বনগাঁয় রাস্তার ‘দখল নিচ্ছে’ টোটো। —নিজস্ব চিত্র।
শহরের রাস্তায় যে দিকে চোখ যাবে, শুধু টোটো আর টোটো!
এমনিতেই শহরের রাস্তা সংকীর্ণ। তার মধ্যে নিয়ন্ত্রণহীন টোটোর দাপাদাপিতে যানজটে নাজেহাল শহরবাসী। সোমবার টোটোর ধাক্কায় দু’জনের প্রাণ যাওয়ার পরে টোটো নিয়ন্ত্রণের দাবি জোরাল হয়েছে বনগাঁয়। শহরবাসীর ক্ষোভ, পথে বেরিয়ে টোটোর দৌরাত্ম্যে চলাফেরা দায় হয়ে উঠেছে।
বস্তুত, টোটো চালকদের বিরুদ্ধে মানুষের অভিযোগের শেষ নেই। চালকেরা রাস্তায় যখন তখন টোটো ঘুরিয়ে দেন বা টোটো থামিয়ে দেন। ফলে মোটরবাইক, সাইকেল ভ্যান বা ছোট গাড়ির সঙ্গে নিয়মিত টোটোর ধাক্কা লাগছে। মানুষ জখম হচ্ছেন। টোটো চালকদের বিরুদ্ধে যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়ার অভিযোগও রয়েছে। পুরপ্রধান গোপাল শেঠের বক্তব্য, ‘‘শহরে টোটো নিয়ন্ত্রণ করার জন্য প্রশাসন এবং পরিবহণ দফতরের কাছে চিঠি দেওয়া হয়েছে।’’
তবে সমস্যায় টোটো চালকেরাও। রোজ শহরের রাস্তায় কয়েক হাজার টোটো যাতায়াত করছে। টোটোর সংখ্যা ঝড়ের গতিতে বেড়ে চলায় পুরনো টোটো চালকদের আর্থিক পরিস্থিতি খারাপ হয়েছে। এক টোটো চালকের কথায়, ‘‘আগে টোটো চালিয়ে দিনে ৬০০-৭০০ টাকা আয় করতাম। এখন ৩০০-৪০০ টাকা আয় করতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে।’’ অন্যের টোটো ভাড়া নিয়ে চালান এমন এক চালকের কথায়, ‘‘আগে দৈনিক যা আয় করতাম তাতে মালিককে টাকা দিয়েও ৪০০-৫০০ টাকা রোজগার হত। এখন পরিস্থিতি খুবই খারাপ।’’ আর এক চালকের আক্ষেপ, ‘‘টোটোর সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে শহরের মানুষের থেকে টোটোর সংখ্যা হয় তো বেড়ে যাবে।’’
পরিস্থিতি নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনীতির তরজাও। বনগাঁ শহরের বাসিন্দা, বিজেপির বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি দেবদাস মণ্ডলের অভিযোগ, ‘‘শহরে তৃণমূলের তিনটি টোটো সংগঠন আছে। ওই সংগঠনের কর্মকর্তারা মানুষের জীবনের নিরাপত্তার কথা না ভেবে নিজেদের স্বার্থে রেষারেষি করে টাকার বিনিময়ে নিয়মিত টোটো রাস্তায় নামাচ্ছেন। প্রশাসনও চোখ বন্ধ করে রয়েছে।’’ সিপিএমের বনগাঁ শহর এরিয়া কমিটির সম্পাদক সুমিত করের কথায়, ‘‘বনগাঁ শহরে তৃণমূলের দু’টি সংগঠন বিপুল অর্থের বিনিময়ে টোটো দিচ্ছে। যাঁদের টাকা আছে, তাঁরা বেশ কিছু টোটো কিনে ভাড়ায় চালাচ্ছেন। প্রকৃত যাঁরা টোটো চালিয়ে সংসার সামলান, সে সব টোটো রেখে বাকি টোটো প্রশাসনের বাজেয়াপ্ত করা উচিত।’’
তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসি-র বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি নারায়ণ ঘোষের দাবি, তাঁদের সংগঠন থেকে যখন টোটো দেওয়া হয়, তখন নিয়ম মেনেই দেওয়া হয়। তাঁর কথায়, ‘‘এর বাইরে কে বা কারা টোটো রাস্তায় নামাচ্ছে তা জানা নেই। শুধু শহরে নয়, গ্রামেও টোটোর সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে।’’
টোটো সংগঠনগুলির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, তারা কেউই অতিরিক্ত টোটো রাস্তায় নামায় না। তা হলে টোটোর সংখ্যা কী ভাবে বেড়ে যাচ্ছে? পরিবহণ দফতরের তরফে বনগাঁ মহকুমার এআরটিও রথীন মজুমদার বলেন, ‘‘গত দু'সপ্তাহ ধরে বনগাঁ শহরে টোটো চিহ্নিত করতে সমীক্ষা চলছে। দেখা যাচ্ছে, অনেক টোটো বেআইনি ভাবে রেজিস্ট্রেশন ছাড়া চলছে। বিষয়টি নিয়ে পদক্ষেপ করা হচ্ছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy