ডায়মন্ড হারবার শহরে নার্সিংহোমের সংখ্যা প্রায় ১৭টি। এ ছাড়াও আছে জেলা হাসপাতাল। জেলা হাসপাতাল ভুগছে তার নিজের সমস্যায়। চিকিৎসা পরিষেবা নিয়ে বহু অভিযোগ সেখানে। নার্সিংহোমগুলির পরিকাঠামো নিয়েও অভিযোগের অন্ত নেই। অথচ, মহকুমা সদর হওয়ায় ডায়মন্ড হারবারে রোগীর চাপ প্রচুর। কাকদ্বীপ, বারুইপুর ছাড়াও সুন্দরবনের প্রত্যন্ত বহু এলাকা থেকে অসংখ্য রোগী আসেন এখানে।
নার্সিংহোমের পরিষেবা নিয়ে নানা সময়ে একাধিক সমস্যার কথা জানিয়েছেন রোগী ও তাঁর পরিবারের লোকজন। অভিযোগ, অধিকাংশ নার্সিংহোমে দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের শংসাপত্র নেই। অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা সম্পর্কে কোনও সচেতনতাই নেই। এ ছাড়াও, পর্যাপ্ত আলো, পানীয় জল, শৌচাগার নেই বলেও অভিযোগ। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অভাব আছে। কর্মীর সংখ্যাও অপ্রতুল। অধিকাংশ নার্সিংহোমের নির্দিষ্ট মালিকানারই হদিস মেলে না বলেও নানা সময়ে অভিযোগ সামনে এসেছে। অন্যান্য নানা পরিকাঠামো সরকারি নির্দেশ মেনে হয় না অধিকাংশ নার্সিংহোমে, অভিযোগ এমনটাই।
হাতে গোনা কয়েকটি নার্সিংহোম ছাড়া বেশির ভাগ নার্সিংহোমে অপারেশন থিয়েটার নেই। ২৪ ঘণ্টা এক জন মেডিক্যাল অফিসার থাকার কথা। কিন্তু তাঁদেরও দেখা মেলে না। নার্সিংহোমে নিয়ে এলে দীর্ঘ সময় পর্যন্ত চিকিৎসা না করে ফেলে রাখা হয় রোগীকে, এমন অভিযোগও আছে। পরে অবস্থার অবনতি হলে পাঠিয়ে দেওয়া হয় কলকাতায়। সে ক্ষেত্রে আবার স্থানীয় অ্যাম্বুল্যান্স মালিকদের সঙ্গে কলকাতার কিছু নার্সিংহোমের অবৈধ ঘনিষ্ঠতার অভিযোগ ওঠে বারে বারেই। রোগীকে সেখানে ভর্তি করতে নিয়ে গেলে নির্দিষ্ট কমিশনের ব্যবস্থা আছে। যার বখরা পায় ডায়মন্ড হারবারের সংশ্লিষ্ট নার্সিংহোম এবং ওই অ্যাম্বুল্যান্স মালিক। যে কারণে, রোগীর পছন্দ মতো নার্সিংহোমে নিয়ে না গিয়ে নির্দিষ্ট কিছু জায়গাতেই নিয়ে যেতে আগ্রহী থাকে অ্যাম্বুল্যান্সগুলি।
বাসিন্দাদের অভিযোগ, বেশির ভাগ নার্সিংহোম চলছে চিটফান্ডের মতো। হাতুড়ে চিকিৎসকের সঙ্গে নার্সিংহোমের এক শ্রেণির দালালরা নিয়মিত যোগাযোগ রাখে। কোনও রোগীকে নির্দিষ্ট নার্সিংহোমে পাঠাতে পারলে মোটা অঙ্কের কমিশন মেলে বলে অভিযোগ। বেশ কিছু নার্সিংহোমে হাতুড়ে চিকিৎসকের দিয়ে সিজার করানো হয়। আয়াদের দিয়ে ডেলিভারি করানো হয় বলেও অভিযোগ। চিকিৎসার নামে দীর্ঘ দিন আটকে রেখে বিল বাড়ানোর অভিযোগও নিয়মিত ওঠে। এ সব কারণে অনেক সময়ে ডায়মন্ড হারবারের বাসিন্দারা স্থানীয় নার্সিংহোমে রোগীকে নিয়ে যাওয়ার থেকে কলকাতায় নিয়ে যাওয়াই শ্রেয় মনে করেন।
পরিষেবা নিয়ে সমস্যার কথা অবশ্য মানতে নারাজ ডায়মন্ড হারবার জেলা হাসপাতালের সুপার আনোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, “পরিষেবা-সংক্রান্ত কোনও সমস্যা হলে সে জন্য কমপ্লেন বক্স রাখা হয়েছে। কিন্তু গত ছ’মাসে কোনও অভিযোগ পাইনি।” মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক অসীম দাস মালাকার নার্সিংহোম প্রসঙ্গে বলেন, “কোনও নিদিষ্ট অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলেই নিশ্চয়ই ব্যবস্থা নেব।” প্রতি মাসেই বিভিন্ন নার্সিংহোমে অভিযান চালানো হয় বলেও মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের দাবি।
একটি নার্সিংহোমের মালিক জ্ঞানরঞ্জন হালদার বলেন, “নার্সিংহোমগুলির সংগঠন নেই। হাতুড়ে ডাক্তার কোথাও কোথাও কাজ করে। এটা ঠিক নয়। সরকারি নির্দেশ মেনেই পরিষেবা দেওয়া উচিত।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy