Advertisement
০৯ নভেম্বর ২০২৪

কথা বন্ধ অসুস্থ স্ত্রীর, ইছাপুরে বৃদ্ধ আত্মঘাতী

দিন কয়েক আগে স্ত্রী মীনাক্ষী রায়ের মৃত্যুশোক সইতে না-পেরে নিজের গলায় ছুরি চালিয়ে আত্মঘাতী হয়েছিলেন বেহালার পর্ণশ্রী থানা এলাকার বেণী মাস্টার লেনের বৃদ্ধ রথীন্দ্রনাথ রায়।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

সুপ্রকাশ মণ্ডল
ইছাপুর শেষ আপডেট: ২৬ মার্চ ২০১৮ ০৩:১৫
Share: Save:

বেহালা-কাণ্ডের ছায়াই এ বার যেন ইছাপুরে!

দিন কয়েক আগে স্ত্রী মীনাক্ষী রায়ের মৃত্যুশোক সইতে না-পেরে নিজের গলায় ছুরি চালিয়ে আত্মঘাতী হয়েছিলেন বেহালার পর্ণশ্রী থানা এলাকার বেণী মাস্টার লেনের বৃদ্ধ রথীন্দ্রনাথ রায়। উত্তর ২৪ পরগনার ইছাপুরের মায়াপল্লির রমা চট্টোপাধ্যায় পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে পড়েন মাসখানেক আগে। মঙ্গলবার থেকে তাঁর কথাও বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। অবসাদ গ্রাস করেছিল তাঁর স্বামী বরুণ চট্টোপাধ্যায়কে (৬৫)। শনিবার সন্ধ্যায় বাড়ি থেকেই বরুণবাবুর ঝুলন্ত দেহ মিলল। রমাদেবী তখন পাশের ঘরে বিছানায় শুয়ে।

নিকটাত্মীয়ের মৃত্যু বা অসুস্থতায় প্রবীণ মানুষদের একাকিত্ব নিয়ে চর্চা শুরু হয়েছিল রথীন্দ্রনাথবাবু আত্মঘাতী হওয়ার পরেই। শনিবার বরুণবাবুর আত্মঘাতী হওয়ার ঘটনাও সেই প্রশ্ন ফের উস্কে দিল। তাঁর আত্মীয়েরা জানান, দম্পতি নিঃসন্তান ছিলেন। দিনকয়েক আগে স্ত্রীর অসুস্থতা বাড়ায় আত্মীয়দের তিনি জানিয়েছিলেন, রমার এই অবস্থা তিনি মেনে নিতে পারছেন না। প্রশ্ন তুলেছিলেন, ‘‘ও তো আমার সঙ্গে কথাও বলছে না। আমি তা হলে কার সঙ্গে কথা বলব?’’ আত্মীয়েরা অভয় দিয়েছিলেন, সব ঠিক হয়ে যাবে। তাতে যে বরুণবাবু আশ্বস্ত হননি, তার প্রমাণ মিলল শনিবার।

পুলিশ ও ওই পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, বরুণবাবু একটি বেসরকারি সংস্থায় কাজ করতেন। স্ত্রী শয্যাশায়ী হয়ে পড়ায় তিনি কাজ ছেড়ে দেন। স্ত্রীর সেবাযত্ন নিজের হাতে করতেন। নিয়মিত ফিজিওথেরাপিতে প্রায় সুস্থ হয়ে উঠেছিলেন রমাদেবী। হাঁটাহাটিও শুরু করেছিলেন। কিন্তু গত মঙ্গলবার সিঁড়ি থেকে পড়ে গিয়ে কথা বলার শক্তি হারিয়ে ফেলেন তিনি। আর জি কর হাসপাতালের চিকিৎসকেরা জানিয়েছিলেন, রমাদেবীর স্নায়ুর সমস্যা রয়েছে। নিয়মিত চিকিৎসা আর সেবাযত্নেই সুস্থ হয়ে উঠবেন তিনি। কিন্তু এ কথা বরুণবাবুকে আশ্বস্ত করতে পারেনি।

শনিবার দুপুরে রমাদেবীর ভাইয়ের স্ত্রী শুক্লার সঙ্গে ফোনে কথা হয় বরুণবাবুর। কিন্তু বিকেলের পর থেকে বরুণবাবুকে আর কেউ ফোনে পাননি। শ্যামনগর থেকে রমাদেবীর এক বোন এবং এক ভাই ওই বাড়িতে গিয়ে ডাকাডাকি করে সাড়া পাননি। ঘরের দরজা ভেঙে দেখা যায় বাইরের ঘরে বিস্ফারিত চোখে বিছানায় শুয়ে রমাদেবী। ভিতরের বন্ধ ঘরে বরুণবাবুর ঝুলন্ত দেহ দেখতে পেয়ে পুলিশে খবর দেন তাঁরা। পুলিশের অনুমান, স্ত্রীর অসুস্থতায় অবসাদ এবং হতাশা থেকেই আত্মঘাতী হন বরুণবাবু। দেহ ময়নাতদন্তে পাঠানো হয়েছে।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE