম্ন মধ্যবিত্ত মানুষের ধরা-ছোঁওয়ার বাইরে চলে যায়। তখন তাঁদের আশা-ভরসা ‘গীষ্পতি ডাক্তার’। বর্ধমানের মিঠাপুকুর সোনার কালীবাড়ির পাশে গীষ্পতিবাবুর ডাক্তারখানা। সপ্তাহে দু’দিন বসেন রসিকপুরে। কখনও কখনও রোগী দেখেন টিকরহাটে। প্রথমে ১০ টাকা ‘ফি’ ছিল। পরে সেটা বাড়িয়ে ২০ টাকা করেন। এই ‘ফি’ দিতেও অনেক গরিব মানুষ অপরাগ।
মঙ্গলকোটের ঠাঙাপারা গ্রামের হাসিনা বিবি যকৃতের অসুখে ভুগছিলেন। তিনি নিজেই বাঁচার আশা ছেড়ে দিয়েছিলেন। শেষে গীষ্পতি ডাক্তারের নিখরচায় সেবায় আবার জীবন ফিরে পান। সুস্থ হয়ে ছেলের কাছ থেকে এক কিলোগ্রাম সুগন্ধি চাল নিয়ে ডাক্তারবাবুর চেম্বারে হাজির তিনি। সেই চাল হাতে নিয়ে ডাক্তারবাবুর চোখে জল আসে। বৃদ্ধাকে জড়িয়ে ধরে বলেন ‘‘আমি আমার কর্তব্য করেছি।’’ পাল্টা বৃদ্ধার কথা, ‘‘তুই আমার ব্যাটা। তোকে আল্লাহ পাঠিয়েছে।’’ শুনে চুপ করে যান ডাক্তারবাবু। এ ভাবেই গরিবের ডাক্তার সহ-নাগরিকের পাশে দাঁড়িয়ে মানবধর্ম পালন করে যাচ্ছেন।
শুধু ডাক্তারি নন, গীষ্পতি গল্পকার এবং প্রাবন্ধিকও বটে। বর্ধমান শহরে রয়েছেন প্রায় চার দশক ধরে। যাদবপুরে কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং ভর্তি হয়েও পরে বর্ধমান মেডিকেল কলেজে চলে আসেন ডাক্তারি পড়তে। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের হেলথ সেন্টারে প্রধান চিকিৎসক হিসাবে চাকরি নিয়েছিলেন। এখন অবসর জীবন।এই বয়সে গ্রামে-গ্রামে জনস্বাস্থ্য পরিষেবা দিতে ছুটে যান এই ডাক্তারবাবু। সুন্দরবনে জনস্বাস্থ্য আন্দোলনকে জোরদার করতে সেখানে নিয়মিত যান। জনস্বাস্থ্য বিষয়ক প্রবন্ধ লেখেন বিভিন্ন পত্রপত্রিকায়। ‘স্বাস্থ্য ও মানুষ’ পত্রিকার সম্পাদক চিকিৎসক গীষ্পতি এ ভাবেই লিখে চলেছেন ভাল থাকার সহজ ‘ফর্মুলা’।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy