অঞ্জুশ্রী প্রধান (বাঁ দিকে) এবং অর্জুন মাঝি (ডান দিকে)। —নিজস্ব চিত্র।
বাল্যবিবাহ সমাজের কাছে একটি অভিশাপ— এ কথা বার বার প্রচার সত্ত্বেও গ্রামে-গঞ্জে মাঝে মধ্যেই এ ঘটনা শোনা যায়। তারই মধ্যে নিজেরা নাবালক হয়েও সহপাঠীর বিয়ে বন্ধ করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে মৌসুনি দ্বীপের দুই ছাত্রছাত্রী।
‘বীরপুরুষ’ ও ‘বীরাঙ্গনা’ সম্মানে ভূষিত হল নামখানা ব্লকের মৌসুনি দ্বীপ এলাকার বাসিন্দা, মৌসুনি কোঅপারেটিভ হাই স্কুলের দুই পড়ুয়া। চলতি বছরে শিশুদিবসে রাজ্য শিশু অধিকার সুরক্ষা কমিশনের তরফে পুরস্কার পেয়েছে মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী, বছর পনেরোর অঞ্জুশ্রী প্রধান ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী, বছর সতেরোর অর্জুন মাঝি।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মূলত মৌসুনি দ্বীপ এলাকায় নবম শ্রেণি উত্তীর্ণ বহু ছাত্রীর বিয়ে হয়ে যায়। কখনও মেয়েরা পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করে। কখনও বাড়ি থেকেও জোর করে বিয়ে দেওয়া হয়। অভাবের সুযোগ নিয়ে নাবালিকাদের পাচারও করে দেওয়া হয়। আর্থিক ভাবে দুর্বল পরিবারগুলিই এর শিকার।
বাল্যবিবাহ ও নারীপাচার রুখতে স্কুলে গড়ে তোলা হয়েছে কন্যাশ্রী ক্লাব। এই ক্লাবের সঙ্গে গত দু’বছর আগে যুক্ত হয় একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। সংস্থার কর্মীরা স্কুলপড়ুয়াদের নিয়ে নতুন করে একটি কমিটি গঠন করে। কমিটির সদেস্যরা সহপাঠী বা পরিচিতদের মধ্যে কারও কম বয়সে বিয়ে বা পাচারের খবর পেলে জানায় সংস্থার কর্মীদের। এ ছাড়াও, পাড়ায় পাড়ায় স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা গিয়ে শিবির করে বাল্যবিবাহ, শিশুশ্রম ও নারী পাচার-সহ অনান্য বিষয়ে সচেতনতা গড়ে তুলছে।
অর্জুন ও অঞ্জুশ্রী সম্প্রতি দু’টি বাল্যবিবাহ রুখে দিয়েছে। এই সাহসিকতার জন্যই তারা পুরস্কার পেয়েছে। চলতি বছর জানুয়ারি মাসে অঞ্জুশ্রীর এক সহপাঠীর বিয়ের তোড়জোড় শুরু করেন পরিবারের লোকজন। জানতে পেরে পরিবারের লোকজনকে বিয়ে বন্ধ করার জন্য বোঝাতে থাকে অঞ্জুশ্রী। পরিবারটি প্রথমে রাজি হয়নি। এরপরে সংস্থার মাধ্যমে স্থানীয় থানার দ্বারস্থ হয় কিশোরী। পুলিশের হস্তক্ষেপে বন্ধ হয় সেই বিয়ে। অঞ্জুশ্রীর সহপাঠী সেই নাবালিকা এখন দশম শ্রেণিতে পড়াশোনা করছে। অর্জুনের প্রতিবেশী এক নাবালিকা ছাত্রী প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছিল। দুই পরিবারের সহমতে বিয়ের ব্যবস্থা হয়। জানতে পেরে রুখে দাঁড়ায় অর্জুন। বন্ধ হয় সেই বিয়ে। এ বছর মার্চ মাসের ঘটনা ছিল সেটি। মেয়েটি মৌসুনি দ্বীপের একটি স্কুলে সপ্তম শ্রেণিতে পড়াশোনা করছে।
অঞ্জুশ্রী বলে, “আমার এক সহপাঠীকে জোর করে বিয়ে দিতে চেয়েছিলেন তার বাবা-মা। আমি তা আটকে দেওয়ার জন্য পুরস্কার পেয়েছি।” অর্জুন বলে, “পুরস্কার পেয়ে ভাল লাগছে। এই কাজ আগামী দিনেও বেশি করে করতে চাই।” দু’জনের বাড়ির লোকজনও চান, ছেলেমেয়েরা সমাজের কাজে এগিয়ে যাক, তাঁরাও পাশে থাকবেন।
স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্মী রূপালি দাস বলেন, “সুন্দরবনে বাল্যবিবাহ ও নারীপাচার সব থেকে বড় সমস্যা। তা রোধের জন্য প্রতিনিয়ত স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে কাজ করে চলেছি আমরা। ১২ থেকে ১৮ বছরের মেয়েদের আমাদের দলে রাখা হয়।” স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বিনয় শী বলেন, “দুই ছাত্রছাত্রীরর জন্য আমরা গর্বিত। ওরা স্কুলের নাম উজ্জ্বল করেছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy