আহারে-আনন্দ: বসিরহাটে। নিজস্ব চিত্র
ছানা মেখে চিনি বা নলেন গুড় দিয়ে হালকা পাক। দানা দানা ভাব থাকবে, অথচ জিভে তার মোলায়েম স্পর্শ। আ-হা-হা!
ময়রার হাতে যত কিছু সৃষ্টি রয়েছে, তার মধ্যে মিষ্টি রসিকদের পাত আলো করে রেখেছে কাঁচাগোল্লা। আর এই কাঁচাগোল্লার স্বাদ নিতে দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ বহুবার ঘুরে ঘুরে আসেন বসিরহাটে। শীত পড়তেই শুরু হয় নলেন গুড় দিয়ে কাঁচাগোল্লা।
এক মিষ্টি দোকানের মালিকের দাবি, মহানায়ক উত্তমকুমার, মিঠুন চক্রবর্তীও বসিরহাটের কাঁচাগোল্লার ভক্ত ছিলেন। এই মিষ্টি পাত থেকে বাদ দেননি অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, সত্য বন্দ্যোপাধ্যায়, সন্তু মুখোপাধ্যায়, সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়েরা। ইন্দ্রানী হালদার, দীপঙ্কর দে, প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, চিরঞ্জিত, দেব— কে না তারিফ করেছেন বসিরহাটের কাঁচাগোল্লার। রসগোল্লার মতো এখন বসিরহাটের কাঁটাগোল্লারও জিআই স্বীকৃতি চান এখানকার ব্যবসারীরা।
দীনবন্ধু বিশ্বাস নামে এক মিষ্টি বিক্রেতা বসিরহাট থেকে একশো টিন (একটি টিনে ১৫ কিলো করে থাকে) সন্দেশ বিক্রি করতে যেতেন কলকাতার দোকানে। এলাকার প্রবীণ মিষ্টি বিক্রেতারা জানান, আজ থেকে প্রায় ষাট বছর আগে বাংলাদেশের সাতক্ষিরার এক কারিগর এসেছিলেন বসিরহাটের অমূল্য ঘোষের মিষ্টির দোকানে। তাঁর হাতেই প্রথম কাঁচাগোল্লার স্বাদ পায় বসিরহাট।
অভিনেতা সত্য বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভক্ত হলেন মিষ্টি বিক্রেতা নিমাই দত্ত। সত্যবাবু আবার নিমাইয়ের হাতে তৈরি কাঁচাগোল্লার ভক্ত ছিলেন। সত্যবাবুর বাড়িতে নিয়মিত কাঁচাগোল্লা পাঠানোর রেওয়াজ ছিল বলে জানা যায়। আর তা নিজেই দিয়ে আসতেন পুরাতন বাজারের মিষ্টি বিক্রেতা নিমাইবাবু। তাঁর কথায়, ‘‘চল্লিশ বছর আগে ১২ টাকা কেজি দরে বিক্রি হত কাঁচাগোল্লা। যা আজ ২৪০ টাকায় বিক্রি হয়। রোজ এক বাক্স করে কাঁচাগোল্লা দিতে হত সত্যবাবুকে।’’ বসিরহাটে যে সব অভিনেতা-অভিনেত্রী শ্যুটিং করতে আসতেন, সকলেরই পাতে পড়ত কাঁচাগোল্লা। নেতা-নেত্রীরা আবার ভোট প্রচারে এসে কাঁচাগোল্লা চেখে যান।
সন্দেশখালিতে ‘অমানুষ’ ছবির শ্যুটিংয়ে এসেছিলেন উত্তমকুমার। শোনা যায়, বসিরহাটের কাঁচাগোল্লা না হলে নাকি তাঁর প্রাতরাশ জমত না। বাদুড়িয়ায় এসে বর্তমান বিধায়ক কাজি আব্দুর রহমান দিলুর কাছে নলেন গুড়ের মাখা সন্দেশের খোঁজ করেছিলেন মিঠুন।
বসিরহাটের বদরতলা মোড়ে মিষ্টি ব্যবসায়ী রঞ্জনবাবুর কথায়, ‘‘কাঁচাগোল্লা তৈরি করে বিক্রি করেই এই দোকান বানিয়েছিলাম।’’ মিষ্টি ব্যবসায়ী হরিপদ দাসের কথায়, ‘‘বিয়ে-বৌভাত, অন্নপ্রাশন-সহ যে কোনও অনুষ্ঠান বাড়িতে বসিরহাটের কাঁচাগোল্লার কদর আজও একই রকম আছে। সে কারণেই এখানকার মিষ্টি ব্যবসায়ীরা চান, রসগোল্লার মতো বসিরহাটের কাঁচাগোল্লার স্বীকৃতি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy