—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
সুন্দরবনের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রতি বছর হাজার হাজার পরিযায়ী শ্রমিক ভিন্ রাজ্যে কাজে যান। কিন্তু সঠিক সেই সংখ্যাটা ঠিক কত, কোন কোন রাজ্যের কোথায় কোথায় তাঁরা আছেন— সে সম্পর্কে কার্যত কোনও অন্ধকারে প্রশাসন। দুই ২৪ পরগনার বাসিন্দা, পরিযায়ী শ্রমিকদের পরিবারের অনেকেই মনে করছেন, কোনও দুর্ঘটনা না ঘটলে সরকার থেকে বিশেষ কোনও সাহায্যও পান না। স্বাস্থ্যসাথী কার্ড অনেকে পেলেও ভিন্ রাজ্যের সর্বত্র তা ব্যবহারও করা যায় না।
গত বছর ওড়িশার বালেশ্বরের কাছে করমণ্ডল এক্সপ্রেস দুর্ঘটনায় সুন্দরবন সহ এ রাজ্যের বহু পরিযায়ী শ্রমিকের মৃত্যুর পরে কিছুটা নড়েচড়ে বসেছিল রাজ্য সরকার। দুর্ঘটনার পরে দুয়ারে সরকার ক্যাম্পে পরিযায়ী শ্রমিকদের নাম নথিভুক্তিকরণ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। এই শ্রমিকদের জন্য বিশেষ স্বাস্থ্যবিমার ব্যবস্থাও করে রাজ্য। রাজ্য সরকারের বিশেষ অ্যাপে পরিযায়ী শ্রমিকদের নাম নথিভুক্ত করা হলেও সেখানে যথেষ্ট তথ্য নেই বলে অভিযোগ উঠেছে।
ক্যানিং মহকুমার ক্যানিং ১ ব্লকের ১,৯২১ জন, ক্যানিং ২ ব্লকের ৩,৫৪১, বাসন্তী ব্লকের ১৩,০৬০ ও গোসাবা ব্লকের ১৬,৮২১ জন পরিযায়ী শ্রমিকের নাম অন্তর্ভুক্ত রয়েছে প্রশাসনের কাছে। জানুয়ারি মাসের শেষ পর্যন্ত এই তথ্য রয়েছে সরকারি পোর্টালে। কিন্তু বাস্তবে এর থেকেও অনেক বেশি মানুষ ভিন্ রাজ্যে কাজে গিয়েছেন বলে স্থানীয় সূত্রে অনেকেরই দাবি।
ক্যানিং মহকুমা শ্রম আধিকারিক তন্ময় মণ্ডল বলেন, ‘‘এই হিসেব ২৭ জানুয়ারি পর্যন্ত। এরপরেও বেশ কিছু নাম নথিভুক্ত হয়েছে। তবে যত মানুষ ভিন্ রাজ্যে কাজ করতে যান, তাঁরা সকলে এই তালিকায় নাম তোলেননি এখনও। ফলে সেই হিসেব নেই আমাদের কাছে।’’ মহকুমা শ্রম দফতর সূত্রের খবর, এই পোর্টালে শ্রমিকের নাম, ঠিকানা, বয়স ও পরিবারের উল্লেখ থাকলেও তিনি কোথায়, কী ধরনের কাজ করতে যাচ্ছেন— সে সবের বিস্তারিত বিবরণ নেই। ফলে কোথাও কোনও দুর্ঘটনা ঘটলে যতক্ষণ না পরিবারের সদস্যেরা খোঁজ নিচ্ছেন, ততক্ষণ প্রায় অন্ধকারে থাকে প্রশাসন।
অন্য দিকে, পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য বিশেষ স্বাস্থ্যবিমার ব্যবস্থা করার কথা বলা হলেও সেই বিমার সুবিধা এখনও কেউই পাননি বলে দাবি পরিযায়ী শ্রমিকদের অনেকের। গোসাবার বাসিন্দা নারায়ণ মৃধা, বাসন্তীর বাসিন্দা মণি সর্দারেরা বলেন, ‘‘পরিবারের স্বাস্থ্যসাথী কার্ড রয়েছে। কিন্তু এই কার্ডে কেরল, তামিলনাড়ু— কোথাও চিকিৎসা হয় না। ওখানে কিছু হলে নিজেদেরই খরচ জোগাড় করতে হয়।’’ হাসনাবাদ ব্লকের মাখালগাছা পঞ্চায়েতের বাসিন্দা কাদের গাজি পুণেতে শ্রমিকের কাজ করেন। হিঙ্গলগঞ্জ ব্লকের দুর্গাপুরের বাসিন্দা সুজয় মণ্ডল কেরলে শ্রমিকের কাজ করেন। তাঁদের দাবি, পরিযায়ী শ্রমিক হিসাবে নাম নথিভুক্ত করেছেন। পরিবারের স্বাস্থ্যসাথী কার্ড আছে। তবে তা দিয়ে রাজ্যের বাইরে চিকিৎসা করানো যায় না। রাজ্যের বাইরে থাকার সময়ে অসুস্থ হলে নিজেকেই খরচ বহন করতে হয়।
উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাট মহকুমার হিঙ্গলগঞ্জ, হাসনাবাদ ও সন্দেশখালি এলাকা থেকে বহু পরিযায়ী শ্রমিক রাজ্যের বাইরে শ্রমিকের কাজে গিয়েছেন। বসিরহাট মহকুমা শ্রম দফতর সূত্রের খবর, দুয়ারে সরকারের মাধ্যমে ও রাজ্য সরকারের কর্মিসাথী অ্যাপের মাধ্যমে এই মহকুমা জুড়ে প্রায় ৮১ হাজার পরিযায়ী শ্রমিক নাম নথিভুক্ত করেছেন। তবে বাস্তব সংখ্যাটা আরো অনেকে বেশি বলে স্থানীয় সূত্রের খবর।
হাসনাবাদ থানার খোলসেখালি গ্রামের বাসিন্দা বিশ্বজিৎ মণ্ডল বলেন, ‘‘প্রায় দশ বছর ধরে কেরলের ত্রিশূরে রেস্তোরাঁ কর্মী হিসেবে কাজ করছি। যখন দুয়ারে সরকারে পরিযায়ী শ্রমিকের নাম নথিভুক্ত করার কাজ চলছিল, তখন তথ্য জমা দেওয়া সম্ভব হয়নি। অ্যাপের মাধ্যমে নথিভুক্ত করার বিষয়টাও জানা নেই।’’
বসিরহাটের মহকুমাশাসক আশিস কুমার বলেন, ‘‘পরিযায়ী শ্রমিকের বিষয়ে আমার কাছে তথ্য নেই। এটা শ্রম দফতর বলতে পারবে।’’ উত্তর ২৪ পরগনা জেলা শ্রম দফতরের এক কর্তা জানান, তাঁদের কাছ থেকে তথ্য স্বাস্থ্য দফতর চেয়েছে। পরিযায়ী শ্রমিকদের তথ্য তাঁদের দিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে সেই তথ্য ঠিক কী, তা তিনি জানাননি। উত্তর ২৪ পরগনার জেলাশাসক শরদকুমার দ্বিবেদীকে ফোন, এসএমএস করা হলেও এ নিয়ে উত্তর মেলেনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy