Advertisement
১৭ ডিসেম্বর ২০২৪
Canning

তলিয়ে গিয়েও ফিরে আসার লড়াই মেয়েদের

পাচার হলে তো সমস্যা আকাশছোঁয়া। কিন্তু কচি হাতে হাঁড়ি-হেঁসেল সামলাতেও বিপদে পড়ে এই মেয়েরা। তার উপরে সন্তানধারণে সময়ে শারীরিক-মানসিক সমস্যা তো আছেই।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

প্রসেনজিৎ সাহা
ক্যানিং শেষ আপডেট: ২৫ নভেম্বর ২০২২ ০৮:৩৯
Share: Save:

কন্যাদায়’ থেকে মুক্তি পেতে অনেক ক্ষেত্রেই দুঃস্থ পরিবারের অল্পবয়সি মেয়েকে পাত্রস্থ করার সিদ্ধান্ত নেন বাবা-মা। অনেক সময়ে নানা ধরনের টোপ দিয়েও নাবালিকাদের বিয়ে করে ভিন্ রাজ্যে পাচার করে দেয় কিছু যুবক। ক্যানিং, গোসাবা, বাসন্তী-সহ দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার বহু ব্লকেই অন্যতম সমস্যা এই নাবালিকা বিয়ে।

পাচার হলে তো সমস্যা আকাশছোঁয়া। কিন্তু কচি হাতে হাঁড়ি-হেঁসেল সামলাতেও বিপদে পড়ে এই মেয়েরা। তার উপরে সন্তানধারণে সময়ে শারীরিক-মানসিক সমস্যা তো আছেই।

বিপরীত চিত্রও অবশ্য আছে। অনেক মেয়ে বিয়ের পিঁড়ি থেকে উঠে কিংবা পাচার হওয়ার পরে ফিরে এসে মূলস্রোতে নিজের জায়গা তৈরি করতে পেয়েছে।

বাসন্তীর হাসিনা খাতুনের (নাম পরিবর্তিত) কথাই ধরা যাক। ষোলো বছর বয়সে বিয়ে দিতে চেয়েছিল পরিবার। খবর পেয়ে হাসিনার কয়েকজন বন্ধু সে কথা জানায় একটি সংস্থাকে। তারা প্রশাসনের সাহায্যে বিয়ে বন্ধ করে। এখন হাসিনা অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী। পড়াশোনা শেষ করে বাবা-মায়ের পাশে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখে সে।

সোনারপুরের মৌসুমি দেবনাথ (নাম পরিবর্তিত) মাত্র চোদ্দো বছর বয়সে এক শিক্ষকের ফাঁদে পড়ে বিহারে পাচার হয়ে যায়। সোনারপুর থানার তৎপরতায় দু’মাসের মধ্যেই তাকে উদ্ধার করা হয়। বাড়ি ফেরার পরে বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছিল। খবর পৌঁছয় একটি সংগঠনের কাছে। তাদের তৎপরতায় বন্ধ হয় বিয়ে। ফের স্কুলে ভর্তি হয়ে পড়াশোনা করছে মৌসুমি। এখন পড়ে দশম শ্রেণিতে।

জয়নগরের বাসিন্দা সুহানা মিস্ত্রিকেও (নাম পরিবর্তিত) পনেরো বছর বয়সে বিয়ে দেওয়া হয়েছিল। মুম্বইয়ে পাচার হয়ে যায়। এক সময়ে পালিয়ে আসে মেয়েটি। অভিযোগ দায়ের করে পাচারকারীর বিরুদ্ধে। গ্রেফতার হয় এক যুবক। ফিরে এসে ফের স্কুলে ভর্তি হয়েছে সুহানা। এখন পড়ে একাদশ শ্রেণিতে। নতুন করে পড়াশোনা শুরু করতে অনেক বেগ পেতে হয়েছে বলে জানাল সে। ফের তার বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছিল। বাসন্তীর স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সদস্যেরা পরিবারের কাউন্সেলিং করিয়ে বিয়ে বন্ধ করেন। রেজিনা লস্করেরও (নাম পরিবর্তিত) বিয়েছিল ছোট বয়সে। বাসন্তীর গ্রামের মেয়েটি বিয়ের পরে পাচার হয়ে যায় দিল্লিতে। পরে ফিরে আসে গ্রামে। ফের তার বিয়ের চেষ্টা হলেও রাজি হয়নি রেজিনা। নিজের উদ্যোগে পড়াশোনার পাশাপাশি বাড়িতেই মুদির দোকান খুলেছে। রেজিনাই এখন গোটা পরিবারের ভরসা। পাশাপাশি এলাকায় বাল্যবিবাহ বন্ধ করার বিষয়েও কাজ করছে সে।

নাবালিকা বিয়ে ও নারীসুরক্ষা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছে ক্যানিংয়ের একটি সংস্থা। তার আধিকারিক নিহাররঞ্জন রপ্তান বলেন, “পাচার হওয়ার পরে উদ্ধার করে আনা মেয়েদের যথাযথ কাউন্সেলিং করে সমাজের মূল স্রোতে ফেরানোর কাজ করছি। মানুষকে এ বিষয়ে আরও সচেতন হতে হবে। তবেই সমাজ থেকে এই রোগের মুক্তি ঘটবে।”

ক্যানিংয়ের মহকুমাশাসক প্রতীক সিংহ জানান, যে কোনও উপায়ে নাবালিকা বিয়ে বন্ধ করতে লাগাতার প্রচার চালানো হচ্ছে গ্রামে গ্রামে। পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে স্কুলে গিয়ে বাল্যবিবাহ, নারী পাচারের বিরুদ্ধে সচেতনতামূলক শিবির করা হচ্ছে। আগের তুলনায় এই প্রবণতা কিছুটা কমেছে। তবে পুরোপুরি নির্মূল করাই আমাদের লক্ষ্য।”

অন্য বিষয়গুলি:

Canning Underage marriage
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy