Advertisement
E-Paper

সকালে বিশ হাজার নিয়ে রাতে শীতলকে শোধ করতে হত ৫০

কিডনি বিক্রি চক্রে জড়িত সন্দেহে ধৃত বিকাশ ঘোষ ওরফে শীতলের গলায় তিনগাছা সোনার চেন ঝুলত, যার ওজন নয় নয় করে অন্তত তিনশো গ্রাম বলে জানাচ্ছেন গ্রামের মানুষ।

বিকাশ ঘোষ ওরফে শীতল।

বিকাশ ঘোষ ওরফে শীতল। ছবি: সংগৃহীত।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৬ এপ্রিল ২০২৫ ০৮:২২
Share
Save

গলায় সোনার চেন না হাতি-বাঁধা রশি!

কিডনি বিক্রি চক্রে জড়িত সন্দেহে ধৃত বিকাশ ঘোষ ওরফে শীতলের গলায় তিনগাছা সোনার চেন ঝুলত, যার ওজন নয় নয় করে অন্তত তিনশো গ্রাম বলে জানাচ্ছেন গ্রামের মানুষ। মোটা চেনটি প্রায় দড়ির আকারের বলে জানালেন অনেকে। উত্তর ২৪ পরগনার অশোকনগরের হরিপুর ঘোষপাড়ায় মার্বল বসানো পেল্লায় দোতলা বাড়ি। লোককে ঋণের জালে জড়িয়ে ফেলে দিন দিন তার ‘শ্রীবৃদ্ধি’ ঘটেছিল বলে জানতে পেরেছেন তদন্তকারীরা। সেই সঙ্গে কিডনি বিক্রির কারবারের মোটা কমিশনও ছিল। পুলিশ জানতে পেরেছে, সুদের কোনও নির্দিষ্ট হিসেব থাকত না শীতলের। সকালে বিশ হাজার টাকা ধার নিলে রাতে ‘সুদখোর শীতল’কে (এই নামেই সে পরিচিত এলাকায়) ফেরাতে হত ৫০ হাজার!

দিন কয়েক আগে উত্তর অশোকনগর থানার কিডনি পাচার চক্রের পাঁচ জনকে গ্রেফতার করে, তাদের মধ্যে আছে শীতল। আপাতত সে পুলিশি হেফাজতে। তদন্তে নেমে শীতলের কারবার সম্পর্কে নানা তথ্য এসেছে পুলিশের হাতে। তদন্তকারীদের একটি সূত্র জানাচ্ছে, সুদের কারবার চালানোর জন্য শীতলের নিজস্ব ‘নেটওয়ার্ক’ ছিল। গরিব মানুষের অসহায়তার সুযোগ নিয়ে চড়া সুদে ঋণ দিত সে। এক বার ঋণের জালে জড়িয়ে পড়লে শীতলের লোক নানা ভাবে হুমকি দিত। তাতেও কাজ না হলে বলা হত, কিডনি বিক্রি করে টাকা শোধ করতে। কলকাতার কিছু বেসরকারি হাসপাতালের সঙ্গে শীতলের ‘বোঝাপড়া’ ছিল বলে জানতে পেরেছেন তদন্তকারীরা। ঋণের জালে জড়িয়ে পড়া লোকজনের কিডনি সে ১৫-১৬ লক্ষ টাকায় বিক্রি করত। ৫-৬ লক্ষ টাকা হাতে ধরিয়ে মানুষটিকে চুপ করানোর কৌশলও তার অজানা ছিল না।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, কোভিড-পর্ব থেকে ফুলেফেঁপে উঠতে শুরু করে শীতল। তাদের পারিবারিক দুধের ব্যবসা এখনও আছে। একবার দুধ দোয়াতে গিয়ে গরুর লাথি খেয়ে এক চোখ নষ্ট হয় শীতলের। লকডাউনের সময় থেকে বিকাশ সুদের কারবারে নামে। অশোকনগর-কল্যাণগড়ের পুরপ্রধান প্রবোধ সরকার বলেন, ‘‘শীতলকে আমরা সুদখোর বলেই জানতাম। কিন্তু সে গ্রেফতার হওয়ার আগে পর্যন্ত কেউ আমার কাছে ওর বিরুদ্ধে কিডনি পাচার নিয়ে অভিযোগ করেননি।’’

জানা গিয়েছে, শীতলের থেকে কেউ ১০ হাজার টাকা সুদে নিলে বছরে ৩৬ হাজার টাকা শোধ করতে হত। অশোকনগরের বাসিন্দা, হাবড়া ২ পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ গুপি মজুমদার বলেন, ‘‘এমনও জানতে পেরেছি, সকালে ২০ হাজার কেউ শীতলের কাছ থেকে নিলে রাতের মধ্যে তাকে ৫০ হাজার টাকা ফেরত দিতে হত!’’ গুপির মতে, ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিতে হলে সম্পত্তি, জমি, সোনা এ সব বন্ধক রাখতে হয়। অনেক নথিপত্র লাগে। সকলের তা থাকে না। তা ছাড়া, হঠাৎ করে কারও টাকার প্রয়োজন হলে দ্রুত ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ পাওয়া সম্ভব হয় না। সেই সুযোগটাই নিত শীতল।

কী ভাবে সে কিডনি পাচারে জড়িয়ে পড়ল, তা খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Kidney racket Interset rate

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}