জমা জল পেরিয়েই ত্রাণ শিবিরের পথে। দেগঙ্গায় শনিবার সজল চট্টোপাধ্যায়ের তোলা ছবি।
দুর্যোগ পরিস্থিতি আরও জটিল হল দুই ২৪ পরগনায়।
গ্রামাঞ্চল আগেই ভেসেছিল। শুক্রবার রাত থেকে প্রবল বর্ষণে দুই ২৪ পরগনার শহরাঞ্চলেরও নানা এলাকা জলমগ্ন হল। প্রাণ গেল তিন জনের।
শনিবার সকালে একটি দুর্ঘটনা ঘটে উত্তর ২৪ পরগনার হাবরার মছলন্দপুর-১ পঞ্চায়েতের তিন নম্বর আমতলা এলাকায় সেখানকারর বাসিন্দা, বাণীপুর মহিলা কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্রী অর্পিতা মণ্ডল (১৯) পড়শি বৃদ্ধার বাড়ি থেকে ফেরার সময়ে রাস্তার ধারের একটি জলভর্তি ছোট খাদে পা পিছলে পড়ে যান। ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয়। কয়েকদিনের বৃষ্টিতে এলাকা জলমগ্ন হয়ে রয়েছে। সব জায়গাতেই প্রায় কোমর সমান জল।
অর্পিতার মা ভারতী মণ্ডল জানান, পাশের বাড়ি থেকে মেয়ের ফিরতে দেরি হচ্ছে দেখে তিনি ছোট মেয়ে টুম্পাকে পাঠান। টুম্পাই দিদিকে জলে পড়ে থাকতে দেখে মাকে ডেকে আনে। ভারতীদেবী গিয়ে মেয়েকে উদ্ধার করেন। পরে পুলিশ এসে দেহটি ময়না-তদন্তে জন্য পাঠায়। ভারতীদেবী বলেন, ‘‘বহু কষ্টে দুই মেয়েকে পড়াশোনা করাচ্ছিলাম। বড় মেয়ের স্বপ্ন ছিল পুলিশ হওয়ার। কিন্তু জমা জলে সব ধুয়ে মুছে গেল।’’ পুলিশের অনুমান, জলে ডুবেই মৃত্যু হয়েছে ওই তরুণীর।
অন্যদিকে, রাস্তায় বৃষ্টিতে ছিঁড়ে পড়া বিদ্যুতের তারে তড়িদাহত হয়ে দক্ষিণ ২৪ পরগনায় মৃত্যু হয় দু’জনের। তাঁদের মধ্যে কুলপির অরুণনগর গ্রামের বাসিন্দা শান্তি দাস (৪২) প্রতিবেশীর বাড়ি যাচ্ছিলেন। মৃত অন্যজন ক্যানিং-২ ব্লকের দেউলির বাসিন্দা ইউসুফ শেখ (১৮)।
বৃষ্টির জেরে দুই জেলার প্রায় সর্বত্রই জমা জলের পরিমাণ বেড়েছে। ফলে, বেড়েছে মানুষের দুর্ভোগও। গাইঘাটা ব্লকের মহিষাকাটি, মানিকহিরা, সুটিয়া, রামনগর, বেড়ি, খেঁজুরভিটে-সহ বিস্তীর্ণ এলাকা জলের তলায় চলে গিয়েছে। দুর্গতদের সংখ্যা লাফিয়ে বাড়ছে। এরই মধ্যে ছড়িয়ে পড়ছে জ্বর, সর্দি, কাশি, ডায়েরিয়া। রামনগর রোড, ঠাকুরনগর-সুটিয়া সড়ক, গোবরডাঙা-পাঁচপোতা সড়কের কিছু জায়গায় কোমর সমান জল দাঁড়িয়ে গিয়েছে। যান চলাচল কার্যত বন্ধ।
গাজনা গ্রামের বাসিন্দা কাঞ্চন কীর্তনিয়া অসুস্থ স্বামী সূর্যকান্তবাবুকে ভ্যানে চাপিয়ে গোবরডাঙা-পাঁচপোতা সড়ক ধরে ত্রাণ শিবিরে যাচ্ছিলেন। ছেলে সুব্রত ভ্যান ঠেলছিলেন। এতদিন তাঁরা ঘরেই কোনও রকমে দিন গুজরান করছিলেন। এ দিন আর পারেননি। চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ছিল কাঞ্চনদেবীর। তাঁর কথায়,‘‘অসুস্থ স্বামীকে নিয়ে কোথায় যাব জানি না। ঘরে খাবার নেই। ৫০ টাকা ভ্যান ভাড়া দিয়ে স্বামীকে নিয়ে যাচ্ছি।’’
গাইঘাটার বিডিও পার্থ মণ্ডল জানান, ইতিমধ্যে সরকারি ভাবে ৩২টি ত্রাণ শিবির খোলা হয়েছে। সংখ্যাটা আরও বাড়াতে হবে বলেই মনে হচ্ছে। সুটিয়া এবং রামনগর পঞ্চায়েত এলাকাটি বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে। ইতিমধ্যেই ১৮৫০টি ত্রিপল এবং ১১০ কুইন্টাল চাল বানভাসিদের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে। তবে, ত্রাণ যে সকলের কাছে পৌঁছচ্ছে না বলেই ক্ষোভ রয়েছে দুর্গতদের।
হাবরার মছলন্দপুর, বেতপুল, উলুডাঙা,শক্তিনগর, বিলপাড়ার মতো বহু এলাকার পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। স্থানীয় বাসিন্দা সুভাষ মণ্ডল, প্রশান্ত মণ্ডলরা জানিয়েছেন, পদ্মা খাল এবং যমুনা নদীর জল উল্টে ঢুকে ওই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। ওই নদীর জলে উপচে ঢুকে গোবরডাঙা পুরসভার কিছু এলাকাও প্লাবিত করেছে। পুরপ্রধান সুভাষ দত্ত বলেন,‘‘৩ এবং ৬ নম্বর ওয়ার্ডে যমুনার জল ঢুকেছে।’’ বাগদা ব্লকের আউলডাঙা গ্রাম জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। চল্লিশটি পরিবারকে ত্রাণ শিবিরে নিয়ে আসা হয়েছে।
বসিরহাট শহরের বেশ কিছু ওয়ার্ডেও জল জমেছে। মহকুমাশাসক শেখর সেন জানান, সুন্দরবন লাগোয়া বিশেষ করে হিঙ্গলগঞ্জ এবং সন্দেশখালি-১ ও ২ ব্লকে রায়মঙ্গল নদীর বাঁধের অবস্থা বিপজ্জনক হয়ে পড়েছে। ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলেও মানুষের দুর্দশার ছবিটা একই রকম। এখানেও বহু এলাকা জলমগ্ন।
অতি বর্ষণে ক্যানিং মহকুমার প্রায় সাড়ে ৫ হাজার বাড়ি ভেঙে পড়েছে। মহকুমার বিভিন্ন পঞ্চায়েত এলাকায় প্রায় ৩০ হাজার মানুষ জলমগ্ন হয়ে পড়েছেন। ক্যানিংয়ে বিশেষ কন্ট্রোল-রুম খোলা হয়েছে প্রশাসনের পক্ষ থেকে। ভেঙে না গেলেও গোসাবার রাঙাবেলিয়া, আমলামেথি, কচুখালি, কুমিরমারি এলাকার বেশ কিছু নদীবাঁধ দুর্বল হয়ে পড়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy