Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

তল্লাশির সময় নিরীহ যুবকের মৃত্যু, অভিযুক্ত পুলিশ

এক বছর আগে একটি হামলার ঘটনায় এক অভিযুক্তের খোঁজে বাড়ি বাড়ি তল্লাশি চালাচ্ছিল পুলিশ। সেই তল্লাশির সময়েই এক নিরীহ যুবকের মৃত্যুতে তদন্তের মুখে পড়ল তারা। শুক্রবার রাতে হাবরার বেড়গুম এলাকার ঘটনা। চিত্তরঞ্জন সর্দার (৩৪) নামে ওই যুবকের মৃত্যুর জন্য তাঁর পরিবার এবং স্থানীয়েরা পুলিশকেই দায়ী করেছেন। তাঁদের অভিযোগ, নিরপরাধ ওই যুবকের ঘরের দরজায় পুলিশ যে ভাবে ধাক্কাধাক্কি করে এবং লাথি মারে, তাতে ভয়ে তড়িঘড়ি দরজা খুলতে গিয়ে ওই যুবক একটি কাঠের টুকরোয় চোট পেয়ে পড়ে গিয়ে মারা যান।

সীমান্ত মৈত্র
হাবরা শেষ আপডেট: ১৯ অক্টোবর ২০১৪ ০১:৩৯
Share: Save:

এক বছর আগে একটি হামলার ঘটনায় এক অভিযুক্তের খোঁজে বাড়ি বাড়ি তল্লাশি চালাচ্ছিল পুলিশ। সেই তল্লাশির সময়েই এক নিরীহ যুবকের মৃত্যুতে তদন্তের মুখে পড়ল তারা।

শুক্রবার রাতে হাবরার বেড়গুম এলাকার ঘটনা। চিত্তরঞ্জন সর্দার (৩৪) নামে ওই যুবকের মৃত্যুর জন্য তাঁর পরিবার এবং স্থানীয়েরা পুলিশকেই দায়ী করেছেন। তাঁদের অভিযোগ, নিরপরাধ ওই যুবকের ঘরের দরজায় পুলিশ যে ভাবে ধাক্কাধাক্কি করে এবং লাথি মারে, তাতে ভয়ে তড়িঘড়ি দরজা খুলতে গিয়ে ওই যুবক একটি কাঠের টুকরোয় চোট পেয়ে পড়ে গিয়ে মারা যান। ঘটনার প্রতিবাদে এবং দোষী পুলিশকর্মীদের শাস্তির দাবিতে শনিবার সকালে তাঁরা প্রায় ছ’ঘণ্টা হাবরা-বসিরহাট সড়ক অবরোধ করেন। অবরোধ তুলতে গেলে পুলিশকে ঘিরেও বিক্ষোভ শুরু হয়।

হাবরা থানার পুলিশ ওই যুবকের মৃত্যুর জন্য তারা দায়ী নয় বলে দাবি করেছে। তাদের দাবি, চিত্তরঞ্জনের ঘরে অভিযুক্ত লুকিয়ে থাকতে পারে, এই সন্দেহে ডাকামাত্র চিত্তরঞ্জন নিজেই দরজা খুলে দেন এবং তার পরেই অসুস্থ হয়ে পড়েন। পুলিশই তাঁকে হাবরা হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা মৃত ঘোষণা করেন। ওই যুবক আগে থেকেই অসুস্থ ছিলেন বলে দাবি করেছেন হাবরা থানার পুলিশের কেউ কেউ। ওই রাতেও পুলিশ অভিযুক্তকে ধরতে পারেনি।

মৃতের আত্মীয় ও স্থানীয় বাসিন্দারা পুলিশের দাবি মানতে চাননি। মৃতের ভাইপো দীপক সর্দার এ দিন হাবরা থানায় পুলিশের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। তিনি বলেন, “পুলিশ গ্রেফতারি পরোয়ানা ছাড়াই ওই বাড়িতে ঢুকেছিল। নিরাপরাধ কাকার মৃত্যু পুলিশের জন্যই। আমরা চাই, দোষী পুলিশকর্মীদের বিরুদ্ধে আইনত ব্যবস্থা নেওয়া হোক।”

উত্তর ২৪ পরগনার ভারপ্রাপ্ত এসপি ভাস্কর মুখোপাধ্যায় বলেন, “মৃতের পরিবার অভিযোগ, পুলিশি তল্লাশির সময়ে দরজায় ধাক্কা লেগে চিত্তরঞ্জনের মৃত্যু হয়। দেহটি ময়না-তদন্তে পাঠানো হয়েছে। পুলিশের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের তদন্ত হচ্ছে।”

চিত্তরঞ্জন হাসনাবাদের আঁধারচক গ্রামের বাসিন্দা। কিন্তু দশ বছর ধরে তিনি বেড়গুম এলাকায় সবিতা ঘোষ নামে এক মহিলার বাড়িতে ছিলেন। গত বছর পুজোয় এলাকার এক মহিলার শ্লীলতাহানির অভিযোগ ওঠে শান্তনু এবং অতনু চট্টোপাধ্যায় নামে দুই যমজ ভাইয়ের বিরুদ্ধে। ওই দুই ভাই এলাকার ১০ জনের বিরুদ্ধে বিজয়া দশমীর দিন তাদের বাড়িতে হামলা ও মারধরের অভিযোগ করেন থানায়। অভিযুক্তদের মধ্যে সাত জন বারাসত আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন পান। সেই সময়ে পুলিশ স্বরূপ চট্টোপাধ্যায় নামে এক যুবক-সহ অভিযুক্ত বাকি তিন জনের নাগাল পায়নি। তাদের ‘পলাতক’ দেখিয়ে মামলার চার্জশিট জমা দেয় পুলিশ। মাস ছয়েক আগে আদালত স্বরূপ-সহ ওই তিন জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে।

শুক্রবার গভীর রাতে পুলিশ প্রথমে স্বরূপের বাড়িতে হানা দেয়। কিন্তু সেখানে তাকে পায়নি। এর পরেই হানা দেয় সবিতাদেবীর বাড়িতে। স্বরূপ সবিতাদেবীর বাড়িতে লুকিয়ে রয়েছে, গোপন সূত্রে এমন খবরই মিলেছিল বলে পুলিশের দাবি। দরজা খুলে দেন সবিতাদেবীই। সেই সময়ে একটি ঘরে ঘুমোচ্ছিলেন চিত্তরঞ্জন।

সবিতাদেবীর অভিযোগ, “পুলিশ অমানবিক আচরণ করে। জোরে দরজা ধাক্কা দেয়। এখানে স্বরূপ নেই বলা সত্ত্বেও কথা কানে নেয়নি। প্রতিটি ঘরে তল্লাশি চলায়। চিত্তরঞ্জনের ঘরের দরজায় জোরে ধাক্কা দেয়, লাথি মারে। তার পরে তো ওই কাণ্ড!” চিত্তরঞ্জনের মৃত্যু-সংবাদ শুনে শনিবার সকালেই বেড়গুমে চলে আসেন তাঁর পরিবারের লোকজন। ফুটবল মাঠের ভাল খেলোয়াড় এবং ভাল রেফারি হিসেবে নাম ছিল চিত্তরঞ্জনের।

অন্য বিষয়গুলি:

habra simanta maitra chittarangan sardar police
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE