মাওবাদীরা একের পর এক কমিউনিটি হল ধ্বংস করে দিয়েছিল। সেই স্মৃতি এখনও না মুছলেও জঙ্গলমহলে সেই আতঙ্ক এখন নেই। তাই ঝাড়খণ্ড সীমানা লাগোয়া পুরুলিয়ার জঙ্গলমহলে ৪৪টি কমিউনিটি হল তৈরি করতে চলেছে প্রশাসন। ওই সব হল সাধারণ বাসিন্দারা সামাজিক প্রয়োজনে ব্যবহার করবেন বলে জানানো হয়েছে।
২০০৬ এর ২২ জানুয়ারি বান্দোয়ানের দুয়ারসিনিতে মাওবাদীরা ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরণ ঘটিয়ে একটি নির্মীয়মান কমিউনিটি হল উড়িয়ে দিয়েছিল। তার মাস ছয়েকের মধ্যে বরাবাজারের বেড়াদায় এ রকম আরও একটি নির্মীয়মাণ হল মাওবাদীরা ধসিয়ে দিয়েছিল।
পুরুলিয়ার বান্দোয়ানের গুড়পানা গ্রামটি বাঁকুড়া ও পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার সীমানায়। কয়েক কিলোমিটারের মধ্যে ঝাড়খণ্ডের সীমানা। এখানে কমিউনিটি হল তৈরি করতে গিয়ে পুলিশকে বেশ বেগ পেতে হয়েছিল। মাওবাদীরা নির্মাণ কাজ চলার সময় দু’বার মাইন ফাটিয়ে ধসিয়ে দিয়েছিল। পরে সিআরপিএফ জওয়ানরা পালা করে পাহারার দায়িত্ব নেওয়ায় কমিউনিটি হল তৈরির কাজ শেষ করা যায়।
দুয়ারসিনিতে যুব দফতরের আর্থিক বরাদ্দে দোতলা ভবনটি নির্মাণ হচ্ছিল। ভবনটির চারদিক এমন ভাবে ধসে গিয়েছে যে তা আর মেরামত করা সম্ভব হয়নি। সেই সময় জেলা প্রশাসন ও পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, এই কমিউনিটি হলগুলি এলাকার সাধারণ মানুষ নানা প্রয়োজনে ব্যবহার করতে পারবেন। গ্রামের বিভিন্ন সামজিক অনুষ্ঠান, সভা ওই হলঘরে করা যাবে। কিন্তু মাওবাদীদের ধারণা হয়েছিল, পুলিশের থাকার জন্যে এই সব কমিউনিটি হল তৈরি করা হচ্ছে। তাই হামলা।
সময় পাল্টেছে। সরকার বদলেছে। জঙ্গলমহলে মাওবাদীরা ফের সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে বলে বিভিন্ন সূত্রে পুলিশের কাছে খবর এলেও সেই ভীতি আর নেই। সম্প্রতি জেলা প্রশাসন পুরুলিয়া জেলার ঝাড়খণ্ড সীমানা বরাবর ৪৪টি নতুন কমিউনিটি হল তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে। এই জেলায় ৯টি থানা মাওবাদী প্রভাবিত বলে চিহ্নিত করেছিল প্রশাসন। থানাগুলি হল: বান্দোয়ান, বোরো, বরাবাজার, বলরামপুর, আড়শা, বাঘমুণ্ডি, ঝালদা, কোটশিলা ও জয়পুর। শুধুমাত্র আড়শা থানার কোনও এলাকা ঝাড়খণ্ড সীমানা লাগোয়া নয়। আড়শা বাদে বাকি ৮টি থানা এলাকায় ওই নতুন কমিউনিটি হলগুলি তৈরি করা হচ্ছে।
পুরুলিয়ার জেলাশাসক তন্ময় চক্রবর্তী বলেন, “জেলায় ঝাড়খণ্ড সীমানা এলাকা জুড়ে ৪৪টি কমিউনিটি হল নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এই হলগুলি গ্রামের বাসিন্দারা বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করতে পারবেন। সেখানে গ্রন্থাগার গড়ে তোলা হবে। এলাকার যুবকেরা ওই হলঘরে খেলাধুলোর সরঞ্জাম রাখতে পারবেন।” আরও বিশদে ব্যাখ্যা করেন জেলা প্রশাসনের এক পদস্থ কর্তা। তিনি জানান, সীমানা এলাকায় এমন বহু গ্রাম আছে যেখানে কমিউনিটি হলটিই হয়তো একমাত্র পাকা ঘর হবে। ওই হলঘরের ভিতরে শৌচাগার ও জলের ব্যবস্থা থাকবে। বিদ্যুৎ সরবরাহের সুযোগ থাকলে কমিউনিটি হলে বৈদ্যুতিক আলোরও ব্যবস্থা করা হবে। এলাকায় অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের ঘর না থাকলে ওই কমিউনিটি হল সেই কাজে ব্যবহার করা যেতে পারে। প্রয়োজনে সেখানে স্বাস্থ্যশিবির করা যেতে পারে। এক হিসাবে ওই হলঘরটি বাসিন্দাদের বহুবিধ কাজে লাগবে। জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, প্রথমে এই কাজের জন্য পুলিশকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। জেলা পুলিশ সুপার নীলকান্ত সুধীরকুমার বলেন, “পুলিশের হাতে টেকনিক্যাল লোক নেই। তা ছাড়া নির্মাণকাজ চালানোর মতো পরিকাঠামোও আমাদের নেই। তাই পুলিশের সহযোগিতা নিয়ে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কাজ শুরু হয়েছে।”
বিডিও (বরাবাজার) অনিমেষকান্তি মান্না জানান, বরাবাজারে ৫টি হল নির্মাণের জন্য তাঁরা জায়গা বাছাই করেছেন। এ জন্য সরকারি খাস জায়গা দেখা হয়েছে। নির্মাণকাজের জন্য ই-টেন্ডার করা হয়েছে। বান্দোয়ানের বিডিও মধুসূদন মণ্ডল বলেন, “প্রত্যেকটি কমিউনিটি হল ১ হাজার বর্গফুট আয়তনের হচ্ছে। নির্মাণ বাবদ খরচের ১৮ লক্ষ করে টাকা যুব কল্যাণ দফতর থেকে মিলেছে। আশা করছি আগামী আর্থিক বছর শুরু হওয়ার আগেই নির্মাণ কাজ শেষ হয়ে যাবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy