Advertisement
২৪ জানুয়ারি ২০২৫
Mamata Banerjee

মুখ্যমন্ত্রীর ‘ভর্ৎসনার’ পরেই প্রবেশমূল্যে পিছপা, বিতর্ক

বক্সার জঙ্গলপথ সুভাষচন্দ্র বসুর জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে এ দিন খোলা থাকলেও, প্রথা অনুযায়ী, পর্যটকদের থেকে প্রবেশমূল্য নেওয়া হয়নি। রাতে মেলা নির্দেশিকা অনুযায়ী, সে জঙ্গলের সংরক্ষিত এলাকায় ঢুকতে আপাতত প্রবেশমূল্য লাগবে না।

রায়গঞ্জের কুলিক পক্ষিনিবাসে প্রবেশ-মূল্য বাতিল করল বন দফতর। বৃহস্পতিবার।

রায়গঞ্জের কুলিক পক্ষিনিবাসে প্রবেশ-মূল্য বাতিল করল বন দফতর। বৃহস্পতিবার। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৪ জানুয়ারি ২০২৫ ০৬:৫৫
Share: Save:

জঙ্গলে ঢোকার প্রবেশমূল্য নেওয়া নিয়ে বুধবার আলিপুরদুয়ারের সভা থেকে বন দফতরকে কার্যত ভর্ৎসনা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বক্সার জঙ্গলে ঢোকার প্রবেশমূল্যের বিষয়টি বৈঠকে শুনে বলেছিলেন, ‘‘পর্যটকদের জন্য কোনও প্রবেশমূল্য হবে না।’’ সূত্রের খবর, সে মন্তব্যের ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই রাজ্যের অভয়ারণ্য, জাতীয় উদ্যান-সহ বন দফতরের যে সব জায়গায় পর্যটকেরা যান, সেখানে প্রবেশমূল্য নেওয়ার ব্যাপারে পিছ-পা হল বন দফতর। রাজ্যের প্রধান মুখ্য বনপাল তথা বনরক্ষী বাহিনীর প্রধান দেবল রায় বৃহস্পতিবার বলেন, ‘‘সব জায়গাতেই আপাতত এন্ট্রি ফি (প্রবেশমূল্য) নেওয়া বন্ধ রাখার (সাসপেন্ডেড) সিদ্ধান্ত হয়েছে।’’ সূত্রের খবর, প্রবেশমূল্য নেওয়ায় ‘সাসপেনশন’ কত দিন থাকবে, তা স্পষ্ট নয়। তবে এই ফি থেকে বন দফতরের আয় বনাঞ্চলে নানা কাজে ব্যয় হয়। তা ছাড়া, বিনা ফি-তে ঢোকা যাচ্ছে জেনে পর্যটকের ঢল নামলে, তা পরিবেশ এবং বন্যপ্রাণের পক্ষে ভাল হবে কি না, সে প্রশ্নে বেধেছে বিতর্ক।

বক্সার জঙ্গলপথ সুভাষচন্দ্র বসুর জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে এ দিন খোলা থাকলেও, প্রথা অনুযায়ী, পর্যটকদের থেকে প্রবেশমূল্য নেওয়া হয়নি। রাতে মেলা নির্দেশিকা অনুযায়ী, সে জঙ্গলের সংরক্ষিত এলাকায় ঢুকতে আপাতত প্রবেশমূল্য লাগবে না। গরুমারা জাতীয় উদ্যানে বৃহস্পতিবার সাফারি বন্ধ থাকে। সূত্রের দাবি, আজ, শুক্রবার থেকে সেখানেও প্রবেশমূল্য নেওয়া হবে না। জলদাপাড়ার বনাধিকারিক পারভীন কাসওয়ান বলেন, “নির্দেশ পেয়েছি, পর্যটকদের থেকে প্রবেশমূল্য নেওয়া হবে না।” উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জের কুলিক পক্ষিনিবাসে নোটিসে জানানো হয়, পরবর্তী নির্দেশ না আসা পর্যন্ত প্রবেশমূল্য (মাথাপিছু ১২০ টাকা) নেওয়া হবে না। এ দিন সকাল থেকে উত্তর ২৪ পরগনার বাগদার পারমাদনের বিভূতিভূষণ অভয়ারণ্যে পর্যটকদের মাথাপিছু ১০০ টাকার টিকিট লাগেনি। জেলা বনাধিকারিক অভিজিৎ কর বলেন, ‘‘পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এই সিদ্ধান্ত বহাল থাকবে।’’ বীরভূমে বোলপুরের বল্লভপুর ডিয়ার পার্কে এ দিন দুপুর থেকে ‘এন্ট্রি ফি’ মকুব করা হয়েছে। বাঁকুড়া থেকে ঘুরতে আসা সঙ্গীতা পাল, পূর্ব বর্ধমানের অঙ্কিতা দাস, দুর্গাপুরের অনুরাধা ঘোষরা বলেন, “এই অভয়ারণ্যেকেবল হরিণ রয়েছে। কিন্তু তা দেখতে মাথাপিছু ১০০ টাকা করে দিতে হত। তবে এ দিন কোনও ফি না নেওয়ায় ভাল লাগছে।’’

প্রবেশমূল্য তুলে দেওয়ার নির্দেশ পৌঁছেছে কোচবিহারের রসিক বিলেও। যদিও কর্তৃপক্ষ দাবি করেছেন, রসিক বিল যেহেতু ‘মিনি জ়ু’, তাই সেখানে ওই নির্দেশ বলবৎ হবে না। শিলিগুড়ির বেঙ্গল সাফারি পার্কের তরফেও দাবি করা হয়েছে, চিড়িয়াখানাকে প্রবেশমূল্য তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্তের আওতার বাইরে রাখা হয়েছে। বন দফতরের স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী বিরবাহা হাঁসদা বলেন, ‘‘জঙ্গলমহল জ়ুলজিক্যাল পার্ক ছাড়া, ঝাড়গ্রাম জেলায় দফতরের আর কোথাও প্রবেশমূল্য নেওয়া হয় না। চিড়িয়াখানাটি যে ভাবে চলছে, সে ভাবেই চলবে।’’ সুন্দরবনের সজনেখালি থেকে বিভিন্ন জঙ্গলের নদী-খাঁড়িতে ঢুকতে গেলে পর্যটকদের টিকিট কাটতে হয়। পাশাপাশি, তাঁরা যে জলযানে যান, তারও ভাড়া লাগে। সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্প সূত্রে দাবি করা হয়েছে, এ দিন বিকেল পর্যন্ত টিকিটের মূল্য না নেওয়া সংক্রান্ত কোনওনির্দেশ আসেনি।

বন দফতর সূত্রের দাবি, রাজ্যে ক্ষমতায় এসে তৃণমূল বনাঞ্চলের উন্নয়নে কিছু প্রকল্পে বাজেট-বরাদ্দ বাড়ায়। কিন্তু পরবর্তী কালে তা কার্যকর হয়নি। এ রাজ্যে বন দফতর টাকা পায় ট্রেজ়ারির মাধ্যমে। তা পেতে সময় লাগে। ফলে, প্রবেশমূল্য বাবদ যে আয় হয়, তার অনেকটা বন দফতরের তাৎক্ষণিক প্রয়োজনে ব্যবহারের জন্য, বর্ষার মরসুমে লাগানো চারাগাছের রক্ষণাবেক্ষণ, জঙ্গলের রাস্তা সাফাই, পড়ে থাকা গাছ তোলা, উত্তরবঙ্গের জঙ্গলে সাফারিতে ব্যবহৃত হাতিদের খাওয়াদাওয়া, দেখভালে ব্যবহৃত অস্থায়ী কর্মীদের পারিশ্রমিক, বনবস্তিতে বন সুরক্ষা কমিটির সদস্যদের এলাকা উন্নয়নের মতো নানা খাতে খরচ করা হয়। এ বার সে সবের কী হবে, তা নিয়ে চিন্তা দেখা দিয়েছে।

রাজ্যের বন-কর্তাদের একাংশের বক্তব্য, উত্তরাখণ্ডের করবেট, মধ্যপ্রদেশের বান্ধবগড়, রাজস্থানের রণথম্বোর, অসমের কাজিরাঙা-মানসের জঙ্গলে গাড়ি, গাইড, ক্যামেরা নিয়ে কোনও পর্যটক ‘সাফারি’-তে গেলে, তাঁর যা খরচ হবে, সে অনুপাতে বক্সার জঙ্গলে ঢুকতে মাথাপিছু দেড়শো টাকা এবং গাড়ির জন্য ৪৮০ টাকার ‘এন্ট্রি ফি’ নগণ্য। রাজ্যের এক প্রাক্তন বনকর্তার কথায়, ‘‘প্রবেশমূল্য না থাকায় বনাঞ্চলে পর্যটকদের ভিড় বাড়লে, জঙ্গল এবং বণ্যপ্রাণের ক্ষতির আশঙ্কাও বাড়বে।’’ প্রাক্তন বনমন্ত্রী তথা সিপিএমের কোচবিহার জেলা সম্পাদক অনন্ত রায় বলেন, “বন দফতরের রাজস্ব বাবদ আয় দিয়ে বনের রক্ষণাবেক্ষণে বাড়তি ব্যবস্থা হত। এখন তার কী হবে?”

অন্য বিষয়গুলি:

Forest department West Bengal government Alipurduar
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy