ডিসচার্জের কাগজে সই করছেন মুকুন্দ দত্ত। —নিজস্ব চিত্র
পরিবারের কারও ভরসায় থাকেননি। তাঁর ডিসচার্জ নথিতে সই করুক কোনও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা, এমনটাও চাননি তিনি। নিজেই নিজের ডিসচার্জের কাগজে সই করে পুরুলিয়া মানসিক হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে গেলেন মুকুন্দ দত্ত। স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে কৃতসঙ্কল্প, বছর একষট্টির এই প্রৌঢ়ের মানসিক জোর দেখে অবাক হচ্ছেন চিকিৎসক থেকে শুরু করে হাসপাতালের কর্মীরাও।
২০১৯ সালের জুন। একটি ঘটনার পরে আচমকাই মুকুন্দবাবুর ঠিকানা হয়ে গিয়েছিল ঝাড়গ্রাম মহকুমা হাসপাতাল। ‘আননোন’ হিসেবে হাসপাতালের খাতায় নাম নথিভুক্ত হয়ে যায় তাঁর। মুকুন্দবাবুর কথায়, ‘‘কয়েক দিন বাদে একটু সুস্থ হওয়ার পরে আমি বলেছিলাম, পুলিশ যখন ভর্তি করিয়ে গিয়েছে, তারাই আমাকে ছাড়িয়ে নিয়ে যাক। এই নিয়ে বাগ্বিতণ্ডায় আমাকে বার করে দেন হাসপাতালের কয়েক জন কর্মী। পরে অ্যাসিস্ট্যান্ট সুপারের হস্তক্ষেপে ফের ওয়ার্ডে দেওয়া হয়।’’ পরে অবশ্য আদালতের নির্দেশে তাঁকে অন্যত্র স্থানান্তরিত করে পুলিশ।
কোন ঘটনার পরে বদলে গিয়েছিল ওই প্রৌঢ়ের ঠিকানা? মুকুন্দবাবু জানালেন সেই দিনটির কথা। রক্তপরীক্ষার জন্য ঝাড়গ্রামের এক বেসরকারি ক্লিনিকে গিয়েছিলেন তিনি। তখনই কোনও বিষয় নিয়ে সেখানকার কর্মীদের সঙ্গে তাঁর মতান্তর হয়। তার পরেই পুলিশ এসে তাঁকে তুলে নিয়ে ভর্তি করিয়ে দেয় ঝাড়গ্রাম মহকুমা হাসপাতালে। সেখানে প্রায় ১৯ দিন থাকার পরে আরও ভাল চিকিৎসার কথা বলে তাঁকে ফের পুরুলিয়া মানসিক হাসপাতালে (ইনস্টিটিউট ফর মেন্টাল কেয়ার) ভর্তি করানো হয়। সেখানে চিকিৎসার পরে মুকুন্দবাবু এখন সুস্থ।
আরও পড়ুন: নাগরিকত্ব আলোচনা, অনুমতি বাতিল আইআইটির
পুরুলিয়ার হাসপাতালে ওই প্রৌঢ়ের চিকিৎসক ছিলেন সুদীপ্ত মালিক। ‘‘সাইকোসিস, নট আদারওয়াইজ় স্পেসিফায়েড— এই ছিল মুকুন্দবাবুর ডায়াগনসিস। ভর্তির সময় তিনি উদ্ভ্রান্ত ছিলেন। তাঁর কথাবার্তা এবং ব্যবহারে অসঙ্গতি ছিল। চিকিৎসার পরে বর্তমানে তিনি সুস্থ,’’ বললেন সুদীপ্তবাবু।
চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, মানসিক স্বাস্থ্য আইন-২০১৭ অনুযায়ী এক জন মনোরোগী সুস্থ হওয়ার পরে তাঁকে আর হাসপাতালে রাখা যায় না। চিকিৎসকেরা যদি রোগীকে সুস্থ মনে করেন, সে-ক্ষেত্রে পরিবারের লোকজন তাঁকে হাসপাতাল থেকে ছাড়াতে না-এলেও তিনি নিজেই নিজের দায়িত্ব নিতে পারেন। মুকুন্দবাবুর ক্ষেত্রে ‘জাজমেন্ট টেস্ট’ করে চিকিৎসকেরা নিশ্চিত হন যে, তিনি সুস্থ এবং নিজের দায়িত্ব নিতে সমর্থ। ইতিমধ্যেই যোগাযোগ করা হয় এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সঙ্গে। ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সিনিয়র প্রোগ্রাম ম্যানেজার শুক্লা দাসবড়ুয়া জানান, ‘‘আপাতত কিছু দিন মুকুন্দবাবুর খোঁজখবর এবং দেখভালের ব্যবস্থা করবে আমাদের সংস্থা।’’
ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার তরফে রত্নাবলী রায়ের প্রশ্ন, ‘‘মানসিক স্বাস্থ্য আইন মেনে মনোরোগীকে এখনও শারীরিক অসুখে ভোগা রোগীদের মতোই কেন ভাবতে পারি না আমরা?” তাঁর মতে, “বর্তমান সামাজিক প্রেক্ষাপটে পরিবারের সংজ্ঞা বদলেছে। রোগী নিজেই নিজের পরিবার। রাষ্ট্র বা স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার মুখাপেক্ষী না-হয়ে নিজের মতো জীবন কাটানোর ব্যাপারে মুকুন্দবাবুর সিদ্ধান্ত সেই পরিবর্তনকে আরও দৃঢ় করে। যা দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy