বিলাসিনী দেবীর সঙ্গে বিডিও শান্তনু সিংহ ঠাকুর। —নিজস্ব চিত্র।
বাবা-মায়ের দেওয়া নামের সঙ্গে জীবন মেলে না। শেষ বয়সে মাথার উপর ছাদ ফিরে পেয়ে তাই আক্ষরিক অর্থেই তিনি এখন বিলাসিনী। সৌজন্যে ‘নাতির বয়সি’ বিডিও। নিজে হাতে বৃদ্ধার ভাঙাঘর সারিয়ে দিয়েছেন। তাতেই সব ফিরে পাওয়ার আনন্দে বিহ্বল অশীতিপর বিলাসিনী গিরি। দু’হাত তুলে তরুণ বিডিও-কে আশীর্বাদে ভরিয়ে দিয়েছেন।
ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের ক্ষত এখনও দগদগে সুন্দরবনের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে। এর মধ্যে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ভাঙন কবলিত মৌসুনি দ্বীপ। গ্রামের পর গ্রাম ধূলিসাৎ হয়ে গিয়েছে। এর মধ্যে বাগডাঙা দ্বীপও রয়েছে। সেখানকারই বাসিন্দা বিলাসিনী। ফলে ত্রাণ শিবিরেই আশ্রয় নিয়েছিলেন স্থানীয়রা। জল নামতে শুরু করলে সম্প্রতি ঘরে ফিরতে শুরু করেন। নতুন করে সংসার সাজানোর লড়াই শুরু হয়।
কিন্তু গ্রামে ফিরে মাথায় হাত পড়ে বিলাসিনীর। স্বামীর গেঁথে যাওয়া বাখারির দেওয়া ঘর, আর এক চিলতে ‘দোর’, সম্পত্তি বলতে এটুকুই তাঁর। কিন্তু ঝড়জলের দাপটে সে সব নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছে। দাঁড়িয়ে রয়েছে শুধু কঙ্কালসার কাঠামোটুকু। তবু নিজের ঘর ছেড়ে নড়তে চাননি বিলাসিনী। তাই ভাঙা দরজার এক কোণেই ঠাঁই নেন।
সে খবর ছড়িয়ে পড়তেই কালবিলম্ব না করে লোকজন-সহ বিলাসিনীর কাছে হাজির হন নামখানার বিডিও শান্তনু সিংহঠাকুর। ত্রিপল এবং ত্রাণসামগ্রী নিয়ে কাজে লেগে পড়ে তাঁর লোকজন। আর জীর্ণ বারান্দার একধারে বিলাসিনীর সঙ্গে গল্প জুড়ে দেন শান্তনু। কাজে দেরি হচ্ছে দেখে এক সময় উঠে পড়েন। বাকিদের সঙ্গে নিজেও ঘর মেরামতিতে হাত লাগান।
গ্রামের চৌহদ্দি না পেরনো বিলাসিনী বিডিও-র কাজকর্ম সম্পর্কে যেটুকু জানতেন, তার মধ্যে নিজে হাতে ঘর সারানো ছিল না। অফিসের ‘সাহেব’ নিজে হাতে ত্রিপল টাঙাচ্ছেন, নিজের চোখে দেখে প্রথমে বিশ্বাসই হয়নি তাঁর। পরে ধাতস্থ হতে বছর আঠাশের শান্তনুকে দু’হাত ভরে আশীর্বাদ করেন তিনি।
বিলাসিনীর কথায়, ‘‘বিডিওসাহেব নিজে আমার বাড়ি মেরামত করে দিয়েছেন। বয়সে তো আমার নাতির মতোই। এই খারাপ সময়ে আমাদের মতো অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। আশীর্বাদ করি অনেক বড় হন উনি।’’ শুধু বাড়ি সারাই নয়, বিলাসিনীর হাতে নতুন কাপড়, সারা মাসের রেশনও তুলে দেন শান্তনু।
তবে তিনি শুধু নিজের দায়িত্বটুকুই পালন করেছেন, তার চেয়ে বেশি কিছু নয় বলে জানিয়েছেন শান্তনু। বাঁকুড়ার ক্রিস্টান কলেজ থেকে ইংরেজিতে সাম্মানিক স্নাতক হওয়ার পর ডব্লিউবিসিএস পাশ করে চাকরিতে যোগ দেন। গত বছর নামখানা ব্লকের দায়িত্ব নিয়ে আসেন তিনি। শান্তনুর কথায়, ‘সরকারি সাহায্য নিয়ে সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারছি, এটাই বড় কথা।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy