নারায়ণ গোস্বামী। ফাইল চিত্র।
বিধায়কের ‘অতিসক্রিয়তায়’ কিছুটা ‘বিরক্ত’ হয়েই মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নির্দেশ দেন, অশোকনগরের বিধায়ক তথা উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পরিষদের সভাধিপতি নারায়ণ গোস্বামী যেন ‘নিজের এলাকার’ বাইরে না যান। নেত্রীর ওই নির্দেশের পরে নারায়ণ বলেছিলেন, ‘‘দলনেত্রী আমাকে যে নির্দেশ দিয়েছেন, তা মেনে এক জন অনুগত সৈনিক হিসেবে নিজের এলাকায় কাজ করব। তিনি আমার কাজের অভিমুখ নিদিষ্ট করে দিয়েছেন।’’ তারপর থেকে অশোকনগরের বাইরে তাঁকে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে কার্যত দেখা যাচ্ছিল না। কিন্তু এ বার অশোকনগর এলাকাতেই একটি ঘটনায় ‘দলীয় শৃঙ্খলা’ নিয়ে ‘প্রশ্নের মুখে’ পড়লেন নারায়ণ। তাঁর বিরুদ্ধে ‘শাস্তি’র ইঙ্গিত দিয়েছে তৃণমূল।
এই সূ্ত্রেই চর্চায় ফিরেছে দলের অন্দরে সক্রিয় দুই শিবিরের দ্বন্দ্ব। তৃণমূলের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে নারায়ণ সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘ঘনিষ্ঠ’ বলে পরিচিত। জেলা তৃণমূলের এক নেতার কথায়, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের পরে নারায়ণের আরও সর্তক থাকা উচিত ছিল। ওঁর বোঝা উচিত ছিল, দলের শীর্ষ নেতৃত্ব তাঁর কাজকর্মের উপরে নজর রাখছেন।’’
দলীয় সূত্রের খবর, নারায়ণের বিরুদ্ধে অভিযোগ, একটি অনুষ্ঠান-মঞ্চে ‘শালীনতার মাত্রা’ ছাড়িয়েছেন তিনি। সম্প্রতি একটি ভিডিয়ো-ক্লিপ সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে (তার সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার)। বিষয়টি দলের নেতৃ্ত্বেরও নজরে আসে। ভিডিয়োয় দেখা গিয়েছে, মাইক হাতে গান গাইতে উঠে কিছু ‘আপত্তিকর’ কথা বলছেন নারায়ণ। তাঁকে অনেকের ‘প্রকৃতিস্থ’ও লাগেনি।
সেই ঘটনার জেরেই বুধবার দলের রাজ্য সহ-সভাপতি জয়প্রকাশ মজুমদার বলেন, ‘‘নারায়ণ একটি অনুষ্ঠানের মঞ্চে যে অসৌজন্যমূলক উক্তি এবং আচরণ করেছেন, দল কোনও ভাবে তা অনুমোদন করে না। বিধানসভার শৃঙ্খলারক্ষা কমিটি বিষয়টি দেখবে।’’
এ বিষয়ে নারায়ণ কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তবে তাঁর ঘনিষ্ঠেরা মনে করছেন, গোটা ঘটনাটি বিরোধীদের চক্রান্ত। ১২-১৯ জানুয়ারি অশোকনগরের হরিপুর মাঠে জেলা বইমেলা এবং অশোকনগর উৎসব হয়। ১৯ জানুয়ারি ভিড় নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছিল না বলে নারায়ণ মাইক হাতে দলীয় কর্মীদের উদ্দেশ্যে কিছু কথা বলেন। ভিড় নিয়ন্ত্রণ করতে বলেন। জানা গিয়েছে, এ বার বইমেলায় বই বিক্রি হয়েছে ৬৫ লক্ষ টাকার, যা রীতিমতো রেকর্ড!
‘নারায়ণ-ঘনিষ্ঠ’ বলে পরিচিত এক নেতার কথায়, ‘‘বইমেলা এবং উৎসবের আলোড়ন দেখে বিরোধীরা ওঁর বক্তব্য এডিট করে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে চক্রান্ত করেছে।’’
সে কথা মানছেন না বিরোধীরা। অশোকনগরের প্রাক্তন সিপিএম নেতা সত্যসেবী কর বলেন, ‘‘কোনও সুস্থ মানুষ এমন কথাবার্তা বলতে পারেন বা আচরণ করতে পারেন বলে আমি বিশ্বাস করি না।’’ বিজেপির রাজ্য কমিটির সদস্য তাপস মিত্রের কথায়, ‘‘এটাই তৃণমূলের সংস্কৃতি। নারায়ণ নিজের যোগ্যতার থেকে অনেক বেশি কিছু পেয়ে গিয়েছেন। সে কারণেই বেলেল্লাপনা করছেন।’’
তৃণমূলের অন্দরে ‘নারায়ণ-বিরোধী’ বলে পরিচিত অশোকনগর প্রাক্তন বিধায়ক ধীমান রায় বলেন, ‘‘ভিডিয়োটি দেখেছি। কী আর বলব! অশোকনগরের সংস্কৃতির সঙ্গে এটা মানাসই নয়।’’
তৃণমূলের একটি সূত্র জানাচ্ছে, প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের জেল-যাত্রার পরে উত্তর ২৪ পরগনার জেলায় তৃণমূলের অন্দরে নিজের ‘প্রভাব বিস্তার’ করতে চাইছিলেন নারায়ণ। যা নিয়ে কিছু জনপ্রতিনিধি এবং স্থানীয় নেতৃত্বের সঙ্গে ‘দূরত্ব’ তৈরি হয়। জেলার নানা প্রান্তের স্থানীয় নেতৃত্বকে টপকে সেই সব এলাকার তৃণমূলের একাংশ সরাসরি নারায়ণের সঙ্গে ‘সম্পর্ক’ তৈরি করেছিলেন। এর ফলে কিছু জনপ্রতিনিধি এবং নেতৃত্বের সঙ্গে তাঁর ‘বিরোধ’ হচ্ছিল। জেলার এক বিধায়কের সঙ্গে নারায়ণের ‘সম্পর্ক ভাল নয়’ বলে জানেন দলের অনেকে। সেই বিধায়ক নারায়ণের জন্য নিজের এলাকায় সে ভাবে কাজ করতে পারছিলেন না বলেও শীর্ষ নেতৃত্বকে জানিয়েছিলেন।
এই পরিস্থিতিতে জ্যোতিপ্রিয় সদ্য জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। মমতার ‘ঘনিষ্ঠ’ বলেই দলে পরিচিত তিনি। তৃণমূল সূত্রের খবর, শীঘ্রই ফের সক্রিয় রাজনীতিও শুরু করতে পারেন জ্যোতিপ্রিয়। তার আগে ‘অভিষেক-ঘনিষ্ঠ’ বলে পরিচিত নারায়ণকে ‘বার্তা’ দেওয়া যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলে জেলা তৃণমূল নেতা-কর্মীদের অনেকে মনে করছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy