Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪

হাসপাতালের শয্যা থেকে পড়ে রোগী-মৃত্যুর নালিশ

বৃহস্পতিবার সকালে ঘটনাটি ঘটেছে বনগাঁ মহকুমা সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে। মৃতের পরিবারের তরফে হাসপাতাল সুপার শঙ্করপ্রসাদ মাহাতো এবং বনগাঁ থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।

শোকার্ত: হাসপাতালে মুনমুনের (ইনসেটে) স্বামী। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক

শোকার্ত: হাসপাতালে মুনমুনের (ইনসেটে) স্বামী। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক

নিজস্ব সংবাদদাতা
বনগাঁ শেষ আপডেট: ২৬ এপ্রিল ২০১৯ ০০:৩৭
Share: Save:

হাসপাতালের শয্যা থেকে পড়ে গিয়ে চিকিৎসাধীন এক মহিলার মৃত্যুর অভিযোগ উঠল। ওই ঘটনায় মৃতের পরিবারের লোকজন, হাসপাতালে কর্তব্যরত নার্স আয়াদের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ তুলেছেন।

বৃহস্পতিবার সকালে ঘটনাটি ঘটেছে বনগাঁ মহকুমা সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে। মৃতের পরিবারের তরফে হাসপাতাল সুপার শঙ্করপ্রসাদ মাহাতো এবং বনগাঁ থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। পুলিশ ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। সুপার বলেন, ‘‘অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত কমিটি তৈরি করা হয়েছে। কেউ দোষী প্রমাণিত হলে কড়া পদক্ষেপ করা হবে।’’ হাসপাতাল সূত্রে জানানো হয়েছে, মহিলার দেহের ময়নাতদন্তের পরেই মৃত্যুর প্রকৃত কারণ নির্দিষ্ট করে বলা সম্ভব হবে।

পুলিশ ও হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, গোপালনগর থানার চালকি এলাকার বাসিন্দা মুনমুন মণ্ডলকে (৪৫) মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৮টা নাগাদ শ্বাসকষ্ট ও বুকে ব্যথা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করেন আত্মীয়েরা। বুধবার তিনি সুস্থই ছিলেন। মুনমুনের দাদা অরুণ মল্লিক বলেন, ‘‘বুধবার রাতে বোনের জন্য বাড়ি থেকে খাবার নিয়ে গিয়েছিলাম। বোন খেয়েওছিল। চিকিৎসক জানিয়েছিলেন, বৃহস্পতিবার সকালে ছুটি দিয়ে দেবেন।’’ পরিবারের অভিযোগ, বৃহস্পতিবার সকাল ৭টা নাগাদ হাসপাতাল থেকে ফোন করে বলা হয়, রোগীর অবস্থা খারাপ। তাঁরা যেন দ্রুত হাসপাতালে চলে আসেন। মৃতের এক আত্মীয় রাকেশ বলেন, ‘‘ফোন পেয়ে আমরা হাসপাতালে আসি। নিরাপত্তা কর্মীরা আমাদের প্রথমে ওয়ার্ডের মধ্যে ঢুকতে দেননি। দুর্ব্যবহার করেন। পরে ওয়ার্ডে গিয়ে দেখি, কাকিমা মারা গিয়েছেন। নার্স আমাদের জানান, হৃদযন্ত্রের সমস্যার জন্য মারা গিয়েছেন। আমরা হাসপাতালে ভর্তি রোগী ও অন্যান্যদের কাছ থেকে জানতে পেরেছি, শয্যা থেকে পড়ে গিয়েই কাকিমার মৃত্যু হয়েছে।’’

মৃতের পরিবারের তরফে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ করার দাবি করা হয়েছে। তাঁদের প্রশ্ন, হাসপাতালে টাকা দিয়ে আয়া রাখা হয়েছিল। কেন তাঁরা রোগীর খেয়াল রাখবেন না?

এ দিকে, ঘটনার কথা জানাজানি হতেই হাসপাতালে আসা রোগীর আত্মীয়দের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। আয়াদের বিরুদ্ধে তাঁরা ক্ষোভ উগরে দিচ্ছেন। রোগী ও তাঁদের আত্মীয়দের সঙ্গে আয়াদের দুর্ব্যবহারের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। অভিযোগ, রোগীর দেখাশোনার জন্য আয়ারা টাকা নিলেও রোগীর প্রতি তাঁরা নজর রাখেন না। একজন আয়া এক সঙ্গে তিনজন রোগীর দায়িত্ব নেন। ফলে ঠিক মতো দেখাশোনা করেন না। রাতে রোগীর উপরে নজর না রেখে নিজেরাই ঘুমিয়ে পড়েন। রোগীর আত্মীয়দের কাছ থেকে বেশি টাকা নেওয়ার অভিযোগ মাঝে মধ্যেই তোলেন সাধারণ মানুষ।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, সরকারি ভাবে সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে কোনও আয়া থাকার কথা নয়। তা হলে এখানে তাঁরা কী ভাবে কাজ করছেন?

হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, আয়ারা রোগীর বাড়ির লোক হিসাবে থাকেন। বাসিন্দাদের দাবি, ‘‘রোগীর সঙ্গে বাড়ির লোকজনকে আয়ারা থাকতে দেন না। কেউ থাকলে তার সঙ্গে আয়ারা এমন ব্যবহার করেন, তিনি পালিয়ে আসতে বাধ্য হন।’’ মানুষের অভিজ্ঞতা, আয়াদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে তাঁদের সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কিছুদিন পরে ফের রাজনৈতিক নেতাদের ধরে তাঁরা কাজ ফিরে পান। অভিযোগ, রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ায় থাকার ফলে আয়াদের কেউ কিছু করতে পারে না।

ঝুমা বিশ্বাস নামে এক মহিলা বলেন, ‘‘আয়াদের গাফিলতিতে আর কত মানুষ যে মারা যাবেন!’’

অন্য বিষয়গুলি:

DEath Woman Hospital Bed
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE