প্রতীকী ছবি।
দশম শ্রেণির দেবারতি দাস (নাম পরিবর্তিত) হিঙ্গলগঞ্জের একটি স্কুলের ছাত্রী। স্কুলে আসতে ভালবাসে দেবারতি। ক্লাস করার পাশাপাশি বন্ধুদের সঙ্গে টিফিন ভাগ করে খেতেও ওর খুব উৎসাহ। স্কুলের শিক্ষকেরাও ভালবাসেন হাসিখুশি, নম্র স্বভাবের এই ছাত্রীটিকে। কিন্তু ওর পড়াশোনা ও বৌদ্ধিক বিকাশ ঠিক মতো হচ্ছে কি না, তা নিয়ে চিন্তিত তাঁরা। দেবারতি সেলিব্রাল পালসিতে আক্রান্ত বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন পড়ুয়া। কিন্তু তাকে সঠিক পদ্ধতিতে শিক্ষাপ্রদানের জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষক নেই স্কুলে। ফলে পড়াশোনায় দেবারতি পিছিয়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা শিক্ষকদের।
দেবারতির পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, স্কুলের পাশেই তার বাড়ি। জন্মের পর থেকে মস্তিষ্কের একটা অংশ ঠিক ভাবে কাজ করে না বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা। কথা বলতে সমস্যা হয়, জড়িয়ে যায়। লিখতেও পারে না। হাঁটাচলাতেও কিছু সমস্যা আছে। তবে অনুভব করতে পারে সব কিছুই। প্রকাশ করতে পারে আনন্দ, রাগ, অভিমান। স্কুল ওর খুব প্রিয় জায়গা। দেবারতি স্কুলে আসে নিয়মিত। বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটানো, মিড ডে মিল খাওয়া, শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সঙ্গে দেখা হওয়া— এ সব হয় ঠিকই। তবে এতে দেবারতির পড়াশোনার ক্ষেত্রে কতটা উপকার হয়, শিক্ষকেরা তাকে কতটা শেখাতে পারেন, তা নিয়ে সংশয়ে রয়েছে পরিবার।
স্কুলের প্রধান শিক্ষক জানান, সেরিব্রাল পালসিতে আক্রান্ত বা বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন পড়ুয়াদের জন্য বিশেষ প্রশিক্ষিত শিক্ষক প্রয়োজন হয়। তা এই স্কুলে নেই। প্রধান শিক্ষকের স্বপ্ন, দেবারতিকে তিনি মাধ্যমিক পাস করাবেন। তাঁর কথায়, ‘‘শিক্ষকেরা যখন ক্লাস নেন, তখন অন্য পড়ুয়াদের মতো দেবারতিও পড়া শোনে। তবে ও কতটা বুঝতে পারে, তা নিয়ে আমাদেরও সন্দেহ আছে।’’ শুধু দেবারতি একা নয়, ওই স্কুলে মোট ১১ জন বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন পড়ুয়া রয়েছে। প্রধান শিক্ষক জানান, বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন পড়ুয়াদের জন্য বিশেষ শৌচাগার ও একটি ঘর তৈরি করা হয়েছে। তবে দেবারতির মতো পড়ুয়াদের জন্য প্রশিক্ষিত শিক্ষক পাওয়া গেলে ওরা পড়াশোনায় অনেকটা এগিয়ে যেতে পারত বলে মনে করেন তিনি।
পুরুলিয়ায় বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের নিয়ে কাজ করা একটি সংগঠনের তরফে সাথী বসু বলেন, ‘‘শহরের ইংরেজিমাধ্যম স্কুলগুলিতে ইতিমধ্যেই বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষক রয়েছেন। রাজ্যের সরকারি স্কুলগুলিতেও বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষক নিয়োগ করা প্রয়োজন। না হলে এই পড়ুয়ারা পড়াশোনায় পিছিয়ে পড়বে।’’ তিনি জানান, আপাতদৃষ্টিতে মনে হতে পারে, এই পড়ুয়াদের পড়াশোনায় আগ্রহ নেই। বিষয়টি তা নয়। ওদের পড়ানোর, বোঝানোর পদ্ধতি আলাদা। এই পড়ুয়ারা যদি উপযুক্ত শিক্ষা পায়, তবে তারাও প্রতিষ্ঠিত হতে পারে। বিদেশের স্কুলে এমন ব্যবস্থা থাকায় বিশেষ চাহিদাসম্পন্নদের সফল হওয়ার অনেক উদাহরণ আছে বলে জানালেন তিনি।
উত্তর ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, গোটা জেলা জুড়ে ৮৩৫৬ জন বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন পড়ুয়া রয়েছে। যদিও কোন স্কুলেই বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষক নেই। তবে গোটা জেলা জুড়ে ৫৭টি সার্কেলে ৯২ জন বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষক আছেন। এই শিক্ষকেরা সোম ও বুধবার সার্কেলের রিসোর্স রুমে আসেন। মঙ্গল ও বৃহস্পতিবার গোটা জেলার প্রতিটি সার্কেলের মডেল স্কুলগুলিতে তাঁরা যান। জেলায় মোট ১১৪টি মডেল স্কুল রয়েছে। শুক্রবার তাঁরা ব্লকের স্কুল পরিদর্শকের অফিসে থাকেন। তবে দূরদূরান্ত থেকে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন পড়ুয়াদের নিয়ে অভিভাবকেরা এই বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষকদের কাছে তেমন ভাবে আসতে পারেন না। বিশেষ করে করোনা পরিস্থিতিতে পড়ুয়াদের বিশেষ প্রশিক্ষকদের কাছে নিয়ে আসা অনেক কমে গিয়েছে।
এ বিষয়ে নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘প্রতিটি স্কুলে বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষক থাকলে ভাল হত। এতে বিশেষ চাহিদাসম্পন্নদের স্কুলে পাঠাতে আরও আগ্রহী হতেন অভিভাবকেরা। তবে এখনই শিক্ষা দফতরের তেমন কোনও পরিকল্পনা আছে কি না, আমার জানা নেই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy