পুনর্মিলন: বসিরহাটে মা-মেয়ে। ছবি: নির্মল বসু
পুলিশের উদ্যোগে পাঁচ বছর পরে বাড়ি ফিরলেন মহিলা। তাঁর সঙ্গে বুধবার দুপুরে বসিরহাটের এসডিপিও অফিসে দেখা হয় মেয়ের। মা-মেয়ের চোখের জলে ভাসেন।
পুলিশ জানায়, আসানসোলের বাসিন্দা কিঙ্কর বাদ্যকর ও মিনা বাদ্যকরের দুই মেয়ের মধ্যে বড় চন্দনা। কয়েক বছর আগে চন্দনার বিয়ে হয়। কিছু দিন পরে চন্দনার স্বামী কাজল মণ্ডল ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। স্বামীর মৃত্যুতে অসুস্থ হয়ে পড়েন চন্দনা। বাজারে বেরিয়ে নিখোঁজ হন।
গত পাঁচ বছর ধরে অনেক চেষ্টা করেও মেয়ের খোঁজ পাননি মিনা। এক সময়ে মেয়েকে ফিরে পাবেন বলে আশাও ছাড়েন।
এ দিকে, চন্দনা ঘুরতে ঘুরতে পৌঁছে গিয়েছিলেন বসিরহাটের হিঙ্গলগঞ্জের কানাইকাটি গ্রামে। আগের কথা কিছুই মনে ছিল না তাঁর। স্থানীয় এক জনের বাড়িতে পরিচারিকার কাজে লেগে যান।
কিন্তু সেখানে তাঁর সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা হত। মারধরও চলত। চন্দনা অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁকে কলকাতায় নিয়ে গিয়ে বাড়ির লোকজন ছেড়ে দেয়।
কলকাতা থেকে ঘুরতে ঘুরতে ফের হিঙ্গলগঞ্জে চলে আসে চন্দনা। এ বার দুলদুলির গ্রামের এক চা বিক্রেতা তাঁকে বাড়িতে আশ্রয় দেন। ওই ব্যক্তির চেষ্টায় স্থানীয় ২ নম্বর সাহেবখালি গ্রামের এক যুবক উদয় মণ্ডলের সঙ্গে মাস তিনেক আগে বিয়ে হয় চন্দনার।
স্বামী চেন্নাইয়ে কাজ করেন। স্ত্রীকে নিয়ে সেখানে যাচ্ছিলেন তিনি। পথে একটি স্টেশনে নেমে পড়ে চন্দনা ফের হারিয়ে যান। উদয় বলেন, ‘‘বাথরুমে গিয়েছিলাম। ফিরে এসে দেখি, স্ত্রী নেই। অনেক খোঁজ করে না পেয়ে বাড়ি ফিরে আসি।’’
দিন পাঁচেক আগে বসিরহাটের ভ্যাবলা স্টেশনে চন্দনাকে অসুস্থ অবস্থায় ঘোরাঘুরি করতে দেখে এক জনের সন্দেহ হয়। তিনি বসিরহাটের এসডিপিও অফিসে নিয়ে আসেন ওই তরুণীকে। চিকিৎসার জন্য বসিরহাট জেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাঁকে। একটু সুস্থ হলে মেয়েটির কাছ থেকে তাঁর স্বামীর পরিচয় জেনে তাঁকে ডেকে পাঠানো হয়। খোঁজখবর করে আসানসোলে চন্দনার মায়ের খোঁজও মেলে।
এসডিপিও অভিজিৎ সিংহ মহাপাত্র বলেন, ‘‘এক জন ল’ক্লার্ক অসুস্থ ওই মহিলাকে আমার কাছে এনেছিলেন। আমি তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করি। একটু সুস্থ হলে ওঁর কাছ থেকে বাড়ির ঠিকানা সংগ্রহ করে স্বামী এবং মায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। আইনি প্রক্রিয়া শেষে বাড়ি পাঠানোর ব্যবস্থা করা হবে। হারিয়ে যাওয়া মেয়েকে তার মায়ের হাতে তুলে দিতে পেরে আমাদের ভাল লাগছে।’’
চন্দনা বলেন, ‘‘আমার এমনই কপাল, মাঝে মধ্যেই কেমন অসুস্থ হয়ে পড়ে হারিয়ে যাই। সে সময়ে কিছুই মনে থাকে না। প্রথম পক্ষের স্বামীর মৃত্যুর পরে মাকে হারিয়ে ফেলি। দ্বিতীয়বার বিয়ে করলেও স্বামীকে হারিয়ে ফেলেছিলাম। পুলিশ কাকুদের জন্য ফের সংসারে ফিরে যাচ্ছি।’’ মেয়েকে ফিরে পেয়ে আপ্লুত মিনা। মেয়েকে জড়িয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘‘পুলিশের জন্য মেয়েকে পেলাম। জামাই পেলাম। জীবন আমার ভরে গেল।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy