পারমাদন গ্রামে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক
বিছানায় শুয়ে রয়েছেন বাদল সমাদ্দার। মৃত্যুকে কাছ থেকে দেখেছেন। এখনও চোখেমুখে আতঙ্ক। নদিয়ার রানাঘাটে একটি বেসরকারি হাসপাতালে কয়েকদিন চিকিৎসা করিয়ে বৃহস্পতিবার বাড়িতে ফিরেছেন। অস্ত্রোপচার হয়েছে। বুকে-পিঠে-কোমরে চোট লেগেছিল। বাড়িতে ফিরলেও উঠে দাঁড়ানোর ক্ষমতা নেই।
আপাতত চিন্তা, সংসারটা চলবে কী ভাবে। কোথা থেকে আসবে চিকিৎসার খরচ।
নবতিপর শিবাণী মুহুরির দেহ নবদ্বীপে সৎকার করতে নিয়ে যাওয়ার পথে দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছেন উত্তর ২৪ পরগনার বাগদার পারমাদন এলাকার ১৩ জন। জখম হয়েছেন আরও কয়েকজন। অনেক পরিবারেই একমাত্র রোজগেরে সদস্যের মৃত্যু হয়েছে বা গুরুতর জখম হয়েছেন।
শোক কাটিয়ে ওঠার চেষ্টায় পরিবারগুলির এখন চিন্তা, সংসার খরচ আসবে কোথা থেকে! সরকারি আর্থিক সাহায্য যা মিলছে, তা পাচ্ছেন মৃতের পরিবারগুলি। সরকারি ভাবে জখমেরা কোনও সাহায্য পাচ্ছেন না।
বাদলের পরিবারে আছেন বৃদ্ধ বাবা-মা, স্ত্রী। দুই ছেলেমেয়ে। মেয়ে কলেজে পড়েন। ছেলে তৃতীয় শ্রেণিতে। শুক্রবার ঘরে শুয়ে বাদল বলেন, ‘‘গাড়ির পিছনে চাদরমুড়ি দিয়ে শুয়েছিলাম। আচমকা একটা আওয়াজ। জ্ঞান হারাই। পরে বাঁচাও বাঁচাও চিৎকার শুনে ধড়ফড় করে উঠি। দেখি, আমাদের গাড়ি থেকে বের করা হচ্ছে। গায়ে প্রচণ্ড ব্যথা।’’
কবে সুস্থ হয়ে চাষবাস শুরু করতে পারবেন, জানেন না বাদল। তাঁর আয়েই সংসার চলে। স্ত্রী রিঙ্কু বলেন, ‘‘ইতিমধ্যেই স্বামীর চিকিৎসার পিছনে ১ লক্ষ ৫ হাজার টাকা খরচ হয়ে গিয়েছে। ১০ দিন পরে আবার চেকআপে নিয়ে যেতে হবে। পঞ্চায়েত থেকে ১০ হাজার এবং জেলা পরিষদ সদস্য পরিতোষ সাহা ৫ হাজার টাকা সাহায্য করেছেন। বাকি টাকা ধারদেনা করেছি। আর ক্ষমতা নেই। সরকার যদি পাশে না দাঁড়ায়, জানি না কী ভাবে স্বামীকে সুস্থ করতে পারব।’’
বাদলই শুধু নন, দুর্ঘটনায় জখম টিঙ্কু মণ্ডলের আর্থিক অবস্থাও ভাল নয়। বাড়িতে অসুস্থ মা-বাবা। সুস্থ হতে এখনও বেশ কিছু দিন সময় লাগবে তাঁর। কী ভাবে চিকিৎসার খরচ, সংসার খরচ চলবে, জানেন না টিঙ্কু।
গ্রামের বাসিন্দা টিঙ্কু নন্দী বলেন, ‘‘প্রশাসনের কাছে আবেদন, জখমদেরও যেন আর্থিক সাহায্য করা হয়। অনেকেরই পারিবারিক অবস্থা ভাল নয়।’’
শুক্রবার দুপুরে পারমাদনে গিয়েছিলেন বনগাঁর সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর। সঙ্গে ছিলেন বনগাঁ দক্ষিণ কেন্দ্রের বিধায়ক স্বপন মজুমদার, গাইঘাটার বিধায়ক সুব্রত ঠাকুর, বিজেপির বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার সাধারণ সম্পাদক দেবদাস মণ্ডল-সহ অনেকে। মন্ত্রী দুর্ঘটনায় মৃতদের পরিবারের লোকজনের সঙ্গে দেখা করেন। পাশে থাকার আশ্বাস দেন। অনেকেই তাঁর কাছে কাজের আর্জি জানান। দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন সুকুমার বিশ্বাস। বাড়িতে ছেলে সমীর ও স্ত্রী শ্যামলি। সুকুমার চাষবাস করতেন। তাঁর আয়েই সংসার চলত। সমীর এ বারই বিএ পাস করেছেন। মন্ত্রীর কাছে কাঁদতে কাঁদতে শ্যামলি ছেলের জন্য কাজের অনুরোধ জানান। বলেন, ‘‘ছেলেকে বাঁচলে আমরাও বাঁচব। একটা কাজের ব্যবস্থা করে দিন।’’
শান্তনু তাঁকে বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী ২ লক্ষ টাকা অনুমোদন করেছেন। সেটা অ্যাকাউন্টে ঢুকে যাবে। আমি দেখে চলে গেলাম, এমন নয়। সব সময়ে পাশে থাকব।’’ শান্তনুর কথায়, ‘‘দুর্ঘটনায় আমি মর্মাহত। প্রধানমন্ত্রী মৃতদের জন্য ২ লক্ষ টাকা এবং জখমদের জন্য ৫০ হাজার টাকা অনুমোদন করেছেন। শীঘ্রই তাঁরা তা পেয়ে যাবেন। অনেকে কাজের আবেদন করেছেন। আমরা এই পরিবারগুলির পাশে রয়েছি। সব রকম ভাবে সহযোগিতা করব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy