বৃহস্পতিবার পূর্বস্থলীর শ্রীরামপুরে মহিলা ক্লাস্টারের অনুষ্ঠানে। নিজস্ব চিত্র
দরিদ্র পেরিয়ে নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছেন তাঁরা। পূর্বস্থলী ১ ব্লকের এমন হাজার চারেক মহিলা বৃহস্পতিবার নিজেদের উদ্যোগে নারী দিবস পালন করলেন। অনুষ্ঠানে নিজেদের সাফল্যের কাহিনি তুলে ধরে এলাকার অন্যান্যদের উদ্বুদ্ধ করলেন তাঁরা। সেই সঙ্গে নিজেদের ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার বইয়ের চাহিদা মেটাতে একটি ‘বই ব্যাঙ্ক’ তৈরির কথাও ঘোষণা করলেন।
তাঁত অধ্যুষিত শ্রীরামপুর পঞ্চায়েত এলাকায় মহিলাদের অনেকে তাঁত শ্রমিকের কাজ করলেও আয় ছিল সীমিত। তাঁদের ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই শুরু হয় ২০০৪ সালে। তৈরি হয় স্বয়ম্ভর গোষ্ঠী। এখন এলাকায় রয়েছে ৪১৫টি গোষ্ঠী। তার মধ্যে চারশোর বেশি গোষ্ঠী মহিলাদের নিয়ে, যার সদস্য সংখ্যা সাড়ে চার হাজারেরও বেশি। এই সব গোষ্ঠীর সদস্যদের নিয়ে তৈরি হয়েছে ‘শ্রীরামপুর সর্বজয়া মহিলা মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড’ নামে একটি ক্লাস্টার। সম্প্রতি সমবায় আইনে তার রেজিস্ট্রেশনও হয়েছে।
মেয়েদের এই ক্লাস্টার সূত্রে জানা যায়, তারা পানীয় জল, হাতে ভাজা মুড়ি ও ন্যাপকিন উৎপাদনে বাণিজ্যিক ভাবে সফল। ২০১৫-১৬ আর্থিক বছরে নাবার্ডের বিশেষ পুরস্কারও পায় তারা। এখন গোষ্ঠীগুলির ব্যাঙ্ক ঋণ রয়েছে প্রায় ১৯ কোটি। সারা বছর ব্যবসায়িক লেনদেন করে ২৪ কোটি টাকার। এর মধ্যে নিজেদের সম্পদ তৈরি হয়েছে ৩ কোটি টাকার।
কী ভাবে মেয়েরা ঘুরে দাঁড়িয়ে সফল হল, এ দিন তা নিয়েই ছিল আলোচনা। ক্লাস্টারের কার্যালয় প্রাঙ্গণে তৈরি করা হয় মঞ্চ। আমন্ত্রণ জানানো হয় রাজ্যের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি দিলীপ মল্লিক, শ্রীরামপুর পঞ্চায়েতের প্রধান আজিজুন্নেসা খাতুন-সহ অনেককে। সভায় জানানো হয়, শাড়ি, ফুচকা, বিড়ির কারখানা, প্রাণী পালন-সহ নানা ব্যবসা করে এলাকার মেয়েরা সফল। এর মধ্যে ৪৫টি গোষ্ঠীর ব্যাঙ্ক ঋণের পরিমাণ ১০ লক্ষ টাকা করে। সুচিত্রা সরকার, দীপালি দেবনাথরা জানান, বছর দশেক আগেও বাড়িতে কোনও তাঁতযন্ত্র ছিল না। অন্যের বাড়িতে তাঁত বুনে উপার্জন করতে হত। এখন নিজেদের ঘরেই ১০টি করে তাঁতযন্ত্র রয়েছে। গোষ্ঠী গড়ে মিলেছে সাফল্য। একটি গোষ্ঠীর সদস্য ভানু দেবনাথের কথায়, ‘‘প্রথমে ব্যাঙ্ক ঋণ নিয়ে যখন ফুচকার ব্যবসা শুরু করি, তখন অনেকেই কটাক্ষ করেছিল। এখন সেই ব্যবসাই স্বচ্ছল করে তুলেছে।’’
অনুষ্ঠানে ওই ক্লাস্টারের তরফে জানানো হয়, গোষ্ঠীর বহু সদস্যের ছেলেমেয়েদের পাঠ্যপুস্তকের বাইরেও নানা বই কিনতে হয়। তাতে সাহায্য করার জন্য তৈরি করা হয়েছে একটি ‘বই ব্যাঙ্ক’। যেখানে অষ্টম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত নানা বই এক বছরের জন্য পড়ার সুবিধে দেওয়া হবে। মন্ত্রী স্বপনবাবু বলেন, ‘‘গোষ্ঠী করে এত মহিলার এক সঙ্গে ঘুরে দাঁড়ানো বাকিদের কাছে অনুপ্ররেণা। শ্রীরামপুরের মেয়েদের লড়াই অন্যদের পথ দেখাবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy