Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪
দিদিকে বলুন, বলছে বিরোধীরা
Sougata Roy

ববির পরে সৌগত, পুলিশে ক্ষোভ বাড়ছে শাসক দলেই

আইনশৃঙ্খলার প্রশ্নে আচমকাই পুলিশের উপর চাপ বাড়াতে শুরু করেছে শাসক শিবিরের একাংশ। বিরোধীদের সুরেই সশস্ত্র দুষ্কৃতীদের গতিবিধি নিয়ন্ত্রণে পুলিশি ব্যর্থতার অভিযোগ আসতে শুরু করেছে শাসক দলের জনপ্রতিনিধি ও পদাধিকারীদের কাছ থেকে।

সৌগত রায়।

সৌগত রায়। —ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ নভেম্বর ২০২৪ ০৬:৩৮
Share: Save:

শহরে বেআইনি অস্ত্র আর দুষ্কৃতীদের দৌরাত্ম্য নিয়ে কলকাতা পুলিশকে কাঠগড়ায় তুলেছিলেন মেয়র ফিরহাদ হাকিম। এ বার পুলিশের ভূমিকা নিয়ে সরব হলেন তৃণমূল কংগ্রেসের বর্ষীয়ান সাংসদ সৌগত রায়। রাজ্যে পুলিশ দফতর রয়েছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতেই। শাসক দলের নেতাদের মন্তব্যে মুখ্যমন্ত্রীর প্রতি ‘অনাস্থা’ এবং রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সম্পর্কে তাদের প্রশ্নে ‘মান্যতা’ প্রকাশ পাচ্ছে বলেই বিরোধীদের দাবি।

আইনশৃঙ্খলার প্রশ্নে আচমকাই পুলিশের উপর চাপ বাড়াতে শুরু করেছে শাসক শিবিরের একাংশ। বিরোধীদের সুরেই সশস্ত্র দুষ্কৃতীদের গতিবিধি নিয়ন্ত্রণে পুলিশি ব্যর্থতার অভিযোগ আসতে শুরু করেছে শাসক দলের জনপ্রতিনিধি ও পদাধিকারীদের কাছ থেকে। কলকাতার পুর-প্রতিনিধি সুশান্ত ঘোষের উপরে হামলার পরে পুলিশের ভূমিকায় বিরক্তি প্রকাশ করে মেয়র ফিরহাদ বলেছিলেন, ‘‘যথেষ্ট হয়েছে! এ বার পুলিশ ব্যবস্থা নিক।’’ কেন অস্ত্র ও দুষ্কৃতী আমদানি ঠেকানো যাচ্ছে না, সে প্রশ্নও তুলেছিলেন তিনি। তার ঠিক দু’দিনের মাথায় দমদমের সাংসদ তথা কলকাতার বাসিন্দা সৌগত বলেছেন, ‘‘কী করে বিহার থেকে ৯ মিমি পিস্তল শহরে ঢোকে? পুলিশ কাউকে ধরতে পারে না!’’

জগদ্দলে সাত সকালে প্রাক্তন ওয়ার্ড সভাপতিকে গুলি করে খুন, কলকাতায় ভরসন্ধ্যায় পুর-প্রতিনিধির উপরে সশস্ত্র হামলার চেষ্টায় অস্বস্তিতে পড়েছে শাসক দল। পুরমন্ত্রী তথা মেয়রের তোপের পরে দলীয় কর্মসূচিতে সৌগত বলেছেন, ‘‘পুলিশকে মানুষ মাইনে দেন। আমাদের সীমানাগুলি দেখার লোক নেই, পুলিশ কাউকে ধরতে পারে না? এটা আমাদের ভাবতে হবে।” তাঁর কথায়, ‘‘কলকাতায় ফ্ল্যাট-জমি নিয়ে গুলি চলছে। কাউন্সিলর প্রায় মরে গিয়েছিলেন! সেই ‘কালচার’ আমরা আটাকাতে পারব কি না, সেটাই প্রশ্ন।”

মেয়র ফিরহাদ, সাংসদ সৌগত ঘটনাচক্রে শাসক দলে স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতার ‘আস্থাভাজন’ হিসেবেই পরিচিত। পুলিশের ভূমিকা নিয়ে তাঁদের মন্তব্যে তার ফলে বাড়তি তাৎপর্য খুঁজে পাচ্ছে রাজনৈতিক শিবিরে একাংশ। আবার এই পরিস্থিতিতে তৃণমূলের বিধায়ক হুমায়ুন কবীর এ দিনই দাবি করেছেন, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে উপমুখ্যমন্ত্রী করে পুলিশ দফতরের দায়িত্ব দেওয়া হোক!

মেয়র, সাংসদ, বিধায়কের মুখে পুলিশ সম্পর্কে প্রশ্নকে স্বাভাবিক ভাবেই নিজেদের অভিযোগে ‘সিলমোহর’ হিসেবেই তুলে ধরেছে বিরোধীরা। বিজেপি মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্যের বক্তব্য, “সুশান্ত ঘোষকে যে গুলি করতে চেয়েছিল, সেটা তো রাজনৈতিক কারণে নয়। সুশান্ত ফুটপাতের উপরে কত দোকান দিয়েছেন, ওই ওয়ার্ডে কত সরকারি জমির উপরে বেআইনি হোটেল চলছে, কত মানুষকে জমি বিক্রি করতে বাধ্য করা হয়েছে?” সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর মতে, ‘‘আইনশৃঙ্খলা নিয়ে আমরা যা বলছি, তারই কিছু ধার নিয়ে তৃণমূলের কোনও কোনও নেতা বলছেন। কিন্তু পুলিশমন্ত্রী এবং তাঁর ডিজি ‘পার্ট টাইম’! তা হলে পুলিশমন্ত্রী বদল করা হোক।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘তবে পুলিশ যদি সাত দিন বসে যায়, তৃণমূল নেতারা ময়দান ছেড়ে পালিয়ে যাবেন!’’ কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য অধীর চৌধুরীর মন্তব্য, ‘‘পুলিশ কার হাতে আছে, সৌগত রায় নিশ্চয়ই জানেন। তা হলে তো দিদিকে বলতে হবে! কারা অস্ত্র আনছে, ওঁরা জানেন না?’’

তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ অবশ্য মনে করেন, পুলিশ যথেষ্ট ভাল কাজ করছে। তাঁর বক্তব্য, ‘‘অতীতেও অন্য রাজ্য থেকে দুষ্কৃতী, আগ্নেয়াস্ত্র আসার ঘটনা ঘটেছে। এখন সাংবাদমাধ্যম, সমাজমাধ্যমের জন্য বেশি করে নজরে আসছে। তবে পুলিশের আরও বেশি করে সতর্ক থাকা উচিত। কারণ বোঝাই যাচ্ছে, বাংলার বিরুদ্ধে একটা চক্রান্ত চলছে।”

অন্য বিষয়গুলি:

Sougata Roy TMC FirhadHakim Kolkata Police
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy